For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মুক্তিযুদ্ধ: পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের পরবর্তী আটদিন যেভাবে চলেছে বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধ: পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের পরবর্তী আটদিন যেভাবে চলেছে বাংলাদেশ

  • By Bbc Bengali

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকালে বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর কাছে নিজের পিস্তল তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী।

এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের টানা নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছিল।

তবে তখনো বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকার কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি।

সরকারের কর্মকর্তারা কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছিলেন ২২শে ডিসেম্বর।

এই আটদিন কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ?

সেই সময় মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তৌফিক হোসেন ইমাম, যিনি এইচ টি ইমাম নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর 'বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১' বইতে সেই সময়কার প্রবাসী সরকারের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তিনি দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, ''শত্রু আত্মসমর্পণ করলে আমরা কত দ্রুত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করব ঢাকায়? এই স্থানান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম প্রশ্ন: নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা। সেটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা কোন ঝুঁকি নিতে পারি না। অতএব সমরনায়কদের পরে প্রথম ব্যাচে যাবেন সচিববৃন্দ। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিবর্গ ঢাকা থেকে সিগন্যাল পাওয়ার পরে যাবেন।''

বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সেই সময় প্রতিটি জেলায় ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ সুপার নিয়োগ করে তাদের কর্মস্থলে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্যও কর্মকর্তাদের বাছাই করা হয়, যাতে তারা কয়েক ঘণ্টার নোটিশে কাজে যোগ দিতে পারেন।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে মরণপণ লড়াই চলে টানা নয় মাস ধরে
Getty Images
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে মরণপণ লড়াই চলে টানা নয় মাস ধরে

মুজিবনগর সরকারের এই প্রস্তুতি চলছিল ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে, যখন পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।

বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়া এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য সচিব এবং কর্মকর্তাদের একটি অগ্রবর্তী দলকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল বলে তার বইতে উল্লেখ করেছেন এইচ টি ইমাম।

তিনি লিখেছেন: "পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর ঢাকা বিমানবন্দরের সরঞ্জামের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই কারণে অগ্রবর্তী দলে উইং কমান্ডার (অব) মির্জাকে (তিনি বিস্তারিত নাম উল্লেখ করেননি) পাঠানো হয়। সেই অগ্রবর্তী দলে আরও ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের ফয়েজ আহমেদ এবং সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এম আর আখতার মুকুল।"

বিজয়ের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম লিখেছেন, ''নবনিযুক্ত ডেপুটি কমিশনার ও এসপিদের স্বাধীন বাংলা বেতার এবং টেলিগ্রাম মারফত সরাসরি নির্দেশ দিতে আরম্ভ করি। টাইপ করার সময় না থাকায় এই সময় সরাসরি হাতে লিখে নির্দেশ দিতে থাকি।

''১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর সারাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে আরও কয়েকদিন প্রয়োজন ছিল। আমাদের প্রধানতম কাজ ছিল রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, বিভাগীয় শহরগুলি এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলি কাল বিলম্ব না করে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া। একই সাথে সচিবালয় ও সারাদেশে বিভিন্ন দপ্তরে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করা,'' লিখেছেন মি. ইমাম।

ঢাকা বিমানবন্দর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারা ঢাকায় ফেরত যেতে শুরু করেন।

ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যে দলটি ঢাকায় পৌঁছায়, তাদের মধ্যে ছিলেন মুখ্য সচিব রুহুল কুদ্দুস, রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা এ এফ এম এ ফতেহ, সংস্থাপন সচিব নুরুল কাদের, পুলিশের মহাপরিচালক এম এ খালেক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ারুল হক খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এ জামান, নৌ পরিবহনের পরিচালক কিউ এ বি এম রহমান প্রমুখ।

১৮ই ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির নির্দেশে মন্ত্রিসভার বিশেষ জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। মুজিবনগর থেকেই তখন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা নতুন দেশের নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলেন বলে লিখেছেন এইচ টি ইমাম তাঁর 'বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১' বই-এ।

তিনি লিখছেন: সেই সভায় আলোচ্য সূচির মধ্যে ছিল, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য পোশাক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নামে অ্যাকাউন্ট, সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেট, ঢাকা বেতার কেন্দ্র চালু করা, গণবাহিনীর সদস্যদের প্রস্তাবিত জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি, সরকারি কর্মচারীদের পুনর্বিন্যাসের বিষয়সমূহ।

একই সঙ্গে সেই সময় ঢাকায় প্রশাসনের কর্তৃত্ব নেয়া এবং অস্থায়ী সদর দপ্তর মুজিব নগর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ চলছিল। ভারতীয় সামরিক বিমান ও বাংলাদেশের ছোট ছোট বিমানে করে কাগজপত্র স্থানান্তর করা হচ্ছিল বলে বই-এ উল্লেখ করা হয়েছে।

যুদ্ধের সমাপ্তি - ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ
BBC
যুদ্ধের সমাপ্তি - ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারে উপ-সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আকবর আলী খান। তিনি পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন।

আকবর আলী খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''সরকার পরিচালনায় কোন অসুবিধা হয়নি। ডিসিদের মুজিবনগর থেকেই পাঠানো হয়েছিল। কিছুটা মুজিবনগর থেকে, কিছুটা ঢাকা থেকে, কিছুটা নানা জেলা থেকে-আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে (দেশ) পরিচালনা করা হচ্ছিল।

''সরকারের পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে অবশ্যই সময় লেগেছে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার ছিল, তা করেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়তো কম হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশে প্রশাসন যতটুকু কার্যকর থাকে, তা ছিল,'' বলছিলেন মি. খান।

সেই সময় সরকারের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে আনা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, খাদ্য সংগ্রহ ও নিরাপত্তা তৈরি, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা, প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করানো, ভারত থেকে শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা- লিখেছেন এইচ টি ইমাম।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও অন্যান্য মন্ত্রীরা ২২শে ডিসেম্বর একত্রে ঢাকায় ফিরে আসেন। এইচ টি ইমাম এবং অন্য কর্মকর্তারাও মুজিবনগর থেকে সেদিন ঢাকায় ফিরে যান।

''ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পর নেতৃবৃন্দের প্রথম কাজ ছিল বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করে আনা,'' লিখেছেন এইচ টি ইমাম।

তিনি লিখেছেন, সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর পুরো দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, স্থিতিশীলতা তৈরি করা ছিল সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

যে সকল কর্মকর্তাদের আনুগত্য নিয়ে তখন প্রশ্ন ছিল না, তাদের বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয় বলে উল্লেখ করেছেন এইচ টি ইমাম।

১৯৭১ সালে ঢাকায় প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ক্যাবিনেট রুমে। ওই বৈঠকের প্রধান সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া। প্রাক্তন স্টেট ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক নামকরণ করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সকল পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়।

সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুজিবনগর সরকার, সেটি বাস্তবায়নে ১১ সদস্যের একটি জাতীয় মিলিশিয়া বোর্ড গঠন করা হয়।

পরবর্তীতে ২৭শে ডিসেম্বর মন্ত্রিসভাকে আরও সম্প্রসারিত করা হয়।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:

লঞ্চে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন, কী বলছে মালিক ও কর্তৃপক্ষ?

নতুন মহাশূন্য টেলিস্কোপ জেমস ওয়েবের যাত্রা শুরু

ইউরোপ থেকে যেভাবে তৎকালীন বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে খ্রিস্ট ধর্ম

বাংলাদেশে কৃষি জমির জৈব উপাদান কমে যাওয়ার প্রভাব কী হতে পারে?

English summary
Bangladesh defeted Pakistani foce
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X