মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি, দেশব্যাপী বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি
সামনের দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুরের জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবারে কারাগারের কক্ষে মুশতাক আহমেদ অচেতন হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আকস্মিক এই মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই কাজ করবে এই কমিটি।
কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই সদস্য হলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী এবং সহকারী কমিশনার উম্মে হাবিবা ফারজানা।
তাদেরকে সামনের দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন যে তারা কাজ শুরু করেছেন। সন্দেহভাজন সব দিকগুলো খতিয়ে দেখে তারা যতো দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন।
অন্যদিকে উম্মে হাবিবা ফারজানা জানিয়েছেন, প্রাসঙ্গিক সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবেন।
শুক্রবার দুপুরে মুশতাক আহমেদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেও, তার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন যে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই পরিষ্কার হবে কী কারণে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়েছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, মৃত্যুর কারণ যাই হোক সেটা তদন্ত করা হবে, প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
আরও পড়তে পারেন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: উদ্বেগ কোথায়?
সরকারের সমালোচনা বন্ধ করতেই কি কার্টুনিস্ট ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা?
কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের মুক্তি চায় অ্যামনেস্টি
এদিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহায়মেন জানান যে তারা মরদেহের শরীরে দৃশ্যমান কোন আঘাতের চিহ্ন পান নি।
মুশতাক আহমেদের চাচাতো ভাইও জানিয়েছেন যে তারা লাশের যতোটুকু অংশ দেখেছেন। সেখানে কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।
কিন্তু মুশতাক হোসেনের এমন অকস্মাৎ মৃত্যুর ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শুক্রবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
তিনি সেখানে লেখেন, যে মানুষটি ২৩ তারিখে সিএমএম আদালতে সুস্থ অবস্থায় হাজিরা দিতে এসেছেন, তিনি ২৫ তারিখে মারা যাবেন, সেটা অবিশ্বাস্য।
এ ঘটনায় তিনি নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
জেল সুপার গিয়াস উদ্দিনের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে লেখক মুশতাক আহমেদ তার কারাগারের কক্ষে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যান।
এসময় তার কক্ষে থাকা অপর দুইজন চিৎকার করলে, কারাগারের কর্তব্যরতরা, মুশতাক আহমেদকে কারাগারের হাসপাতালে নিয়ে যান।
তার পরিস্থিতি দেখে কারা চিকিৎসকরা গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
গাজীপুরের ওই হাসপাতালের আউটডোরের চিকিৎসকরা মুশতাক আহমেদকে পরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল "ব্রট ডেড" অর্থাৎ মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
কিন্তু কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সেটা ওই সনদে লেখা ছিল না।
এ কারণে লাশের সুরতহালের পাশাপাশি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বলে জানান মি. উদ্দিন।
দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
মুশতাক আহমেদ এর আগে কখনই তার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে কোন অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।
তার মতে, মি. আহমেদ মাঝে মাঝে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতেন। এছাড়া আর কোন শারীরিক জটিলতার বিষয়ে তার জানা নেই।
এদিকে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সেইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শাহবাগ থানার সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সরকার এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে ছাত্রনেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিতর্কিত এই আইন বাতিলের দাবিতে আগামী এক মাস সারাদেশের সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনকে সাথে নিয়ে বিক্ষোভ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এছাড়া পহেলা মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি এবং তেশরা মার্চ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
এর আগে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা শুক্রবার সন্ধ্যায় মুশতাক হোসেনের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল বের করলে শাহবাগ মোড়ের কাছে তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এই পুলিশি হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
খাসোগজি হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ, বলছে যুক্তরাষ্ট্র
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ
খাসোগজি হত্যা রিপোর্ট প্রকাশের আগে সৌদি বাদশাহকে বাইডেনের ফোন
ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন না শামীমা বেগম