মাসুদ আজহারের উপরে কোপ : ভারত জিতলেও হারেনি চিন, পাকিস্তানও
জয়েশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে গত বুধবার, পয়লা মে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ 'আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী'র তকমা দেওয়ার পরেই উল্লাস প্রকাশ করেছে দেশের শাসকদল বিজেপির নেতা-সমর্থকরা।
জয়েশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে গত বুধবার, পয়লা মে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ 'আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী'র তকমা দেওয়ার পরেই উল্লাস প্রকাশ করেছে দেশের শাসকদল বিজেপির নেতা-সমর্থকরা। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এ এক বিরাট কূটনৈতিক জয়। কূটনৈতিক জয় নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলে রাখা ভালো যে আজহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়টিতে কিন্তু কারওরই কোনও লোকসান হয়নি। এমনকী, চিন আজহারকে 'আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী'র তকমা দেওয়া থেকে নিজের আপত্তি তুলে নিলেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের পরম মিত্র পাকিস্তানের দিলদরিয়া প্রশংসা করতে কিন্তু ছাড়েনি।
চাপ যে বাড়ছিল চিনের উপরে তাতে সন্দেহ নেই
একথা অস্বীকার করা চলে না যে পুলওয়ামা কাণ্ডের পর আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে চিনের উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের চাপ বাড়ছিল ক্রমশ। আর পাকিস্তানের খাতিরে সেই চাপ নেওয়া চিনের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে উঠছিল। এই অবস্থায় চিনকে বেশ কিছু ব্যাপারে নজর রাখতে হত। এক, দুনিয়ার সামনে এই বার্তা না যায় যে তারা চাপের মুখে নতিস্বীকার করেছে। দুই, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যাতে তলানিতে না ঠেকে এবং তিন, পাকিস্তানের সঙ্গে তার অমূল্য সম্পর্ক যেন সুরক্ষিত থাকে।
কিন্তু চিন বুদ্ধি করে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বাঁচিয়েই আজহারের সমর্থন তুলে নিল
এই সমস্ত কারণে চিন চাপ স্বীকার করল কিন্তু একটি উপায় বের করে। আজহারকে নিষিদ্ধ করার আসল দরখাস্তটিতে ফেব্রুয়ারির পুলওয়ামা কাণ্ডের কথা থাকলেও জানা যায় যে পরে চিনের জোরাজুরিতে সেটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেইজিং-এর এই অবস্থানটিও আসলে পাকিস্তানকে কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে সুরক্ষিত রাখার জন্যেই; এটা বহির্বিশ্বকে দেখানো যে কাশ্মীরের সমস্যা আসলে অভ্যন্তরীণ, সেখানে বাইরের কোনও শক্তির কোনও হাত নেই।
অর্থাৎ, কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে বন্দুকের নলটা ভারতের দিকেই ঘুরিয়ে রাখা।
সমঝোতা করল সবাই, লোকসান কারওই হল না
অতএব, শেষমেশ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষিত করা হয় তাঁর জয়েশ এবং আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে; কাশ্মীরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগের জন্যে নয়। এর অর্থ আজহারকে নিষিদ্ধ করতে ভারত এবং রাষ্ট্রসংঘে তার মিত্রদের সমঝোতা করতেই হয়েছে। তাতে নয়াদিল্লির শাসকদল বিশেষ উদ্বিগ্ন নয় কারণ এই ভোটের বাজারে তাদের কাছে ফসল ঘরে তোলাটাই বড়; সূক্ষ্ণ বিচারে আর কেই বা যায়? আর অন্যদিকে, চিন বলছে যে তারা চাপের মুখে নতিস্বীকার করেনি; বরং আজহার সম্পর্কে সংশোধিত দরখাস্তমাফিক এগিয়েছে। আর পাকিস্তান, যারা কিনা এই পুরো ব্যাপারটির মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে নিজের ভাবমূর্তি শোধরানোর কাজটি করেছে, তাদের দাবি সম্মানহানি তাদেরও হয়নি কারণ সমস্ত রাজনৈতিক বিষয়গুলি সরিয়ে দেওয়ার পরেই আজহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় অর্থাৎ তাদের কাশ্মীর সম্পর্কে কোনও বিতণ্ডাতে জড়ানোর ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই।
[আরও পড়ুন:কূটনীতির খাতিরেই পাকিস্তান ছাতাটা মাসুদ আজহারের মাথা থেকে সরিয়ে নিজের মাথায় ধরল]