গবেষণার ফাঁকেও অলিম্পিকে সোনা জেতা যায়, টোকিওয় দেখালেন অস্ট্রিয়ার সাইক্লিস্ট আনা
যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এটা চেনা প্রবাদ। এটাকেই বদলে লেখা যেতে পারে, যিনি গবেষণা করেন তিনি অলিম্পিকে সোনাও জেতেন। খেলাধুলো করলে পড়াশোনায় প্রভাব পড়ে বলে যে অভিভাবকরা সন্তানদের মাঠমুখী করা থেকে বিরত রাখেন, তাঁরাও এবার থেকে ভেবে দেখতে পারেন। অন্তত অস্ট্রিয়ার আনা কিসেনহফারের অলিম্পিক সোনা জয়ের পর!
রোড রেসে সোনা
টোকিও অলিম্পিকে রোড সাইক্লিংয়ে মহিলাদের রোড রেসের ব্যক্তিগত বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ার আনা কিসেনহফার। তিনিই সোনা জিতে নেন গত ২৫ জুলাই। এই বিভাগে রুপো জেতে নেদারল্যান্ডস, ব্রোঞ্জ যায় ইতালিতে। তবে এরপরই সকলের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে আনার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানার পর। গবেষণা করতে করতেই সোনা জিতে আনা অবাক করে দিয়েছেন সকলকে। অলিম্পিকে এই প্রথম সাইক্লিংয়ে কোনও পদক জিতল অস্ট্রিয়া, তাও আবার সোনা। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালের পর এই প্রথম কোনও অলিম্পিক সোনা গেল অস্ট্রিয়ায়।
মেধাবী আনা
বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রী আনা কিসেনহফার। গণিতই তাঁর পছন্দের বিষয়। গণিত নিয়ে স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করেছেন ভিয়েনার টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। ২০১১-১২-তে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৬ সালে কাতালোনিয়া পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি সম্পূর্ণ করেন, তাঁর বিষয় ছিল ইন্টিগ্রেবল সিস্টেমস অন বি-সিম্পটমিক ম্যানিফোল্ডস। বর্তমানে তিনি গবেষণা করছেন লুসার্নের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এবং ম্যাথামেটিক্যাল ফিজিক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত ননলিনিয়ার পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশনস নিয়ে গবেষণারত দলের একজন সদস্য।
খেলার দুনিয়ায়
উচ্চশিক্ষিতা আনা অবশ্য সমানতালে চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর পছন্দের খেলাধুলো। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল অবধি তিনি ট্রায়াথলন, ডুয়াথলনে অংশ নিতেন। কিন্তু চোট পাওয়ায় ছোটাছুটি কমিয়ে দিয়ে বাধ্য হন। দৌড় থেকে ধীরে ধীরে সরে এরপরই তিনি মনোনিবেশন করেন সাইক্লিংয়ে। সেটা ২০১৪ সাল। আর তার সাত বছরের মধ্যেই ৩০ বছরের আনা জিতে নিলেন অলিম্পিক সোনা। ২০১৫ সালে যোগ দিয়েছিলেন কাতালান টিমে। দুই বছরের মধ্যেই পেশাদার সাইক্লিংয়ে টিম পেয়ে যান। ২০১৭ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন লোটো-সৌদল লেডিজ টিমে। টাইম ট্রায়ালিস্ট আনা ২০১৯ থেকে ২০২১ অবধি টানা ন্যাশনাল টাইম ট্রায়াল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, ২০১৯ সালে জিতেছেন ন্যাশনাল রোড রেস চ্যাম্পিয়নশিপ। এবার তিনি জিতে নিলেন বহুকাহঙ্ক্ষিত অলিম্পিক সোনা।
কুর্নিশ বিশ্বের
উচ্চশিক্ষিতা, মেধাবী আনার অলিম্পিকে সাফল্য দেখে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব। বায়োকনের প্রধান কিরণ মজুমদার শ আনাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইটে লিখেছেন, কী অসাধারণ মহিলা! সুপার-ওম্যান! অলিম্পিকে সোনা নিশ্চিত করার পর রাস্তায় শুয়ে থাকা একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে আনা কিসেনহফার তাঁর পাশে কয়েক বছর ধরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সকলকেই কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেছেন। জীবনের বিভিন্ন লক্ষ্য স্থির করে তা পূরণের মধ্যে অলিম্পিকে পদক জয়ও যে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য ছিল সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রিয়ার এই তারকা রোড সাইক্লিস্ট। অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার পর কয়েকটা দিন প্রবল চাপের মধ্যে কাটিয়েছেন। অবশেষে এখন তৃপ্তি আর পরবর্তী লক্ষ্য ঠিক করার পালা। আনার এই সাফল্য নারীশক্তির জয়গানের আরও একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্বের ক্রীড়াজগতে।
(ছবি- আনা কিসেনহফারের ইনস্টাগ্রাম)