করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লো কেন?
বুধবারে হঠাৎ এক ধাপে এতোগুলো মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হুবেইতে ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা স্থিতিশীল ছিল। প্রদেশটিতে নতুন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা জাতীয় মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়লেও চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
একমাত্র ব্যতিক্রম হল জাপানের বন্দরে ভেড়া ক্রুজ জাহাজটির পরিস্থিতি।
যেখানে নতুন করে ৪৪ জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এতে জাহাজটিতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে।
ডব্লিউএইচও বলছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বা তীব্রতার ধরণে কোনও বড় পরিবর্তন হয়নি।
হুবেইয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন করে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ১১৬জন। এছাড়া নতুন আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪,৮২৩জন।
আগের দিনের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার কিছুটা কম। গতকাল নতুন করে ২৪০ জনের মৃত্যু হয়। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।
তবে এর বেশিরভাগ লোক হুবেই প্রদেশে।
আরও পড়তে পারেন:
''আমার বিশ্বাস আমরা এ থেকে বেরিয়ে আসবো'
করোনাভাইরাস: রুশ মিডিয়ায় মার্কিন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত
করোনাভাইরাস: 'অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না'
করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সেখানে নতুন একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই সংখ্যার তারতম্য দেখা যাচ্ছে, বলেন ডব্লিউএইচও-এর জরুরী স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান।
"প্রাদুর্ভাবের গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসলে হয়নি," তিনি বলেন।
চীনের বাইরে ২৪ টি দেশে এ পর্যন্ত ৪৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই জন।
বৃহস্পতিবার জাপানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে - টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো।
জাপানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই নারীর মৃত্যুর পরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই রোগের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এবং এই প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের সাথে তার কোনও সুস্পষ্ট যোগসূত্র নেই।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, তারা উত্তর কোরিয়ায় সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের প্রভাব নিয়ে "গভীর উদ্বেগের" মধ্যে রয়েছে, দেশটিতে এখনও পর্যন্ত কোনও কোন আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজ দেশ থেকে এবং আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো থেকে সাহায্য দেয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করবে বলে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ডায়মন্ড প্রিন্সেসে কী হচ্ছে?
জলযানটিকে ইয়োকোহামায় কোয়ারান্টিনে অর্থাৎ আলাদা করে রাখা রয়েছে। জাহাজটির ভেতরে থাকা ৩৭০০ জন যাত্রীর সবার স্বাস্থ্য এখনও পরীক্ষা করা হয়নি।
ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য তাদেরকে জাহাজ থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জাহাজের ভেতরে থাকা অন্যান্যদের কেবিনের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে।
তবে বৃহস্পতিবার জাপান বলেছে যে তারা ওই জাহাজে থাকা ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের, যাদের কিনা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধারা পড়েনি, তাদেরকে জাহাজ থেকে নামার অনুমুতি দেবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাটসুনোবু কাটো বলেছেন, শুক্রবার তাদেরকে জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হতে পারে তবে সরকারের দেওয়া আবাসনে থাকতে হবে, জাপান টাইমস জানিয়েছে।
এদিকে, এমএস ওয়েস্টারডাম নামে আরও একটি ক্রুজ জাহাজ ২ হাজার জন যাত্রীকে নিয়ে জাপান, তাইওয়ান, গুয়াম, ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডের বন্দর থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। জাহাজটির সবাই সুস্থ থাকা সত্ত্বেও সেটাকে কোথাও ভিড়তে দেয়া হচ্ছিল না।
পরে জাহাজটি কম্বোডিয়া বন্দরে নোঙর করে।
হুবেইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
বুধবারে হঠাৎ এক ধাপে এতোগুলো মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হুবেইতে ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা স্থিতিশীল ছিল।
প্রদেশটিতে নতুন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ফলে তীয়ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৫০ জনে এবং সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো বলেছেন যে, নতুন এই সংখ্যা তাদের 'অবাক' করেছে।
"আমরা চীনাদের কাছ থেকে স্বচ্ছতার অভাব দেখে হতাশ হয়েছি, এই সংখ্যাগুলো বারবার ওঠা-নামা করছে," তিনি বলেছিলেন।
মিঃ কুডলো বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনও অনেক হতাশ। এই প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চীনকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে চাইলেও, চীন এই মার্কিন প্রস্তাবে কোন সাড়া দেয়নি।
এদিকে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যান প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরে চীনের হুবেই প্রদেশের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বেইজিং।
ডব্লিউএইচও থেকে মি. রায়ান বলেছেন যে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এই সংখ্যা বেড়ে যাবার একটা কারণ।
সমগ্র চীনজুড়ে যে পরিমাণ মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তারমধ্যে কেবলমাত্র হুবেই প্রদেশেই এই সংক্রমণের হার ৮০% বা তারও বেশি।
এখন নতুন করে আক্রান্তদের নির্ণয়ের জন্য এখন নতুন সংজ্ঞা ব্যবহার হচ্ছে।
মিঃ রায়ান জানিয়েছেন, ডব্লিউএইচও দলের চূড়ান্ত সদস্যরা এই প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থলটি অনুসন্ধানের জন্য সাপ্তাহিক ছুটিতে চীন পৌঁছে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবিসির চীন সংবাদদাতা স্টিফেন ম্যাকডনেলের বিশ্লেষণ:
এই সংখ্যা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
চীনের করোনাভাইরাসের সরকারি হিসাব যারা অনুসরণ করছেন তাদের সবার কাছেই এই হিসাব অসম্পূর্ণ লেগেছে। সরকারী কর্মকর্তারাও এটি জানেন।
সংক্রমিত সবাই এ হিসেবের মধ্যে থাকবে না। সেটি সম্ভবই বা কীভাবে?
তবে আমরা পাচ্ছি সেটি হচ্ছে একটি ট্রেন্ড।
প্রাদুর্ভাবের পরিধি অনুমান করার জন্য আমরা প্যাটার্নটি পর্যবেক্ষণ করতে পারি। এখন সেটাও ওলট-পালট হয়ে গেছে।
নতুন সংজ্ঞায় যাদের শরীরে রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা যাবে তাদেরকেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত বলা হচ্ছে।
এতে পুরো ম্যাপিংয়ে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
কেবলমাত্র হুবেইতে গত ২৪ ঘণ্টায়, প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে সংক্রমিত তালিকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
এটি বিশ্বজুড়ে ভীতি ছড়িয়ে দিতে পারতো।, কিন্তু বাস্তবে, আপনি যদি বুধবারের পরিসংখ্যানটি পুরনো সংজ্ঞা অনুসারে বিবেচনা করেন, তাহলে বরং সংক্রমণের হার আরও কমেছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র।
সুতরাং এখন, আমরা আমাদের মাথা চুলকাচ্ছি: আমরা কি বৃহস্পতিবার থেকে আবার নতুন করে প্যাটার্নটির দিকে নজর দেওয়া শুরু করব?
এখন অনেকেই ভাবছেন, প্রকৃত মৃত্যুর হার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় আসলে কেমন এবং সামগ্রিক পরিসংখ্যানকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।