For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

হরেক রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্বঃ এগুলো যে বানোয়াট কীভাবে বুঝবেন?

ফেক নিউজের যুগে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' যেন নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হরহামেশা শেয়ার করা এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের যে কোন ভিত্তি নেই, একেবারেই বানোয়াট, তা কীভাবে বুঝবেন?

  • By Bbc Bengali

A man dressed as a magician performing a hypnotising trick
Getty Images
A man dressed as a magician performing a hypnotising trick

পৃথিবী জুড়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। এর সবগুলো যদি আপনি বিশ্বাস করেন তাহলে বিশ্ব কিন্তু একটা আজব জায়গায় পরিণত হবে।

নীচের ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর কথাই ধরা যাক:

  • ব্রিটেনের রাজপরিবার আসলে ভিনগ্রহ থেকে আসা ক্রমাগত আকৃতি বদলাতে থাকা গিরগিটি।
  • নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর হামলার ঘটনা ছিল সাজানো, এতে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো।
  • গ্রিফন শকুন (দেহ সিংহের আকৃতির, ডানা এবং মুখ শকুনের মতো) ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি চালায়।
  • ছেঁড়া জিন্স পরার ফ্যাশন আসলে এক ধরণের গোপন সংকেত।
  • নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসলে একজন ছদ্মবেশি সুদানি নাগরিক।
  • এইডস এবং ইবোলা রোগের জীবাণু তৈরি করেছে সিআইএ ।
  • পৃথিবী আসলে গোল নয়, সমতল। মানুষ আসলে কখনো চাঁদে যায়নি।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হয়তো সত্যি নয়, কিন্তু এগুলোর মারাত্মক ফল আছে।

যেমন ধরা যাক টিকা বা প্রতিষেধক দেয়ার বিরুদ্ধে যারা প্রচারণা চালায় তাদের কথা। এদের প্রচারণার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ফ্রান্স, মাদাগাস্কার এবং অন্যান্য দেশে হামের মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

কোনটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর কোনটা নয়, সেটা তাহলে কীভাবে বোঝা সম্ভব?

An artists impression of a flat earth with an alien hovering above it
Getty Images
An artists impression of a flat earth with an alien hovering above it

দ্য হোলি ট্রিনিটি

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কেন এত ডালপালা ছড়ায়, কেন এতে মানুষ বিশ্বাস করে, তার কারণ অনেক।

তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি হয় এক ধরণের শূন্যতার সুযোগ নিয়ে। যখন কীনা কোন একটা বিষয় ব্যাখ্যা করা যায় না, বা কোন বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।

একটি ঘটনার নানা রকম বিকল্প ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তবে এরকম বিকল্প ব্যাখ্যার সঙ্গে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৌলিক পার্থক্য আছে।

লণ্ডনের ওপেন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের লেকচারার ড: জোভান বায়ফোর্ড বলেন, "কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য হলো - এর পেছনে একটি হীন বা শয়তানি পরিকল্পনা থাকতে হবে। এই পরিকল্পনা করা হবে খুবই কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে। এর পেছনে থাকবে ক্ষমতাবান কিছু ব্যক্তি বা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।"

তার মতে প্রতিটি ষড়যন্ত্র তত্ত্বে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে। ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনা এবং গণমানুষকে প্রভাবিত করার উপায়।

১. ষড়যন্ত্রকারী

ডঃ বায়ফোর্ডের মতে, ষড়যন্ত্রকারী কোন ব্যক্তি হতে পারে, কোন সংগঠনও হতে পারে, যাদের থাকবে অনেক সদস্য।

যেমন 'দ্য ইলুমিনাটি', 'দ্য ফ্রী ম্যাসন্স' বা সাম্প্রতিকালের 'বিল্ডারবার্গ গ্রুপ' কিংবা 'দ্য স্কাল এন্ড বোনস সোসাইটি।'

তবে এই ষড়যন্ত্রকারীরা আসলে কারা, সেটা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা থাকবে। ভাসা ভাসাভাবে বলা হবে, বিগ ফার্মা (বড় বড় ঔষধ কোম্পানি), মিলিটারি ইনডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স (যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় কর্পোরেশন, যুদ্ধাস্ত্র কোম্পানি এবং সামরিক খাতের মধ্যে গোপন আঁতাত) অথবা 'গ্লোবাল এলিট।'

ড: বায়ফোর্ড মনে করেন, আসলে শত্রুকে সংজ্ঞায়িত করার একটা মনস্তত্ত্ব কাজ করে এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পেছনে।

A hand gripping a bunch of strings tied to television sets
Getty Images
A hand gripping a bunch of strings tied to television sets

২. পরিকল্পনা

যে কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রধান উপাদান হিসেবে থাকে একটা পরিকল্পনা।

বেশিরভাগ সময় এতে পুরো পৃথিবীকে কব্জা করার কথা থাকবে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যেসব ক্ষমতাবান মানুষেরা থাকবে, তাদের মৃত্যুর পরও তাদের পরিকল্পনা টিকে থাকবে।

