প্রেমিকের সঙ্গে হোটেলের ঘরে গৃহবধূ অর্চনা, খুনের পর আত্মহত্যাও! দেহ লোপাট
উল্টোডাঙার গৃহবধূ অর্চনা পালংদার হত্যাকাণ্ডে নয়া মোড়। প্রেমিকের সঙ্গে ধর্মতলার হোটেলে উঠেছিল অর্চনা। সেই হোটেল থেকেই উভয়ের দেহই মেলে। হোটেলকর্মীকে জেরা করে ঘটনার ১৮ দিন পর মিসিং লিঙ্কের সূত্র মেলাল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সম্পর্কের টানাপোড়েনেই খুন হতে হয় অর্চনাকে। প্রেমিকাকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয় প্রেমিক বলরাম।

যদিও পুলিশ এখন বলরামের মৃত্যু নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। বলরামেরও দেহ হোটেলের ঘরে ছিল, তা পুলিশকে জেরায় জানিয়েছে হোটেল কর্মী আশিস যাদব। ওইদিন হোটেলের ঘরে দুজনের দেহই মিলেছিল বলে সে জানায়। তারপর হোটেল কর্তৃপক্ষ বদনামের ভয়ে রাতারাতি দুই দেহই পাচার করে দেয়। কিন্তু বলরামের দেহ এখনও মেলেনি। ধৃত আশিস যাদবকে নিয়ে পুলিশ বলরামের দেহের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে।
অর্চনা পালংদার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে বলরামের ফোনের কললিস্ট ঘেঁটে আশিস যাদবের নম্বর পান তদন্তকারীরা। সেই ফোনের সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারে, আশিস ধর্মতলার হোটেলের এক কর্মী। এরপর ঝাড়খণ্ড থেকে ধরা পড়ে হোটেল কর্মী আশিস যাদব। ধৃত আশিসকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পারে, ১৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল সারানোর নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধর্মতলার হোটেলে উঠেছিল অর্চনা। সঙ্গে ছিল প্রেমিক বলরাম।
হোটেলের দুনম্বর ঘরে তারা ওঠে। রাতেই তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তারপর হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যায় সব। ডেকেো সাড়া না মেলায় সন্দেহ হয় হোটেলকর্মীদের। 'মাস্টার কি' নিয়ে দরজা খুলে হোটেলকর্মীরা দেখেন দুজনের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে রুমের ভিতর। তারপর হোটেলের বদনামের ভয়েই তারা দেহ পাচার করে দেয়। এরই মধ্যে অর্চনার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয় চৌবাগা লকগেটে।
পচন ধরা দেহের পরিচয় মেলেনি প্রথমে। পরদিন অর্চনার স্বামী পিন্টু পালংদার দেহ শনাক্ত করেন। সামনে আসে উল্টোডাঙার গৃহবধূর পরিচয়। ক্রমশ প্রকাশ হয় চাঞ্চল্যকর ঘটনাপ্রবাহ। প্রথম থেকেই সন্দেহের তির ছিল অর্চনার প্রেমিক বলরামের দিকে। বলরাম রাঁচির বাসিন্দা। কলকাতায় ফুল ব্যবসা করে। তাঁর সঙ্গে অর্চনার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল।
তারপর অর্চনা নিখোঁজের পর থেকে বলরামও নিখোঁজ। অর্চনার শিশুপুত্রের কাছ থেকে জানা যায় বলরামের কথা। শুরু হয় বলরামকে খোঁজা। তাঁকে খুঁজতে গিয়েই সামনে আসে আশিস যাদবের নাম। হোটেলকর্মী আশিসও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাঁকে জেরা করতেই মিসিং লিংঙ্কের সূত্র মিলে যায়।
১৭ সেপ্টেম্বর অর্চনা ও বলরাম ধর্মতলায় আশিসদের হোটেলেই উঠেছিল। আশিস জানায়, দুজনের মধ্যে বচসা চলছিল হোটেলের ঘরেই। তারপর হোটেলের ঘর থেকে দুজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় দেহ। বস্তাবন্দি করে অর্চনার দেহ ফেলে আসা হয় আনন্দপুর পাম্পিং স্টেশনে।
কিন্তু বলরামের দেহ কোথায় ফেলা হয়েছিল, তা জানা নেই আশিসের। আশিসকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। দেহ লোপাটের অভিযোগে হোটেল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।