মমতার ‘স্নেহধন্য’ নেতা হাত ধরলেন মুকুলের, বিজেপিতে বাড়ছে সংখ্যালঘুদের আনাগোনা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশন মঞ্চে সেদিন যে কাসেমকে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা গিয়েছিল, সেই কাসেম আর তৃণমূলে নেই। মমতার কূল ছেড়ে কাসেম আলি এখন মুকুলের দলে নাম লিখেছেন।
তখন সবে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের বীজ বোনা চলছে। সিঙ্গুরজুড়ে আন্দোলনের তোড়জোড়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশন মঞ্চে সেদিন যে কাসেমকে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা গিয়েছিল, সেই কাসেম আর তৃণমূলে নেই। মমতার কূল ছেড়ে কাসেম আলি এখন মুকুলের দলে নাম লিখেছেন। মুকুল রায় হাতে ধরে কাসেম এখন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সম্পাদক।
মমতা বলতেন ‘ছোট্ট কাসেম’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। শুধু দিদির অনশন মঞ্চেই নয়, তিনি মারও খেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেই আন্দোলনে সামিল হয়ে। মমতার খুব কাছের হয়ে গিয়েছিলেন অল্পদিনেই। তাঁকে ছোট্ট কাসেম বলে ডাকতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কাসেমই দিদিকে ছেড়ে গেলেন এবার।
মুকুলের হাত শক্ত করলেন কাসেম
মমতার দলের স্কেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন মুকুল রায়। ফলে দলে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল সর্বজনবিদিত। নিজের হাতে তৃণমূলের সংগঠনকে তিনি ধরে রেখেছিলেন। ব্লকের প্রতিটি নেতাকে তিনি নামে নামে চিনতেন। এহেন মুকুল রায় দল ছাড়ের পর এক শ্রেণি যে বিজেপির দিকে ঢলবে, সেটাই স্বাভাবিক। ক্রমেই কাসেমদের মতো অনেক সংখ্যালঘু নেতা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।
সংখ্যালঘু নেতা বাড়ছে মুকুলের আগমনে
মুকুল রায় আসার পর বিজেপিতে সংখ্যালঘু নেতা বাড়ছে রাজ্যে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তা বিজেপির পক্ষে ইতিবাচক। নিচুতলার নেতা-কর্মীরা তো আছেনই, উপরের সারিতেও বাড়ছে সংখ্যালঘু নেতা। তেমনই একজন হলেন কাসেম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন কাসেম। বিজেপিতে গিয়েও সংখ্যালঘু মোর্চায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে গেলেন কাসেম।
ভোট বৈতরণী পার হতে মুকুলেই ভরসা
দিলীপ ঘোষ বা রাহুল সিনহাদের মতো বড় নেতা থাকলেও বিজেপি ভোট বৈতরণী পার হতে মুকুল রায়ের উপরই বেশি ভরসা করছে। তৃণমূলে যেমন মুকুল রায় আড়ালে থেকে সংগঠন সামলেছেন, বিজেপি তেমনই মুকুল রায়কে তাঁদের সংগঠন বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে চাইছেন। এবং ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাঁর কাঁধেই। পঞ্চায়েতেও তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন, এবার লোকসভাতেও অমিক শাহরা বাংলায় দায়িত্ব দিলেন মুকুল রায়কে।
বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য মুকুল
তৃণমূলে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য হিসেবে নিজেকে প্রতিপণ্য করেছিলেন মুকুল রায়। ফলে বিজেপিতে যাওয়ার পর তাঁর উপর ভরসা করা অযৌক্তিক নয়। তারপর মুকুল রায় তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নেতানেত্রীদের হাতের তালুর মতো চেনেন। তিনি মাথায় থাকলে তৃণমূলকে ভাঙার কাজ অনেক সহজ হবে, এটা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝেছে। সেমতোই তৃণমূলে থাকা মুকুল অনুগামীরা একে একে দল ছাড়ছেন, ভিড় করছেন বিজেপিতে।
তৃণমূলে মোহভঙ্গ, গুরুত্ব হারিয়ে বিজেপিতে
বিজেপিতে যোগ দিয়ে কাসেম নিজেই স্বীকার করেছেন, একটা সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মধুর সম্পর্ক ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও নেই। তাঁর এই কথায় যেমন তৃণমূলে গুরুত্ব হারানোর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই তিনি যে তৃণমূল নিয়ে আর উৎসাহিত নন, তাও জানিয়েছেন।
ভরসা হারিয়েছেন মমতা
কাসেম মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন। রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষেরা আর মমতার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁরা চাইছেন পরিবর্তন। কেননা যে আশা জাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই ভরসার জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। সংখ্যালঘুদের কোনও উন্নয়ন হয়নি। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাতেও ফেরেনি আশার আলো।
বিজেপির লক্ষ্য তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক
লোকসভার আগে বিজেপির লক্ষ্য, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ককে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। তাহলেই তৃণমূলেক মোক্ষম আঘাত দেওয়া যাবে। তাই কাসেমদের মতো তৃণমূলে গুরুত্ব হারানো নেতাদের সামনে এনে তৃণমূলের সংখ্যালঘু প্রীতিতে আসলে ভাঁওতা তা বুঝিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি। সেইসঙ্গে বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক নয়, তার প্রমাণ দিতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব।