প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্যের আঁচ বিধানসভাতেও, বিরোধী-তোপে তৃণমূল সরকার
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের অভিযোগ বিধানসভায় তুলল কংগ্রেস ও সিপিএম। সোমবার রাজ্য বিধানসভায় প্রাথমিক শিক্ষরদের দাবি সম্বলিত প্রস্তাব পেশ করা হলেও রাজ্য সরকার তা নিয়ে কোনও আলোচনা করতেও রাজি হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের অভিযোগ বিধানসভায় তুলল কংগ্রেস ও সিপিএম। সোমবার রাজ্য বিধানসভায় প্রাথমিক শিক্ষরদের দাবি সম্বলিত প্রস্তাব পেশ করা হলেও রাজ্য সরকার তা কানে তোলেনি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে কোনও আলোচনা করতেও রাজি হয়নি। এরপরই সরকারের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিধানসভার কক্ষ ত্যাগ করেন বিরোধী বিধায়করা।
উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রাজ্যপালের কাছে আগেই ডেপুটেশন দিয়ে দাবি জানানো হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার লাভের। সেদিনও প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালের কাছে দরবার করেছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী।
সেদিন তাঁরা কথা দিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য ঘোচানোর এই দাবি তাঁরা বিধানসভায় উত্থাপন করবেন। সেইমতো তাঁরা এদিন বিধানসভায় প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনা চান বিধানসভার অন্দরে। কিন্তু সরকার পক্ষ তা আলোচনা করতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করার পর কংগ্রেস-সিপিএম বিধায়কদের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সরব হন সুজন চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, এ রাজ্যের শিক্ষকরা সবথেকে কম বেতন পান। সর্বক্ষেত্রে নাকি রাজ্য এগিয়ে, কেন শিক্ষকদের বেতনে তাঁরা সবার পিছনে? এসব নিয়ে কোনও আলোচনাতে যেতেই রাজি নয় সরকার। আসলে তৃণমূল সরকার ভয় পাচ্ছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। তাঁরা শিক্ষকদের ভয় পাচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে ভয় পাচ্ছে। তাঁর কথায়, এ রাজ্যের সরকারের সংখ্যা আছে, কিন্তু যোগ্যতা নেই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার। সংখ্যা দিয়ে গায়ের জোরে সরকার চালানোর চেষ্টা করছে।
উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য মইদুল ইসলাম বলেন, রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন এবং রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, তার তীব্র নিন্দা করছি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন যেভাবে বামেদের ভুগিয়েছিল, মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়কেও শিক্ষক আন্দোলন সেভাবে ভোগাবে শুধু নয়, তৃণমূল সরকারের পতনের অন্যতম কারণ হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে যে আন্দোলন চালাচ্ছি, তা জারি থাকবে।
বাম ও কংগ্রেস পরিষদীয় দল যেভাবে বিষয়টিকে বিধানসভায় উত্থাপন করেছেন, তার জন্য অভিনন্দন জানান সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস। তাঁর মতে, ২৯ ও ৩০ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে দুদিনের অবস্থান বিক্ষোভ সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। এদিন যেভাবে বিধানসভার অধিবেশনে তাঁদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হল তা আমাদের আন্দোলনে প্রাণসঞ্চার করবে।
দিন তিনেক আগেই সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত মহামিছিলে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন শিক্ষকরা। সেই মিছিলে সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলকাতার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানানো হয়। তার আগে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপিও পেশ করেছিল উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।
গত ৩০ অক্টোবর শহিদ মিনারের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে দু'দিনের অবস্থান বিক্ষোভ করেছিল উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই অবস্থান বিক্ষোভে শিক্ষকরা কলকাতার রাজপথ অবরোধও করেছিলেন। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষককে ছ-ঘণ্টা লালবাজারে আটকে রাখে পুলিশ।