মতুয়া ভোট টানতে নাগরিকত্ব আইনকেই হাতিয়ার বিজেপির, কিন্তু ‘ভবি’ ভুলবে কি?
মতুয়া ভোট টানতে নাগরিকত্ব আইনকেই হাতিয়ার বিজেপির, কিন্তু ‘ভবি’ ভুলবে কি?
পাখির চোখ মতুয়া ভোট। মতুয়া মহলের মতুয়াদের দলে টেনে ফের তৃণমূলকে মাত দিতে নাগরিকত্ব আইনকেই হাতিয়ার করছে বিজেপি। এর আগে দু-বার নাগরিকত্ব আইনের প্রতিশ্রুতিতে ভুলে মতুয়ারা বিজেপির দিকে ঢলেছিল। আবারও কি মতুয়ারা সেই একই প্রতিশ্রুতিতে ভুলবে? পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই প্রশ্নটাই উঠে পড়েছে আবার।
শুভেন্দু অধিকারী সিএএ তাস মতুয়া মহলে
শুভেন্দু অধিকারী বর্ষশেষের দিনে মতুয়া সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ফের নাগরিকত্ব আইনের তাস খেলেছেন। মতুয়াদের প্রতি তাঁর আহ্বান, বিজেপির উপর ভরসা রাখুন, নাগরিকত্ব আইন লাগু হবেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বাধা দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন কথা দিয়েছেন, সিএএ লাগু হবেই।
মতুয়া ও নমঃশূদ্র সমাজে সিএএ-বার্তা
বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩-এর প্রথমেই। ২০২৩ সাল পড়তে না পড়তেই শুভেন্দু জানিয়ে দেন, ২০২৪ সালের ভোটের মধ্যেই সিএএ লাগু হবে বাংলায়। আর এই আইন লাগু হলে মতুয়া ও নমঃশূদ্র সমাজকে আর পুরনো দলিলের জন্য হয়রান হতে হবে না। তাঁরা এই আইনের বলেই এ রাজ্যের নাগরিক বলে গণ্য হবেন।
সিএএ আশ্বাসে ভোট-বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা
শুভেন্দুর এই বার্তাকে দিনে চাঁদ দেখানোর সঙ্গে তুলনা করেছে তৃণমূল। শুভেন্দু যে ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচনের লক্ষ্যে মতুয়াদের ভুল বোঝাচ্ছে, তা ফলাও করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মতুয়াদের সিএএ আশ্বাস দিয়েই ভোট-বৈতরণী পার হওয়ার চাল চেলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
পঞ্চায়েত ভোটের ফায়দা লুটতেই বিজেপির পন্থা
তৃণমূলের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের ফায়দা লুটতেই বিজেপির এই পন্থা। যেভাবে তারা ২০১৯ ও ২০২১-এ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোট আদায় করেছিল, এবারও সেই একই খেলা খেলতে শুরু করেছে। ২০২৪-এর আগে সিএএ লাগু হবে বলে পঞ্চায়েত ভোট নিজেদের দিকে টানতে চাইছে।
মতুয়ারা কি আর ভুলবেন সেই একই প্রতিশ্রুতিতে
ঠিক এখানেই প্রশ্ন উঠে পড়েছে, মতুয়ারা কি আর ভুলবেন সেই একই প্রতিশ্রুতিতে? ২০১৯-এর ভোটের আগে যা বলা হয়েছিল, ২০২১-এর আগেও তা বলে ভোট নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু মতুয়াদের জন্য কিছুই করেনি তারা। আবারও একই কথা বলছে। আর তৃণমূল বলছে, নাগরিকদের আবার নাগরিকত্ব কী!
বিজেপি ভুল বোঝাচ্ছে, যুক্তি দেখাল তৃণমূল
তৃণমূলের যুক্তি, আপনারা নাগরিক বলেই তো সমস্ত পরিষেবা পাচ্ছেন, ভোট দিচ্ছেন এতবছর ধরে। মতুয়া মহল থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ছেন, মতুয়ারাই ভোট দিয়ে তাঁদের নির্বাচিত করছেন, আপনাদের ভোটেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাহলে আপনাদের নাগরিকত্ব আইনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে।
বিজেপির মুখে গুজরাত-তাস, খণ্ডন তৃণমূলের
বিজেপি আবার এমন তাসও খেলতে শুরু করেছে যে, গুজরাত নির্বাচনের মুখে ওই রাজ্যের দুটি জেলায় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় ভিনদেশী ছ-টি সম্প্রদায়ের মানুষকে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে গুজরাতের আনন্দ ও মেহসানা জেলায় তিনটি প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ ও পার্সিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। কিন্ত প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের যদি পুরনো আইনের বলই নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, নতুন আইনের কী দরকার?
এবার কি আর ‘ভবি’ ভুলবে ? প্রশ্ন রয়েই যায়!
এখন সামনের বথর লোকসভা ভোট এবং এবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফায়দা তুলতেই বিরোধী দলনেতা বিধায়ক ও জনপ্রতিনিধিদের পাশে বসিয়ে সিএএ-তাস খেললেন। কিন্তু এর ফলে কোনও ফায়দা এবার হবে কি না, তা বলবে ভবিষ্যৎ। কেননা এবার কি আর 'ভবি' ভুলবে ? সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়!
শুভেন্দু ফের 'ডেটলাইন’ দিলেন! মতুয়া সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাংলায় সিএএ-বার্তা