কারা হবেন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের মুখ, কেশপুরের মঞ্চে তুলে স্পষ্ট করে দিলেন অভিষেক
আবাস যোজনার দুর্নীতি কাদা মুছতে অভিষেক নিলেন অভিনব পদক্ষেপ। কেশপুরের ভরা জনসভায় তিনি তিন ‘মুখ’কে মঞ্চে তুলে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিলেন।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারা হবেন তৃণমূলের মুখ, কেশপুরের মঞ্চ থেকে শনিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি এদিন আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে যাঁরা দলের গায়ে কাদা ছিটোচ্ছেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কেশপুরের সভা করে যার পর নাই খুশি। কেশপুরে দীর্ঘদিন ধরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হচ্ছিল তৃণমূল। সেই আবহে এদিন কেশপুরের জনসভায় যে ভিড় হয়েছে, তা দেখে অভিষেক বলেন, এটা আমার জীবনের সেরা জনসভা। আর এই সভা থেকেই তিনি স্পষ্ট করে দেন, আবাস যোজনা দুর্নীতির যে কাদা লেগেছে দলের গায়ে, তা তিনি মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আবাস যোজনার দুর্নীতি কাদা মুছতে অভিষেক নিলেন অভিনব পদক্ষেপ। কেশপুরের ভরা জনসভায় তিনি তিন 'মুখ'কে মঞ্চে তুলে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিলেন। আর একইসঙ্গে তিনি বার্তা দিলেন, পঞ্চায়েতে নির্বাচেন তৃণমূলের মুখ কারা হবেন।
শনিবার কেশপুরে প্রকাশ্য জনসভায় তিনি আবাস যোজনা কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তৃণমূল যে সততার সঙ্গে কাজ করেছে তার প্রমাণ দিলেন। মঞ্চে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির ছবি সম্বলিত ফেস্টুন দেখিয়ে তিনি বার্তা দিলেন, এই হচ্ছে তৃণমূল। যেখানে সততটাই আসল। যে দলের পঞ্চায়েত সদস্যা ও ১০ বছরের বুথ সভাপতি নির্লোভ।
এদিন কেশপুরের সভা মঞ্চে অভিষেক ডেকে নেন গ্রাম পঞ্চায়েত সদসযা মঞ্জু দলবেরা ও তাঁর স্বামী বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরাকে। তাঁদেরকে মঞ্চে তুলে তাঁদের বাড়ির ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দূর অস্ত, এঁরা আবাস যোজনার ঘর পর্যন্ত প্র্ত্যাখ্যান করেছেন। অভিজিৎবাবুর মায়ের নামে আবাস যোজনার ঘর বেরিয়েছিল। তা পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূলের বুথ সভাপতি দম্পতি প্রত্যাখ্যান করেন।
এঁরা এতটাই সৎ ও নির্লোভ যে আবাস যোজনার ঘর তারা নিতে অস্বীকার করেন। অথচ ১০ বছর বুথ সভাপতি থাকার পরও এঁদের ঘর দেখুন। এই বলেই তিনি ছবিটা মঞ্চে এসে তুলে ধরতে বলেন। দেখা যায়, খড়়ের ছাউনির মাটির বাড়ি। বৃষ্টি জল চুইয়ে পড়ে আজও। তবু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানোর জন্য তাঁরা আবাস যোজনার ঘরের টাকা নিতে অস্বীকার করেন।
এরপর অভিষক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এইসব সৎ ও নির্লোভ মানুষরাই হলেন তৃণমূলের মুখ। এই বলে তিনি গর্ব অনুভব করেন যে, আমি এই দলটার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এরপর তিনি দলবেরা দম্পতিকে প্রণাম করেন মঞ্চে দাঁড়িয়েই। আর বলেন, অভিজিৎবাবু ও মঞ্জুদেবীর ছেলের পড়াশোনা ও মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব আমি নিলাম। আর ঘোষণা করেন, তাঁর বাড়ি করে দেবে দল।
অভিষেক এদিন সভামঞ্চ থেকে শেখ হোসিমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির। তাঁকে মঞ্চে তুলে অভিষেক বলেন, ইনি তৃণমূল করেন না, কোনও দল করেন না। এঁকে কি দেখে মনে হয় চোর, ডাকাত বা দুর্নীতিগ্রস্ত? এঁর বাড়ি দেখুন। ইনি কিন্তু আবাস যোজনার ঘর নেননি। সামনে মেয়ের বিয়ে বলে আবাস যোজনার ঘরের টাকা না নিয়ে ইতি নির্লোভ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। কেননা আবাস য়োজনার টাকা নিলে তো আগে ঘর করতে হবে। ঘর থেকেও টাকা দিতে হবে। কিন্তু তাঁর কাছে মেয়ের বিয়েটাই আগে। এমন নির্লোভ মানুষকে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের মুখ বলে তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মেয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।