ইরানে ফাঁসি দেয়া হলো আরো এক বিক্ষোভকারীকে
ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে সেদেশে আরো একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ।
ইরানের বিচার বিভাগ ঘোষণা করেছে বৃহস্পতিবার সকালে মাশাদ শহরে মাজিদরেজা রাহনাভার্দকে “প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়।“
দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এটা দ্বিতীয় ঘটনা।
মাজিদরেজা রাহনাভার্দের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তিনি আধাসামরিক বাসিজ বাহিনীরর দুজন সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। আদালত তাকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
মানবাধিকার গ্রুপগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ইরানে বিক্ষোভকারীদের যে বিচার প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে তা সাজানো এবং এতে কোন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না ।
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস নামে একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক টুইট বার্তায় বলেন - “জোর দরে আদায় করা স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে, সাজানো ও অন্যায় বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাহনাভার্দকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে এ অপরাধের ফল ভোগ করতে হবে।“
টুইটে তিনি আরো বলেন , ইরানে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে বন্দী করা হয়েছে এবং এক ডজন মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে, যার ফলে “বিক্ষোভকারীদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।“
বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে দ্বিতীয় মৃত্যুদণ্ড
ইরানে বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতার কারণে প্রথম মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর হয় গত বৃহস্পতিবারই। সেদিন মোহসেন শেকারি নামে ২৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানী তেহরানে 'বাসিজ’ বাহিনীর একজন সদস্যকে চাপাতি দিয়ে আক্রমণের অভিযোগ ছিল এবং “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতার” অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বাসিজ হচ্ছে এমন একটি সরকারের অনুগত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী – যাদেরকে ইরানী কর্তৃপক্ষ ভিন্নমত দমনের জন্য কাজে লাগিয়ে থাকে।
ইরানের এ বিক্ষোভ শুরু হয় মাহসা আমিনি নামে এক ২২-বছর বয়স্ক কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার পর। তেহরানে গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ঠিকমত হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ তাকে আটক করার পরে হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর পর ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৬১ শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর এটিকে সবচেয়ে গুরুতর সরকার বিরোধী বিক্ষোভ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৪৮৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয় এবং মানবাধিকার কর্মীদের হিসাব মতে এ পর্যন্ত ১৮,২৫৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
তারা আরো জানিয়েছে – এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর ৬২ জন মারা গেছে।
ইরানের নেতারা এ বিক্ষোভকে “বিদেশী শত্রুদের উস্কে দেয়া দাঙ্গা” বলে অভিহিত করে থাকেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নিরস্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ।