চতুর্দিকে ছড়িয়ে মৃতদেহ, কান্না বন্ধুদের, কীভাবে হ্যালোইন পার্টি পরিণত হল একটা মৃত্যু ফাঁদে
দক্ষিণ কোরিয়ায় কীভাবে হ্যালইন পার্টি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হল
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতাওয়ানে হ্যালোইন পার্টি ক্রমেই মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পদপিষ্ঠ হয়ে ১৫১ জনের মৃ্ত্যু হয়েছে। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি এই মর্মান্তিক ঘটনার ছবি প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, একটা সরু গলির মধ্যে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহ।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুমানিক এক লক্ষ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম আউটডোরে হ্যালোইন উৎসবের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। দ্রুত সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। হ্যালোইন পার্টিতে অংশগ্রহণকারী একজন বলেন, একটা সরু প্যাসেজে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানে চলাফেরা করা কঠিন ছিল। একভাবে দুইঘণ্টা দাঁড়ানোর পর উদ্ধারকর্মীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রচুর মানুষ পার্টিতে অংশ নিতে জড়ো হয়েছিলেন। প্রথমে পিছন থেকে কয়েকজন ধাক্কা মারেন। এই ধাক্কার চোটে পাঁচ-ছয় জন নিচে পড়েন যান। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, যাঁরা পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্ধার করার কেউ চেষ্টা করেননি। সবাই তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যেতে থাকেন। যার জেরে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে।
২০ বছরের পার্ক নামের এক তরুণী স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেন, তিনি একটা সরু স্থানের কোনের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি অনেকক্ষণ একভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সরু জায়গাটির মাঝখানের অংশে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হুড়োহুড়িতে অনেকে পড়ে যেতে দেখেন তিনি। পার্ক বলেন, সেই সময় আমাদের মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর কোনও সিনেমা দেখছি। যুদ্ধের সময় দৃশ্য দেখছি। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। হুড়োহুড়ি চোখের সামনে বেশ কয়েকজনকে পড়ে যেতে দেখেছি। পরিস্থিতি এমন ছিল যে তাঁদের সাহায্য করার মতো পরিস্থিতি আমাদের ছিল না।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইটওয়ান নাইটলাইফ ও রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত। গত দুই বছর করোনার জন্য ইটওয়ানের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। চলতি বছরে হ্যালোইন পার্টির তাই আয়োজন করা হয়েছিল। হ্যালোইন পার্টিতে লাভের মুখ দেখবেন বলে ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই হ্যালোইন পার্টি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। হ্যলোইন পোশাকে দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ-তরুণীদের বন্ধুদের মৃতদেহের পাশে বসে কাঁদতে দেখা গিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য হ্যলোইন পার্টি বন্ধ ছিল। এই বছর তাই সবাই অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। ভিড় ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যার জেরেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।