ড: বায়ফোর্ড বলেন, "এরকম বিরাট পরিকল্পনা গোপন রাখতে গেলে যেরকম মাত্রায় তা চাপা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে, তাতে এমন একজনের দরকার হবে, যিনি সবকিছুর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণে থাকবেন।"

আরও পড়ুন:

আফগানিস্তান: ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দেশ

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারীর নানা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব'

যারা মনে করেন ৯/১১-র বিমান হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বসে পড়ে নি

"বিশ্বকে যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এই বিশ্বাস আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে সেই সব সংকটময় মূহুর্তে, যখন কোন কিছু ঠিকমত ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।"

৩. জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা

ষড়যন্ত্রের হোতারা কীভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, সেটা হচ্ছে আরেকটি বড় ভিত্তি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের। কোন খেলার আগে সেই ম্যাচের ফল অনুমান করে যেসব কথা বলা হয়, অনেকটা সেভাবেই বর্ণনা করা হবে এই বিষয়টিকে, বলছেন ডঃ বায়ফোর্ড।

"এ নিয়ে বিস্তর বলা হবে, অনেক 'প্রমাণ' হাজির করা হবে, অবিশ্বাস্য সব দৃশ্যকল্পের বর্ণনা দেয়া হবে। কিন্তু এমন হওয়ার সম্ভাবনা আদৌ কতটা, সেটা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কিছু থাকবে না এরকম তত্ত্বে। কিন্তু এরপরও এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুনে এতে বিশ্বাসীদের ধারণা আরও দৃঢ়মূল হবে।"

যারা এসব ষড়যন্ত্রের উদগাতা, তারা যেসব বর্ণনা দেবে তার তথ্যসূত্র বিজ্ঞান, সরকার বা গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে শুরু করে নানা কিছু হতে পারে। সেখানে অস্বাভাবিক, অতিপ্রাকৃত থেকে শুরু করে মানুষের 'ব্রেন ওয়েভ' নিয়ন্ত্রণের হাস্যকর বর্ণনাও থাকবে।

কিন্তু তারপরও কেন মানুষ এসব 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বিশ্বাস করে?

যুক্তরাজ্যের উইনচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড: মাইক উড বলছেন, মানসিক চাপে যারা ভোগেন, তাদের এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু গবেষণায় সেটাই দেখা যাচ্ছে।

"কেউ যখন মনে করেন যে তার জীবনটা আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই, তখন ষড়যন্ত্র তত্ত্বই তাদের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।"

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ডঃ মারটো পানটাযি বলেন, যখন মানুষ সম্মিলিতভাবে কোন মানসিক আঘাতের শিকার হয়, তখন এরকম ঘটতে পারে।

Smoke pours from the World Trade Center in New York after it was hit by two hijacked passenger planes on 11 September, 2001.
Getty Images
Smoke pours from the World Trade Center in New York after it was hit by two hijacked passenger planes on 11 September, 2001.

২০১০ সালে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সহ দেশটির বেশিরভাগ রাজনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার এক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান। এই ঘটনা নিয়ে নানা রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল।

এনিয়ে গবেষণা করেন ডঃ মারটো পানটাযি। তিনি এবং তার সহকর্মীরা দেখেছেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে সমাজে বিভক্তি আরও তীব্র করে। সংঘাত বাড়ায়। কারণ এধরণের ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে আরও দূরত্ব তৈরি হয়।

আর এধরণের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যত বেশি মানুষ শোনে, সেগুলো সত্যি বলে বিভ্রম তৈরি হয়।

মনোবিজ্ঞানীরা একে 'ইল্যুশন অব ট্রুথ' বলে বর্ণনা করেছেন।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ হ্যানকক বলেন, "আপনি কোন কিছু যত বেশি দেখবেন, তা তত বেশি পরিচিত মনে হবে। আর কোন কিছু যত বেশি পরিচিত মনে হবে, সেটি তত বেশি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে।"

Three men in a bar looking at a mobile phone
Getty Images
Three men in a bar looking at a mobile phone

একটি সতর্কবাণী

ডঃ পানটাজি বলেন, "ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কিন্তু সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। যারা বিশ্বাস করে যে টিকা দিলে শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত হয় এবং শিশুদের টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়, তারা কিন্তু এসব শিশুকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।"

যারা নিজেদের চালাক ভাবেন, যারা ভাবেন তাদের বোকা বানানো সম্ভব নয়, তাদেরও সতর্ক হওয়া দরকার।

"কোন একটা বাড়ির মাটির নীচের ঘরে বসে ইন্টারনেটে নানা রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে, ষড়যন্ত্রতত্ত্বকারীদের ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষের ধারণাটা এরকম।"

"কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পুরোপুরি বিশ্বাসও করে না, নাকচও করে না, তাদের অবস্থান এই দুয়ের মাঝামাঝি", বলছেন ডঃ বায়ফোর্ড।

সেকারণেই হয়তো আমরা একদিকে অদ্ভূত সব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নাকচ করে দিচ্ছি, আবার 'এক্স-ফাইলস' এর মতো ছবি গোগ্রাসে গিলছি।

English summary
All kinds of conspiracy theories: How do you understand the fabrications?
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X