ভারতের মহানগরগুলির যে তালিকায় মুম্বই-বেঙ্গালুরুর চেয়ে এগিয়ে কলকাতা
গতকালই সারা সারা বিশ্বের দুষিত শহরগুলি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন। তাতে দেখা গিয়েছিল প্রথম ১৫ টি দুষিত শহরের তালিকায় ১৪টিই ছিল ভারতের শহর।
গতকালই সারা সারা বিশ্বের দুষিত শহরগুলি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন। তাতে দেখা গিয়েছিল প্রথম ১৫ টি দুষিত শহরের তালিকায় ১৪টিই ছিল ভারতের শহর। সেই তালিকায় ছিল না কলকাতার নাম। তাতে হয়ত অনেক শহরবাসীই নিশ্চন্ত হয়েছিলেন।
কিন্তু ওই একই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দুষিত মহানগরী হিসেবে ভারতে দুনম্বরে নাম আছে কলকাতার। এখনই দিল্লি বা ডব্ল্যুএইচও-এর সবচেয়ে দুষিতের তালিকায় থাকা শহরগুলোর মতো অবস্থা না হলেও কলকাতার দুষণের মাত্রা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, কলকাতার বায়ুর গুণগত মান দিল্লির তুলনায় অসম্ভব দ্রুত হারে পড়ছে।
ডব্ল্যুএইচও ১০০ টি দেশের ৪,০০০ টিরও বেশি শহরে গবেষণা চালিয়ে ২০১৬-র দূষণের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। এই ডাটাবেস অনুযায়ী কলকাতা শহরের ছবিটা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। ২০১৫ সালে কলকাতার পিএম২.৫ এর বার্ষিক মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫২ মাইক্রোগ্রাম। ডব্লিউএইচওৃর মতে বার্ষিক গড় পিএম২.৫ এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম হলে তাকে নিরাপদ বলা ায়। কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম অবধিই নিরাপদ ধরা হয়। কলকাতার পিএম২.৫ এর বার্ষিক গড় কিন্তু ওই নিরাপদ মাত্রার থেকে 7 গুণ বেশি।
পরিবেশবিদরা অবশ্য বলছেন ডব্লিউএইচও'র প্রতিবেদনটি ২০১৬ সালের ভিত্তিতে তৈরি। কলকাতার বায়ুর গুণমান এখন তার চেয়ে আরও খারাপ। তাঁদের দাবি ২০১৭-য় শহরের দূষণের মাত্রা আগের তুলনায় দ্রুত হারে বেড়েছে। এর কারণ এই সময়ে যেমন বিশাল সংখ্যায় বেড়েছে শহরের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা, তেমনই বেড়েছে নির্মাণ কাজ। এরসঙ্গে আছে জৈববস্তুর দহনের ধোঁয়া। এই তিনটিই বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, "ডাব্ল্যুএইচও-এর প্রতিবেদন কিন্তু সতর্ক বার্তার মতো। এখনই শহরের বায়ুর গুণমান উন্নত করার জন্য বড় কিছু করা দরকার।'
পিএম১০ কাউন্টের দিক থেকেও কলকাতার ছবিটা শোচনীয়। ২০১৫-র বার্ষিক গড় কাউন্ট ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৫ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০১৬-তে একধাক্কায় বেড়ে হয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ১৩৬ মাইক্রোগ্রাম। ডব্ল্যুএইচও-এর মতে এর নিরাপদ মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০ মাইক্রোগ্রাম, ভারতের ক্ষেত্রে যা বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। অনেকে বলছেন কানপুর ফরিদাবাদ, গয়া পাটনার মতো শহরগুলির হাল কলকাতার চেয়ে অনে খারাপ।
কিন্তু কলকাতার আরেক পরিবেশ কর্মী সৈমেন্দ্র মোহন ঘোষের মতে এতে আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই। তঁার মতে,'ওই শহরগুলির তুলনায় কলকাতার জনঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে এখানে দূষণের ক্ষতিটাও বেশি হয়। কলকাতায় এই কারণেই সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যানসার হয়। এখানে তো দূষণ প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অনুমিতা রায় চৌধুরী বলেন, "দিল্লি একটা বদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
২০১৬ সালের পর থেকে অবস্থাটা ভালর দিকে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা সহ অন্যান্য দূষিত শহরগুলির দূষণ বেড়েই চলেছে। এটি একটি জাতীয় জনস্বাস্থ্য সঙ্কট। নতুন প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার অ্যাকশন প্ল্যানকে এটা দেখতে হবে যাতে সব শহরে সেই মানদন্ড মেনে চলে।'