‘অপরাজেয়’ সোমনাথ একবারই হেরেছিলেন মমতার কাছে, এবার হারলেন জীবন-যুদ্ধে
রাজনৈতিক জীবনে একবারই হার হয়েছিল তাঁর। ১৯৮৪ সালে তিনি হেরে গিয়েছিলেন নবাগতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর পরাজয়ে পথ চলা শুরু হয়েছিল রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর।
সংসদীয় রাজনীতিতে নক্ষত্রপতন হল সোমবার। বহু লড়াইয়ের পর তিনি হার মানলেন অবশেষে। জীবন-যুদ্ধে হেরে গেলেন তিনি। হার কী জিনিস তিনি জানতেন না। রাজনৈতিক জীবনে একবারই হার হয়েছিল তাঁর। ১৯৮৪ সালে তিনি হেরে গিয়েছিলেন নবাগতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর পরাজয়ে পথ চলা শুরু হয়েছিল রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় রাজনৈতিক জীবনের শুরুই হয়েছিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনী পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। প্রথমবারের জন্য পা দিয়েছিলেন লোকসভায়। সেই একবারই পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল সোমনাথকে।
আক্ষরিক অর্থেই এটা ছিল অবাক হার। এর বাইরে পরাজয় কী জিনিস, তা জানতেন না সোমনাথ। কোনও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই ভাবেননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় হারতে পারেন। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুতে সমবেদনার হাওয়ায় কংগ্রেসের টিকিটে সোমনাথকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মমতা।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এরপর আর দাঁড়াননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। দাঁড়াননি যাদবপুর থেকেও। তিনি এরপর সংসদীয় ক্ষেত্র পরিবর্তন করে চলে যান বোলপুরে। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সবকটি নির্বাচনেই বোলপুর থেকে তিনি নির্বাচিত হন। তাঁর আগে ১৯৭১ সালে তিনি প্রথম নির্দল সাংসদ নির্বাচিত হন। সিপিএমের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রবেশ করেন সংসদে। তারপরই তাঁর সিপিএমে যোগ।
মাঝে একবার ১৯৮৪ সালে ছন্দপতন ঘটে। মমতার কাছে হারের পর ফের ১৯৮৯ সালে সংসদে ফেরেন বোলপুর থেকে নির্বাচিত হয়ে। তখন থেকেই তিনি সিপিএমের লোকসভা দলনেতা। ২০০৪ সালে তিনি হন কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকারের স্পিকার। ২০০৫ সালে অনুপ্রবেশ নিয়ে বলতে গিয়ে ডেপুটি স্পিকারকে লক্ষ্য করে কাগজ ছুড়ে পদত্যাগ করেছিলেন। সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর তাঁর বিরোধী শিবিরে ছিলেন। তবু দল সেমনাথবাবুকে বহিষ্কারের পর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ বেড়েছিল। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নামই প্রস্তাব করেছিলেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে সরকার গড়ার পড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানান সোমনাথ। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে দেখা করতেও গিয়েছিলেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সুশাসনের আহ্বান জানান।
[আরও পড়ুন:লোকসভার ইতিহাসের এই লজ্জাজনক বিতর্কটি দাপটে সামলেছিলেন 'স্পিকার' সোমনাথ]
মমতার কাছে হেরে সেদিনও সোমনাথ বলছিলেন, অভিনন্দন। আর ২০১১ সালে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সোমনাথ বলেছিলেন অভিনন্দন। আপনি নির্বাচনে জিতেছেন। এবার সুশাসন দিন বাংলাকে। একমাত্র যাঁর কাছে তিনি হেরেছিলেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় তিনি উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি। এটাই ছিল তাঁর মহানুভবতা।
[আরও পড়ুন:প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়! এক অভিভাবককে হারাল পশ্চিমবঙ্গ, প্রতিক্রিয়া সুজনের]