পাক ভিডিও-র অংশই উস্কাচ্ছে গণ-হিংসা, দেশে শিশু পাচারকারী সন্দেহের শিকার ২১
একটি সাজানো ভিডিও সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করছে যা একের পর এক গণ পিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে।
সারা দেশে একের পর এক রাজ্যে গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানা যাচ্ছে শিশু অপহরণের একটি গুজবেই তৈরি হচ্ছে সন্দেহের বাতাবরণ। আর সেই সন্দেহ থেকেই একের পর এক নিরপরাধ মানুষের উপর প্রবল আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন জনতা। সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলায়। সেখানকার রাইনপাড়া গ্রামে, গত রবিবার শিশু অপরহরণকারী সন্দেহে পাঁচজন নিরাপরাধকে পিটিয়ে মারা হয়। জানা গিয়েছে ওই পাঁচজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এবং ভিক্ষা করে দিন গুজরান করতেন।
বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল করা হচ্ছে। কী রয়েছে সেই ভিডিয়োতে? ভিডিওটি একটি সিসিটিভি ফুটেজ। দেখা যাচ্ছে কোনও এক শহুরে রাস্তায় কয়েকটি শিশু ক্রিকেট খেলছে। এমন সময় একটি মোটর বাইক আসে। বাইকে দুই আরোহী, তাদের মুখ হেলমেটে ঢাকা। বাইকটি প্রথমবার শিশুদের মধ্য দিয়ে চক্কর কেটে চলে গেলেও একটু বাদেই আবার ফিরে আসে। এবার কিন্তু তারা এই শিশুদের একজনকে মোটর বাইকে তুলে নিয়ে চলে যায়।
এই ভিডিয়োই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তার সঙ্গে আসছে একটি লিখিত বার্তা। যাতে বলা হচ্ছে এই ভিডিয়ো এই এলাকার পাশের কোনও শহরের ঘটনা। শিশু অপহরণকারীদের একটি দল এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। আর তার থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।
এই ভিডিওটি আসলে অসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ ভিডিওটিতে ওই বাইক আরোহীরা আবার ওই স্থানে ফিরে এসে শিশুটিকে নামিয়ে সিসি ক্যামেরার উদ্দেশ্যে একটি পোস্টার তুলে ধরে। পোস্টারে লেখা, করাচি শহরে বাচ্চা চুরি করা এতটাই সহজ। বস্তুত এটি পাকিস্তানের 'রোশনী' নামে একটি এনজিও-র বিশেষ প্রচারাভিযানের অংশ। করাচি শহরে প্রত্যেক বছর ৩ হাজারের বেশি বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটে। তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই তারা এই কাণ্ড করেছিল।
এই ভিডিয়োরই প্রথমাংশ-কে ব্যবহার করা হচ্ছে গুজব ছড়াতে। শুধু এই ভিডিওই নয়। সারা দেশেই একের পর এক এই ধরণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই বয়ান এক, এলাকায় ঢুকে পড়েছে একদল ছেলেধরা। পাশের গ্রাম বা শহরে তারা কয়েকজন শিশুকে তুলে নিয়ে গেছে পাচার করবে বলে। তাই সাবধানে থাকুন। কোথাও কোথাও পুলিশের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে বার্তাগুলিকে বৈধতা দিতে। বয়ানটা একই থাকচে, পাল্টে যাচ্ছে এলাকা বা শহরের নাম।
এভাবেই একের পর এক গণ হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে। শিশু পাচারকারি সন্দেহে সারা দেশে এরকম গণ-হিংসার শিকারের সংখ্যা এখনও অবধি ২১। কারা কি উদ্দেশ্যে এই উত্তেজক বার্তা ছড়াচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সমাজে ভেদ আনলে, সন্দেহ তৈরি হলে মৌলবাদী রাজনীতির যে সুবিধা হয় তা বলাই বাহুল্য।
কেন্দ্রীয় সরকার তার গত চার বছরের সাফল্য তুলে ধরতে ব্যস্ত। গত চার বছরে কিন্তু গণহিংসারও প্রভুত 'বিকাশ' ঘটেছে। পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ইদানীং শিশু অপহরণের গুজবে এধরণের ঘটনা ঘটলেও গণ হিংসার শুরুটা কিন্তু হয়েছিল গোমাংস রাখার সন্দেহের ২০১৫-য় মহম্মদ আখলাকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।