'বেশি মাইনের দরকার নেই, কমান', কেন এমন আর্জি নিয়ে আন্দোলনে কানাডার চিকিৎসকরা
কর্মবিরতিতে কানাডার কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকরা। এঁরা সকলেই এখন দাবি তুলেছেন 'বেশি মাইনে আর নয়, মাইনে এবার কমান'!
একটি মাত্র ছবি। আর তাতেই এখন কর্মবিরতিতে কানাডার কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকরা। এঁরা সকলেই এখন দাবি তুলেছেন 'বেশি মাইনে আর নয়, মাইনে এবার কমান'! কেউ নিজের মাইনে কমাতে চায়? এমন বিষ্ময়বোধক প্রশ্নই এখন বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আবার এক একদম এগিয়ে বলেই বসেছেন 'আহাম্মক না হলে কেউ এমন করে!'
সত্যি, কেউ যদি বেশি মাইনে পাচ্ছেন বলে কর্মবিরতিতে নেমে মাইনে কমাতে চান তা তো সকলকে অবাক করবেই। কিন্তু, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই জানেন না চিকিৎসকদের এমন অভিনব আন্দোলনের পিছনের কারণটা। কানাডার চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে খরচ হয় তা প্রদেশ সরকারগুলি বহণ করে। এর জন্য কানাডার ফেডারেল গভর্নমেন্ট কোনও অর্থ বরাদ্দ করে না।
ফলে কানাডার এক একটি প্রদেশে চিকিৎসকদের মাইনে এক এক রকম। মাইনে কম নেওয়ার আন্দোলনে নামা কানাডার কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকদের দাবি, তাঁদের মাইনে না বাড়িয়ে সেই অর্থ চিকিৎসা পরিকাঠোমা ও রোগী কল্যাণে কাজে লাগানো হোক। কানাডার চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সওয়াল করে আসছেন নার্সরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অচিকিৎসক স্বাস্থ্য-কর্মীরা। অধিকাংশ হাসপাতালেই চিকিৎসা কর্মীর প্রতুলতা রয়েছে। রোগীদের কল্যাণেও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করা হয় না। আন্দোলনে নামা চিকিৎসকদের দাবি, পরিকাঠামোর অভাব যেখানে রয়েছে সেখানে খামতিগুলো দূর করতে মনোনিবেশ করা হোক।
আসলে জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে ভাইরাল হয় কিউবেক প্রদেশের এক নার্সের এই ছবি। অতিরিক্ত কাজের চাপ, একের পর এক নাইট শিফট-এ ক্লান্তি ও বিনিদ্র রজনী যাপনে তাঁর এই হাল হয়েছে বলে ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন ওই নার্স। এই পোস্টটি ফেসবুকে ৫০ হাজারেরও বেশিবার শেয়ার হয়। এরপরই নড়ে-চড়ে বসে কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিসিন কিউবেকোইস পোর লে রেজিমে পাবলিক। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তারা আর মাইনেতে বৃদ্ধি চান না। কারণ, প্রতি বছরই তাঁদের মাইনে ১.৪ শতাংশ থেকে ১.৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হচ্ছে। এর মানে ২০২৩ সালের মধ্যে কিউবেক প্রদেশের সরকারকে অতিরিক্ত ১.৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার চিকিৎসকদের মাইনের পিছনে খরচ করতে হবে। কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকরা গড়ে বছরে ৩,৬৭,০০০ কানাডিয়ান ডলার মাইনে থেকে আয় করেন। তাই কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকদের সংগঠনের মতে, এরপরে আর মাইনে বৃদ্ধির কোনও দরকার নেই। বরং চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নে এই অর্থ ব্যয় করলে ভালো।
এদিকে, চিকিৎসকদের এই আন্দোলনে অস্বস্তিতে কিউবেক প্রদেশের হেলথ মিনিস্ট্রি। এই মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, 'চিকিৎসকরা বাড়তি মাইনে না নিতে চাইলে তাঁরা আমার টেবিলে ফেলে দিয়ে যেতে পারেন।' এই নিয়ে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি কিউবেক প্রদেশের চিকিৎসকদের সংগঠন। তারা এই মুহূর্তে সই সংগ্রহে ব্যস্ত। কয়েক হাজার চিকিৎসকদের ইতিমধ্যেই বাড়তি মাইনে না নেওয়ার স্মারকলিপি-তে সইও করে দিয়েছেন। কিউবেক প্রদেশে অন্তত ২০ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। এঁরা সকলেই সরকারের কাছ থেকে মাইনে পান।
তবে কিউবেকের এই আন্দোলন লজ্জায় ফেলে দিয়েছে কানাডার আর এক প্রদেশ ওনতারিও-কে। কারণ, ওনতারিও-র চিকিৎসকরা আরও মাইনে বৃদ্ধির জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন নেমেছে। ওনতারিও-র চিকিৎসকরা বছরে গড়ে ৪,০৩,৫০০ কানাডিয়ান ডলার মাইনে হিসাবে পান। কানাডার চিকিৎসকদের মাইনে দেওয়ার তালিকায় ওনতারিও-ই সবার উপরে। স্বাভাবিকভাবেই কিউবেকের আন্দোলন ওনতারিও-র চিকিৎসকদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।