বিদেশে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রস্তাব! জাতীয় টিটি কোচ সৌম্যদীপ রায়ের বিরুদ্ধে বোমা মনিকা বাত্রার
বোমা ফাটালেন ভারতের অলিম্পিয়ান টেবিল টেনিস তারকা মনিকা বাত্রা। টোকিও অলিম্পিক চলাকালীন তিনি জাতীয় কোচ সৌম্যদীপ রায়ের সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ভারতীয় প্যাডলারদের ব্যর্থতার পর এই কারণেই মনিকা বাত্রাকে শোকজ করেছিল ভারতের টেবিল টেনিস ফেডারেশন। তাঁর উত্তর দিতে গিয়েই মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন মনিকা। বলেছেন, অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতেও তিনি প্রস্তুত।
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব!
টেবিল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার শোকজের জবাবে মনিকা বলেছেন, মার্চে টোকিও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে তাঁর ঘরে এসেছিলেন সৌম্যদীপ রায়। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। টিটিএফআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অলিম্পিকে সেই সৌম্যদীপের কাছেই পরামর্শ নিতে গেলে ওই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের ঘটনা তাঁর মাথায় আসত, যা প্রভাব ফেলত খেলায়। সেই কারণেই সৌম্যদীপকে কোচ হিসেবে বোর্ডের পাশে দেখতে চাননি বিশ্বের ৫৬ নম্বর তারকা মনিকা। রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার পাওয়া মনিকা টিটিএফআই সভাপতি অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন, গত মার্চে দোহায় অলিম্পিকের কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্ট চলছিল। সে সময় সৌম্যদীপ তাঁর এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন মনিকাকে। তাঁর ছাত্রী যাতে অলিম্পিকের টিকিট পান সে কারণেই এই প্রস্তাব। যা মনিকের কাছেও ম্যাচ ফিক্সিংয়েরই সামিল। মনিকা আরও জানিয়েছেন, ওই ঘটনার প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। যথাসময়ে যথাযোগ্য জায়গায় তা তিনি পেশ করার জন্যও প্রস্তুত। সৌম্যদীপ এই প্রস্তাব দিতে এসে তাঁর হোটেল রুমে যে ২০ মিনিট ছিলেন সে কথাও জানিয়েছেন মনিকা।
চাপে সৌম্যদীপ
সৌম্যদীপের ছাত্রী সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ও টোকিও অলিম্পিকে গিয়েছিলেন। সৌম্যদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেও ঠিক কোন ছাত্রীর জন্য তিনি ম্যাচ ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। সৌম্যদীপ রায়কে টোকিওয় ভারতীয় কোচ হিসেবে পাঠানো তাই মনিকা যে কোনওভাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই মেনে নিতে পারেননি, তা শোকজের চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন। অলিম্পিকের পর মনিকা বড় শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে যে জল্পনা চলছিল তাঁর বিস্ফোরক চিঠি গোটা ঘটনাকেই অন্য মোড় দিল। মনিকার অভিযোগ সত্যি হলে তা প্রাক্তন অলিম্পিয়ান সৌম্যদীপের পক্ষেও কলঙ্কজনক অধ্যায়ই হবে। বিশেষ করে বাংলার টেবিল টেনিসেও তিনি এক বিশিষ্ট নাম এবং সম্প্রতি তাঁর ও তাঁর অলিম্পিয়ান স্ত্রী পৌলমী ঘটকের টিটি আকাদেমির উদ্বোধনও করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের টেবিল টেনিস আকাদেমিও দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে সৌম্যদীপের উপর।
মনিকার বোমা
কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী তথা অর্জুন সৌম্যদীপ রায় এখনও মনিকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। তাতে রহস্য বাড়ছে। মনিকার অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে ফেডারেশনও। সৌম্যদীপের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। জাতীয় শিবিরে কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে সৌম্যদীপকে মনিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেই উত্তর এলে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে ফেডারেশন। মনিকা বিস্ফোরক চিঠিতে লিখেছেন, জাতীয় স্বার্থের কথা না ভেবে নিজের ছাত্রীকে অবৈধভাবে সুযোগ পাইয়ে দিতে চেয়েছেন সৌম্যদীপ রায়। সৌম্যদীপ তাঁর ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ম্যাচ ছাড়ার প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সেই ছাত্রী সৌম্যদীপের নামাঙ্কিত আকাদেমিতে তাঁরই অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। এখানেই ইঙ্গিত মিলছে, তাহলে কি সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের দিকেই মনিকার ইঙ্গিত? কেন না, সুতীর্থাও এক সময় দেশের এক নম্বর প্যাডলার ছিলেন এবং সুতীর্থা ছাড়া সৌম্যদীপের আকাদেমিতে এমন কেউ নেই যিনি এবার অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের জায়গায় ছিলেন। যদিও মনিকা নিজেই বলেছেন তিনি সৌম্যদীপের প্রস্তাব মানেননি এবং এটাও ঠিক এবার সুতীর্থা প্রথম অলিম্পিকে নেমেছিলেন। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিকের তিন বছর আগে মনিকার বিস্ফোরক অভিযোগ শোরগোল ফেলেছে ভারতের টিটি মহলে। মনিকা বলেছেন, সৌম্যদীপের মতো অমন কোচের সান্নিধ্যে থাকলে দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে পারতাম না। তাই আমি তাঁকে এড়িয়ে যাই।
জেনেও চুপ ফেডারেশন!
শুধু মনিকার সিঙ্গলস ম্যাচের সময়ই কোচের চেয়ারে দেখা যায়নি সৌম্যদীপকে। মনিকার ব্যক্তিগত কোচ গ্যালারিতে থাকতেন। তবে অন্য ম্যাচের সময় সৌম্যদীপকে দেখা গিয়েছে কোচের চেয়ারে।উল্লেখ্য, এবারের অলিম্পিকে মহিলাদের সিঙ্গলসে মনিকা তৃতীয় রাউন্ড ও সুতীর্থা দ্বিতীয় রাউন্ড অবধি পৌঁছান। মনিকা চিঠিতে গোটা ঘটনার কথা লিখে দাবি করেছেন, এই কারণে আমি মানতে পারছি না জাতীয় কোচের পরামর্শ না নিয়ে আমি টিটিএফআই কিংবা আমার দেশকে কোনওভাবেই অসম্মান করিনি। আমি একা খেলেই দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছি। মনিকা কোনও শৃঙ্খলাভঙ্গ করেননি বলে দাবি করে বলেন, আমার সিঙ্গলস ম্যাচের সময় কোচের ফাঁকা চেয়ার দেশ বা ফেডারেশনের প্রতি কোনও অসম্মানের বার্তা দেয়নি। বরং তিনি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ফলেই এটা হয়েছে। সৌম্যদীপ ফেডারেশনকে মিথ্যা কথা বোঝানোর পরও তাঁর বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মনিকা। তাঁর দাবি তিনি ১৪ অগাস্ট সৌম্যদীপের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের কথা ফেডারেশনকে জানিয়েছিলেন ই-মেল করে। অথচ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সিঙ্গলস ম্যাচ জাতীয় কোচ ছাড়া খেলে তিনি সঠিক কাজই করেছেন বলে দাবি মনিকার।