বিজেপির পাখির চোখ বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচন, তিনটি ‘স্লোগান’-এ ভরসা দিলেন শুভেন্দু
একুশের নির্বাচনে বিজেপি সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও হারাতে পারেনি তৃণমূলকে। উল্টে তৃণমূলের কাছে গোহারা হেরেছে। হেরেছে বাংলার পুরসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলিতে।
একুশের নির্বাচনে বিজেপি সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও হারাতে পারেনি তৃণমূলকে। উল্টে তৃণমূলের কাছে গোহারা হেরেছে। হেরেছে বাংলার পুরসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলিতে। এখন বাংলায় কামব্যাক করতে তারা পাখির চোখ করেছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিততে ৩টি স্লোগান তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দু তমলুকে এক দলীয় কর্মসূচি থেকে বলেন, পঞ্চায়েতে জিততে হবে। তার জন্য স্লোগান ঠিক করে দিলেন। একইসঙ্গে তিনি খাঁড়া করে দিলেন ইস্যুও। কোন ইস্যুতে বিজেপি লড়বে আসন্ন পঞ্চায়েতে তাও ধরিয়ে দিলেন শুভেন্দু। সেইমতো জেলায় জেলায় বিজেপি নেতাদের ঘূঁটি সাজাতে বললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে স্লোগান তুলুন, ঘুষ মুক্ত যুক্ত চাকরি চাই৷ কাটমানি মুক্ত নাগরিক পরিষেবা চাই। আর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাই। এই তিন মন্ত্রেই তিনি পঞ্চায়েত জিততে চাইছেন। সেইমতো বার্তা দিচ্ছেন রাজনৈতিক সভামঞ্চ থেকে। তাঁর এই নয়া স্লোগানে স্পষ্ট, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসন্ন পঞ্চায়েতে দুর্নীতিই প্রধান ইস্যু হতে চলেছে।
শুভেন্দু এদিন শুধু বিজেপিকে পঞ্চায়েত জেতার মন্ত্র দিয়ে ক্ষান্ত থাকেননি, তিনি একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নাম না করেই তিনি বলেন, পিসিকে দিয়ে পায়খানার দেওয়াল মুছাচ্ছি। এটা রিয়েল অপোজিশন, সেটিং অপজিশন নয়।আমাদের স্টিকার পিসি কোথাও কোথাও নিজের স্টিকার লাগিয়েছেন। আবার সব জায়গায় নিজের হাতেই স্টিকার তুলছেন, পায়খানার দেওয়ালের স্টিকারও তুলিয়েছি নিজের হাত দিয়ে।
শুভেন্দুর কথায়, পিসির নতুন স্টিকার আবাস প্লাস। এই নামে কোন যোজনা নেই। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের পিএমএওয়াইজি। পায়খানার দেওয়ালে লিখেছিলেন নির্মল বাংলা, সেটাকে মুছে গান্ধীজির চশমার ছবি দিয়ে এখন তাঁকে লিখতে হচ্ছে স্বচ্ছ ভারত অভিযান। কেন্দ্রীয় একাধিক প্রকল্পকে নিজের নামে করা নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে এভাবেই তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দু বলেন, বই পড়াটা ভালো করে দরকার। রাজ্যটাকে কী শিক্ষা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার গুণধর ভাইপো। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন মাতঙ্গিনী হাজরা পিছাবনীতে রক্ত খেতে খেতে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরদিকে তার গুণধর ভাইপোর বর্ণপরিচয়ের শ্রষ্ঠা মাতঙ্গিনী হাজরা। কোন রাজ্যে আমরা বাস করছি, এরা মাতঙ্গিনী হাজরার শহিদস্থল জানে না। আর চুপ করে থাকবেন না, আপনারা এবার একটু জাগবেন তো ভালো করে!
তিনি বলেন, প্রতিটা অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি রয়েছে। আধার লিঙ্ক করতে গিয়ে ৯ লক্ষ ভুয়ো জবকার্ড বেরিয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্টের টাকা, ভারত সরকারের টাকা, কন্ট্রাক্টরদেরকে দিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করাচ্ছে এই সরকার। এই সরকারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ডিসেম্বর এসে গিয়েছে, এদের উৎখাত করতে হবে।
শুভেন্দুর কথায়, নন্দীগ্রামে আমি হারিয়েছি আপনাকে, আপনাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আমিই করব। আপনারা সবাই জোট বাঁধুন। আমাকে চা খেতে ডেকেছিল। একা গেলেই হয়ে যেত সেটিং, নিচুতলার কর্মীরা হতাশ হতেন। তাই সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম অগ্নিমিত্রা পাল, মনোজ টিগ্গাদের। নো চা, অনলি টাটা। নমস্কার প্রতি নমস্কার বাই বাই।
শুভেন্দু বলেন, "২০১৬ সালের পুরো প্যানেলটাই ভুয়ো। কলকাতা গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীরা বেরোবে বাবা, মা, বউ, বাচ্চা-সহ সমগ্র পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। বলবে তোমার নেতা ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আমাকে সাদা খাতা জমা দিতে বলেছিল। আমার অপরাধটা কী বলে দাও মমতা ব্যার্নাজি। লক্ষ লক্ষ মানুষের মিছিল এগোবে কালীঘাটের দিকে।"
শুভেন্দু বলেন, আইএএস চুরি করার কাজ করছে, আর কিছু আইপিএস অত্যাচারের কাজ করছেন। যাঁরা এসব কাজ করছেন, শীতকালীন অধিবেশন থেকে বুঝতে পারবেন কেন্দ্রে একটা সরকার রয়েছে, একজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। তিনি এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার-সহ রাজ্যের বেশকিছু আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের নাম করে হুমকি দেন শুভেন্দু।