বারবার কেন ফ্রান্সকেই নিশানা বানাচ্ছে জঙ্গিরা? কী কারণ? জেনে নিন
ফ্রান্স মানেই আধুনিক মনন, মুক্ত চিন্তা, শিল্প-সংষ্কৃতির দেশ। একসময়ে সাহিত্য়ের কারণে বিশ্বজোড়া নাম ছিল ফ্রান্সের। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর দেশ হিসাবে একসময়ে বিশ্বের নানা দেশে অধিকার কায়েম করেছিল ফরাসিরা। তবে এই দেশই এখন সন্ত্রাসবাদের করায়ত্ত হতে বসেছে। একেরপর এক সন্ত্রাসবাদী হানায় বিধ্বস্ত গোটা ফ্রান্স। [নিসে ট্রাক নিয়ে কীভাবে হামলা চালায় আততায়ী? দেখে নিন সেই মুহূর্তের ভিডিও]
গত পাঁচ বছর ধরেই ফ্রান্সে সন্ত্রাসবাদ নিজের শেকড় মজবুত করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যঙ্গচিত্র পত্রিকা শার্লি এবদোর দফতরে হামলার মাধ্যমে তা অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর বৃহস্পতিবার নিস শহরে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের সময়ে যা হল তাকে 'আফটার শক' বা 'আফটার এফেক্টস' বললে খুব একটা ভুল হবে না। [ফ্রান্সে গত ৫ বছরে ১৫ বার জঙ্গি হামলার ঘটনাপঞ্জী]
ফ্রান্সে সন্ত্রাসবাদী হামলার দায় কোনও জঙ্গি সংগঠন স্বীকার করেনি। তবে মনে করা হচ্ছে এই ধরনের ঘটনা আইএসের মতো কেউই ঘটিয়েছে। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওল্যঁদ জানিয়েছেন, সারা ফ্রান্সে আইএসের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও তিনি অঙ্গীকার করেছেন। [ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে নিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসের চিত্র একনজরে]
একদিকে দেশের অভ্যন্তরকে ফরাসি রাষ্ট্রপতি জঙ্গি মুক্ত করার কথা বলেছেন, আর একদিকে ইরাক সিরিয়ায় আইএস বিরোধী সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তবে এতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। কারণ এর শেকড় ছড়িয়ে রয়েছে অনেক গভীরে।
৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার পরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময়ে ফ্রান্স কিছুটা দূরত্ব রেখে চললেও গোটা বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। এই ফাঁকে আমেরিকা নিজের দেশের নিরাপত্তাকে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলি, বিশেষ করে ফ্রান্স বরাবরই এই বিষয়ে এতদিন উদাসীন থেকে এসেছে।
আর সেই সুযোগেই ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের মতো দেশ সেই শৈথিল্য়ের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিদের কাছে উন্মুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এক্ষেত্রে আর একটি কারণ বিশেষভাবে অনুঘটকের কাজ করেছে তাতে সন্দেহ নেই। ফ্রান্সের জনসংখ্যার প্রায় দশভাগের একভাগ মুসলমান। বিভিন্ন আফ্রিকান দেশ যেমন তিউনিশিয়া, মরক্কো বা আলজেরিয়ার মতো উত্তর আফ্রিকার ইউরোপ অদূরবর্তী দেশগুলি থেকে বহু মানুষ উন্নত জীবনের আশায় ফ্রান্সে এসে ঘর বেঁধেছেন।
তবে ইউরোপের মূল জনজীবন থেকে এরা সবসময় বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন। জীবিকা থেকে জীবনযাত্রা, অর্থনীতি থেকে সামাজিক সুবিধা কিছুই তারা ভালোভাবে পায়নি। যার ফলে বঞ্চিত এই মানুষগুলির মনে স্বাভাবিকভাবেই রাগ জন্মেছে। আর সেই রাগের ফসলই ঘরে তুলছে আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি।
সংখ্যালঘু তরুণ সমাজের একটা অংশকে মগজ ধোলাই করে ধর্মের নামে জেহাদের বুলি শিখিয়ে দিচ্ছে জঙ্গিরা। সমাজবিচ্ছিন্ন এই অংশের যুবকেরা তাই স্বচ্ছ্বন্দে ধর্মের নামে কুরবানি দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। এর শেষ কোথায়, কীভাবে তা বোধহয় নির্ধারণ করা এত সহজ নয়। সমাজজীবনে বিপ্লব না এলে এই জঙ্গিবাদ এত সহজে নির্মূল হবে বলে মনে হয় না।