দৌড়ে গতি বাড়াতে চান? অ্যালগরিদম উন্নত করুন
জুতোর মতোই গ্যাজেটস এখন জরুরি হয়ে উঠেছে একজন দৌড়বিদের জন্যে। খুব কম সংখ্যক দৌড়বিদই আজকের দিনে স্টেপ কাউন্টার, জিপিএস ওয়াচ, স্মার্ট ফোন বা স্মার্ট ওয়াচ ছাড়া বের হন।
দৌড়বিদ গিলিয়াম এডাম, আরও দ্রুত, আরও বেশি পথ, আরও দীর্ঘ সময় ধরে অতিক্রম করতে চান।
অন্য অনেক আধুনিক দৌড়বিদদের মতোই ফরাসী জাতীয় দলের এই প্রাক্তন সদস্য নিজেকে আরো উন্নত ও যোগ্য করে তুলতে প্রযুক্তিকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে চান।
জুতোর মতোই গ্যাজেটস এখন জরুরি হয়ে উঠেছে একজন দৌড়বিদের জন্যে। খুব কম সংখ্যক দৌড়বিদই আজকের দিনে স্টেপ কাউন্টার, জিপিএস ওয়াচ, স্মার্ট ফোন বা স্মার্ট ওয়াচ ছাড়া বের হন।
পরিধেয় এসব বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব অতিক্রান্ত দূরত্ব, গতি, হৃদস্পন্দন এবং ছন্দ - যা কিনা নিজের সক্ষমতাকে আরো বাড়াতে সহায়তা করে।
"আমি একজন দৌড়বিদের হওয়ার পাশাপাশি একজন বিজ্ঞানীও। তাই যখন আমার তথ্যের প্রয়োজন, তখন সঠিক তথ্যই আমার চাই," বলছিলেন মি. এডাম।
তবে তার মতে, দূর্ভাগ্যক্রমে অনেক পরিধেয় প্রযুক্তিই সঠিকভাবে তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করেনা।
আরো পড়ুন:
চটি পায়ে ৫০ কিমি ম্যারাথন দৌড়ে বিস্ময়কর বিজয়
টানা ৪০১ দিন ধরে প্রতিদিন ম্যারাথন দৌড়ের রেকর্ড
দৌঁড়ে অংশ নিয়ে মারা গেলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ভোক্তাদের একটি সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, বহু ফিটনেস ট্র্যাকারই দৌড়বিদদের অতিক্রম করা দূরত্বকে সঠিকভাবে পরিমাপ না করে কম করে দেখায় - যার কারণে দৌড়বিদকে দীর্ঘ দৌড় সম্পন্ন করতে হলে অপ্রয়োজনীয় কয়েক মাইল অতিরিক্ত দৌড়াতে হয়।
"আপনি হয়তো একটি জিপিএস ওয়াচের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু নিখুঁত হবার সমাধান পদ্ধতি হয়তো আপনি তৈরি করতে জানেন না," বলছিলেন তিনি।
"যদি আপনি তথ্য বিশ্লেষণ করতে চান তবে তা আগে আপনাকে পেতে হবে।"
নিজের শরীরচর্চাকে আরো সুচারুভাবে পরিচালনার জন্যে মি. এডাম এখন এমন একটি পরিধেয় বা ওয়্যারেবল ব্যবহার করছেন যা কিনা চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহার করা হতো।
'গেইটআপ' নামে পরিচিত এই সেন্সরটির উদ্ভাবক ড. বেনোইট মেরিয়ানি, পার্কিনসন্সের মতো রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তের জন্যে এটি তিনি তৈরি করেছিলেন।
'ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন'
ড. মেরিয়ানির মতে, কোন ধরণের পরীক্ষায় লক্ষণ সনাক্ত হওয়ার আগে শরীরের দেয়া বেশকিছু ইঙ্গিতকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
