ধর্ম-বর্ণ-দেশ-জাতি মিলেমিশে একাকার, টোকিও অলিম্পিকে হাই জাম্পের সোনা ভাগ করে নিলেন দুই বন্ধু
খেলা, ক্রীড়াবিদরা যে কোনও দেশ-কাল-ধর্ম-বর্ণ-জাতির গণ্ডিতে আবদ্ধ নন তার এক অসামান্য নজির দেখা গেল টোকিও অলিম্পিকের আসরেই। টাইব্রেকিং জাম্প-অফ এড়িয়ে পুরুষদের হাই জাম্পে সোনা ভাগ করে নিলেন কাতারের মুতাজ এসা বারশিম ও ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি। ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে তাঁরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নিয়েই মুগ্ধতা সোশ্যাল মিডিয়ায়।
|
বন্ধুত্বের নজির
পুরুষদের হাই জাম্পের ফাইনালে দুজনেই ২.৩৭ মিটার উচ্চতা লাফ দিতে পার করতে সক্ষম হলেও ২.৩৯ মিটার উচ্চতা পার করতে পারেননি। কাতারের বারশিম যখন ইতালীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টাইব্রেকিং জাম্প-অফের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই তাঁর কাছে আসেন তামবেরি। দুজন নিজেদের মধ্যে কিছু শলাপরামর্শের পর নিজেদের জড়িয়ে ধরেন এবং জানিয়ে দেন, তাঁরা দুজনেই জাম্প-অফে অংশ নেবেন না। ফলে দুজনেই ভাগ করে নেবেন সোনা। এরপরই তামবেরি গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। আর ধীরে ধীরে স্টেডিয়ামের একটি জায়গায় গিয়ে বন্ধুর স্বার্থত্যাগের আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বারশিম। ২০১২ ও ২০১৬-র অলিম্পিকে তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এবার একেবারে সোনা।
দশকেরও বেশি সম্পর্ক
এরপরই দুই বন্ধুর সম্পর্ক নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কাতার মুসলিম প্রধান দেশ, ইতালিতে খ্রিস্টান বেশি। তামবেরি শ্বেতাঙ্গ, বারশিম কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু তাতে তাঁদের এক দশকেরও বেশি বন্ধুত্ব অটুট থেকেছে। ২০১০ সালে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে দুজনের আলাপ। সেই প্রতিযোগিতায় বারশিম খেতাব জিতলেও যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিলেন তামবেরি। আবার তামবেরির চোট সারিয়ে রিও অলিম্পিকে নামার সময়ও বারশিম তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। সেই বন্ধুত্বই আজ স্পোর্টসম্যানশিপের আরও এক নজির তৈরি করল যা মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত করেছে বিশ্বকে।
কেনিয়ার আধিপত্য খর্ব
এদিকে, ৪১ বছর পর এবারই প্রথম কোনও কেনিয়ান অ্যাথলিট অলিম্পিকে ৩০০০ মিটার স্টিপলচেজে চ্যাম্পিয়ন সোনা জিততে পারলেন না। মস্কো অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন পোল্যান্ডের ব্রনিস্ত মালিনোভস্কি। এবার সোনা জিতে নিলেন মরক্কোর সৌফিয়ানে এল বাক্কালি। রুপো জিতেছে ইথিওপিয়া, কেনিয়া ব্রোঞ্জ। ১৯৬৮ সালের অলিম্পিক থেকে এই স্টিপলচেজে একাধিপত্য কেনিয়ার। শুধু ১৯৭৬ ও ১৯৮০ সালের অলিম্পিক কেনিয়া বয়কট করেছিল। তাছাড়া প্রতিটি অলিম্পিকেই এই সোনা পেয়েছেন কেনিয়ার অ্যাথলিটরাই। ফলে বাক্কালি এক নয়া অধ্যায় রচনা করে বলেছেন, কেনিয়াকেই খালি এই ইভেন্টে সোনা জিততে দেখে এসেছি। মনে মনে ঠিক করেছিলাম কেনিয়ার সামনেই সোনা জিততে যে মরক্কোও পারে তা দেখিয়ে দেব। কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রতিযোগীদের বিপক্ষে কাজটা সহজ ছিল না, কিন্তু পেরে ভালো লাগছে। নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিলান, নিজেকে বুঝিয়েছিলাম আমিও পারব।
ইতিহাসে পুয়ের্তো রিকো
অ্যাথলেটিক্সে পুয়ের্তো রিকোকে প্রথম অলিম্পিক সোনা এনে দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন জেসমিন কামাচো-কুইন। ২৪ বছরের জেসমিন মহিলাদের ১০০ মিটার হার্ডলসে ১২.৩৭ সেকেন্ড সময় করে জিতে নেন সোনা, যা আবার অলিম্পিক রেকর্ড। রুপো পেয়েছেন বিশ্বরেকর্ডের মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রা হ্যারিসন এবং ব্রোঞ্জ জিতেছেন জামাইকার মেগান ট্যাপার।