পাহাড়ে নির্বাচনে হচ্ছে গুরুং নেই! পালাবদলে গোর্খারা পেতে চলেছেন নতুন নেতা
পাহাড়ে নির্বাচনে হচ্ছে গুরুং নেই! পালাবদলে গোর্খারা পেতে চলেছেন নতুন নেতা
১০ বছর পর জিটিএ নির্বাচন হচ্ছে পাহাড়ে। এবার নির্বাচনে নেই পাহাড়ের এতদিনের মুকুটহীন সম্রাট বিমল গুরুং। তিনি শাসক দল তৃণমূলের জোটসঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলেন। শেষমেশ তিনি নিজেকে জিটিএ নির্বাচন থেকে সরিয়ে নির্দলদের সমর্থনের বার্তা দিয়েছেন বিমল গুরুং।
গুরুংকে সরিয়ে পাহাড়ের মসনদ কে? অজয় না অনীত
জিটিএ নির্বাচন নিয়ে সমস্ত অনিশ্চয়তা কেটে গিয়েছে। নির্দিষ্ট দিনেই পাহাড়ে ভোট হচ্ছে। পাহাড়ে ভোট স্থগিত রাখার দাবিতে অনশনে বসেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং। আর বিজেপির জোটসঙ্গী জিএনএলএফ হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। কিন্তু কারও কোনও পরিকল্পনাই খাটল না। পাহাড়ে শেষপর্যন্ত ভোট হচ্ছেই। এবারের ভোটে গুরুংকে সরিয়ে মসনদ দখলের লড়াইয়ে সামিল অজয় ও অনীত।
রাজ্য বিরোধী আন্দোলনে গুরুং, তাতেই নড়েছিল ভিত
তৃণমূল বাংলার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২-য় গোর্খ্যাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র ভোট হয়েছিল। ক্ষমতার গুরুদায়িত্ব বর্তেছিল বিমল গুরুংয়ের কাঁধে। তবে সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১৭-য়। তারপর থেকে শুধু প্রশাসক বদলে চলেছে জিটিএ। এরই মধ্যে বিমল গুরুংয়ের পায়ের তলার মাটি অনেকটাই সরে গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য বিরোধী যে আন্দোলনে নেমেছিলেন গুরুং, তাতেই তাঁর ভিত নড়ে গিয়েছিল।
গুরুংয়ের জন সমর্থন যে পড়তির দিকে, তা স্পষ্ট আগেই
পাহাড়ে হিংসার পর বিমল গুরুং প্রায় তিন বছর বেপাত্তা ছিলেন। সেই সময় তাঁর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে। ২০২১-এর আগে বিমল গুরুং পাহাড়ে ফিরলেও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় আড়াআড়ি বিভাজন হয়ে গিয়েছিল। তারপর অনীত থাপা বেরিয়ে নতুন দল গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা গড়েন। আর বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দেন। বিমল গুরং ফের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা দায়িত্ব নিলেও তাঁর জন সমর্থন যে পড়তির দিকে তা স্পষ্ট হয়ে যায় সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে।
গোর্খায় আড়াআড়ি বিভাজনে গুরুংয়ের পতন নিশ্চিত ছিল
২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থনের বার্তা দিলেও তাঁর দলের প্রার্থী দাগ কাটতে পারেনি। উল্টে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুই শিবির গুরং-গোষ্ঠী বনাম তামাং-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের ফায়দা তুলে নিয়েছে বিজেপি। বিনয় তামাংয়ের গোষ্ঠী একটি আসন দখল করলেও বিমল গুরুং শিবির শূন্য হয়ে গিয়েছিল। তখনই গুরুংয়ের পতনের রেখা দেখতে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
কামব্যাকর সমস্ত সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল গুরুংয়ের
তারপর দার্জিলিং পুরসভা ভোটে সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাহাড়ে উত্থান হয় হামরো পার্টির। অজয় এডওয়ার্ডসের হামরো পার্টি মাত্র চার মাশেই পাহাড়ে রাজনীতিতে এক মাইলফলক তৈরি করে। দার্জিলিং পুরসভা একক কৃতিত্বে দখল করে নেয় হামরো পার্টি। দ্বিতীয় স্থান পায় অনীত থাপার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ফের বিমল গুরুং নিরাশ করে। তাঁর কামব্যাকর সমস্ত সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যায়।
পাহাড় দখলের লক্ষ্যে পাঞ্জা কষছেন অজয় আর অনীত
এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচনের ডাক দেওয়ার পর বিমল গুরুং ভোট ময়দানে নামতে গররাজি ছিলেন। আসলে তাঁর পায়ের তলার জমি সরে যাওয়াই ছিল মূল কারণ। এই অবস্থায় পাহাড় দখলের লক্ষ্যে পাঞ্জা কষছেন অজয় এডওয়ার্ড আর অনীত থাপা। বিমল গুরুংয়ের পদস্ফলে পাহাড়ে এবার নতুন সূর্যোদয় ঘটতে চলেছে। নতুন নেতার হাতে থাকবে পাহাড়ের চাবিকাঠি, তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিমল গুরুং নিজেকে ভোট থেকে সরিয়ে নিয়ে নির্দলকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছেন। এবার ৪৫টি আসনে মোট ১৮৭ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছে। মূল লড়াই কিন্তু অজয়ের হামরো পার্টির সঙ্গে অনীতের গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার।