কাবুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, নিহত শতাধিক পড়ুয়া
কাবুলের একটি শিক্ষাকেন্দ্রে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত শতাধিক পড়ুয়া
কাবুলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ফলে শতাধিক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিহত ছাত্রদের মধ্যে বেশিরভাগ হাজারা ও শিয়া সম্প্রদায়ের। হাজারা আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। তালিবান প্রশাসনের তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হাজারা ও শিয়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক বিলাল সারওয়ারি, টুইট করেছেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত ১০০ জন ছাত্রের মৃতদেহ গণনা করেছি। নিহত ছাত্রের সংখ্যা আরও বাড়বে। একটি পরীক্ষার জন্য শ্রেনিকক্ষে ছাত্ররা জমায়েত করেছিলেন।' এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা ছিল বলে আফগান সাংবাদিক জানিয়েছেন। তিনি বীভৎসতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ছাত্রদের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিস্ফোরণে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ছাত্রদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম কাবুলের দাশত-ই-বারচি এলাকায় বিস্ফোরণটি হয়েছে। সেখান মূলত শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। সংখ্যালঘু হাজরা সম্প্রদায় সেখানে বাস করেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ মুখপাত্র খালিদ জাদরান বলেন, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ জনের মৃতদেহ এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে স্থানীয় প্রশাসন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তালিবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল নাফি টাকোর টুইট করে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে নিরাপত্তারক্ষীরা পৌঁচেছেন। সাধারণ মানুষ, পড়ুয়াদের ওপর আঘাত করা কাপুরুষতার প্রমাণ করে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি ইন্টারনেটে একধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে চাপ চাপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখা। আহত পড়ুয়াদের যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
গত বছর অগাস্টে আফগানিস্তান দখল করে তালিবান। আফগানিস্তানের সরকারকে উচ্ছেদ করে তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তারপরেই তালিবানের তরফে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তারমধ্যে অন্যতম ছিল দেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে। জঙ্গি হামলা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে কাবুলে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গি হামলা বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ, মসজিদ, এমনকী সংখ্যালঘূদের প্রার্থনাসভাতেও জঙ্গিরা হামলা করছে।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আইএস জঙ্গিরা তাদের হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি কাবুলের নিরাপত্তাবেষ্টিত গ্রিন জোনে হামলা করে জঙ্গিরা। মূলত রাশিয়া দূতাবাসকে লক্ষ্য করে এই হামলা করা হয়। ঘটনায় রুশ দূতাবাসের দুই কূটনীতিক সহ মোট চারজন নিহত হয়েছিলেন। আর আগে একটি মাজারে প্রার্থণার সময় হামলা করেছিল জঙ্গিরা। আইএসের ওই আত্মঘাতী হামলায় তালিবান সরকার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। তালিবান সরকার আফগানিস্তানে জঙ্গি হামলা আদৌ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বরং আগের থেকে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে আইএস। আফগানিস্তান জুড়ে হামলা বাড়াচ্ছে আইএস।