"যদি আপনার মাংসপেশীর দুর্বলতা বা স্নায়বিক সমস্যা থেকে থাকে তবে এটি প্রথমেই আপনার চলনভঙ্গিতে ধরা পরবে।"
হাঁটার ধরনের মধ্যে পরিবর্তন আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য পরিমাপের অন্য সব লক্ষণ যেমন- হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, তাপমাত্রা, শ্বাস প্রশ্বাসের হার এবং অক্সিজেন সম্পৃক্তার মতোই স্বীকৃত।
তিনি বলেন, "চলনভঙ্গি আমাদের ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ বা চিহ্ন।"
ড. মেরিয়ানির ইঞ্জিনিয়ারিং দলটির তৈরি সেন্সরটি পদক্ষেপ পরিমাপের চাইতেও বেশি কিছু করে থাকে। পা-এর পাতার অগ্রভাগ এবং পশ্চাৎ অংশ কত সময়ের এবং কিভাবে মাটি স্পর্শ করে, সে বিষয়টিও তারা ধারণ করে থাকে।
"আমরা হাঁটার ভঙ্গির মান নিয়ে আগ্রহী," বলছিলেন তিনি।
কেবল তিনি একাই নন, বহু গবেষকই বিশ্বের সেরা দৌড়বিদরা কিভাবে দৌড়ায় বা হাঁটে- সেসব তথ্য আরো ভালোভাবে পেতে আগ্রহী। বলছিলেন, ব্রাইটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া গবেষক ড. ইয়ান্নিস পিটসিলাডিস।
'অসামঞ্জস্যতা এবং সমস্যা'
প্রতিটি পদক্ষেপে ন্যূনতম শক্তি ব্যয় নিশ্চিত করার মধ্যেই ম্যারাথনের সাফল্য- এমনটাই বলেন ড. পিটসিলাডিস।
"আপনি যত বেশী শক্তি সাশ্রয়ী হতে পারবেন এক্ষেত্রে একেবারে শেষ পর্যন্ত গতি একই রকমভাবে বজায় রাখতে পারবেন।"
তার মতে শক্তি সাশ্রয়ের জন্যে যে কোনো বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। হতে পারে সেটি জুতা, বা তথ্য বা প্রশিক্ষণ যা ১% বা ২% করে উন্নতি ঘটাতে সক্ষম- যা সামগ্রিক পারফর্মেন্সে বিশাল প্রভাব ফেলে।
প্রশিক্ষণে বিজ্ঞানকে ব্যবহারের ওপর খুবই গুরুত্ব দেন মি. পিটসিলাডিস।
তিনি বলেন, উন্নতির জন্যে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এখন এমন সব সেন্সরের উদ্ভাবন হয়েছে যা কোনো ধরনের বাধন ছাড়াই শরীরের সাথে যুক্ত করে দৌড়ানো যায়।
ট্রেডমিল বা কৃত্রিমভাবে দৌড়ানোর যন্ত্রের সাহায্যে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে অনেকসময় সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না বলে মনে করেন এই গবেষক।
তিনি প্রকৃত দৌড় প্রতিযোগিতা বা প্রশিক্ষণের সময় একজন দৌড়বিদ যেভাবে দৌড়ায় সেই তথ্য বিশ্লেষণের ওপর বেশি জোর দেন।
মি. এডাম নিউ ইয়র্ক সিটি ম্যারাথনের প্রস্তুতির জন্যে গেইটআপ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। আর যা তাকে দ্রুততম ফরাসী ফিনিশার হিসেবে ২ ঘণ্টা ২৬ মিনিটে নির্ধারিত দূরত্ব অতিক্রমে সহায়তা করেছিল।
দৌড় প্রশিক্ষক স্যাম মারফির মতে গেইটআপ-এর মতো সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য অত্যন্ত ব্যাপক।
অনেক বিখ্যাত দৌড়বিদেরই শারীরিক অসামঞ্জস্যতা এবং সমস্যা ছিল। তারা মনে করেন শরীর নিজের মতো করে সেসব বিষয়কে সামলে নেয়।