বুয়া-ভাতিজা দুর্নীতিবাজ, সুযোগসন্ধানী! ক্ষিপ্ত যোগী আদিত্যনাথ আর কী বললেন
রাগে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেন না যোগী আদিত্যনাথ। যবে থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তখতে বসেছেন তখন থেকে চিনে জোঁকের মতো তাঁর পিছনে পড়ে রয়েছেন অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী।
রাগে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেন না যোগী আদিত্যনাথ। যবে থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তখতে বসেছেন তখন থেকে চিনে জোঁকের মতো তাঁর পিছনে পড়ে রয়েছেন অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী। গোরখপুরের পাঁচ-পাঁচবারের সাংসদ তিনি। কিন্তু, বুয়া-ভাতিজার জ্বালায় সেই গোরখপুর লোকসভা আসন হাতছাড়া হয়েছে। উত্তর প্রদেশে একের পর এক উপনির্বাচনে নিজেদের মধ্যে জোট করে যত ঘোট পাকাচ্ছেন অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী। আর সেই জ্বালায় তিতিবিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বুকের উপরে বসেই লোকসভা নির্বাচনে জোট বাঁধার কথা ঘোষণা করে দিলেন অখিলেশ ও মায়াবতী।
উত্তর প্রদেশে ৮০ টি লোকসভা আসন রয়েছে। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে গেরুয়া শিবিরের হাল যে ভালো নয় তা উপনির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত হয়েছে। এমনকী, গত কয়েক মাস ধরে যত সমীক্ষা হয়েছে তাতে বারবার দেখানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশে বুয়া-ভাতিজা জোট বাঁধলে আর রক্ষে নেই। আর এর সঙ্গে যদি কংগ্রেস যোগ হয় তাহলেও আর রক্ষে নেই। এমন সম্ভাবনার অঙ্ক বারবার তুলে ধরা হয়েছে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে নানা জনমত সমীক্ষায়। সুতরাং, বুয়া-ভাতিজার জোটের সুতো-তে শুরুতেই আঘাত করতে না পারলে যে বিপদ আসন্ন তা ভালো করেই বোঝেন যোগী আদিত্যনাথ। আর সেই কারণে বিএসপি ও সপা-র জোটের কথা ঘোষণা হতেই তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজেই বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টির জোটকে চরম জাতবিদ্বেষী, দুর্নীতিবাজ ও সুযোগসন্ধানী বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, 'এই জোটের নেতারা উন্নয়ন বা ভালো সরকার চান না।' সেই সঙ্গে আরও তোপ দেগে বলেন, উত্তরপ্রদেশের মানুষ সব জানেন এবং তারা এই অশুভ জোটকে কঠোর প্রত্য়ুত্তরও দেবেন।
'এটা এমন এক জোট যারা জাতপাত, দুর্নীতি আর সুযোগসন্ধানী মানসিকতায় দুষ্ট এবং এরা উন্নয়ন চায় না। মানুষ যথাসময়ে এদের উপযুক্ত জবাব দেবে।' বলেও মন্তব্য করেন যোগী। শনিবার লখনউ-এ সাংবাদিক সম্মেলন শুরু আগে মায়াবতী-কে 'বুয়া' মানে পিসি ডাকেও সম্বোধন করেন অখিলেশ। জোটের কথা ঘোষণার সময় অখিলেশ ও মায়াবতী- দু'জনেই ব্য়াপকভাবে বিজেপি-কে আক্রমণ করেন। বিজেপি-র যে ভাবে ঔদ্ধত্ব্য বেড়েছে তার কড়া জবাব এই জোট দেবে বলেও মন্তব্য করেন অখিলেশ ও মায়াবতী। এমনকী মায়াবতী এমনও বলেন যে এই জোটের জন্য বিজেপি এখন ভয় পাচ্ছে। ১৯৯৩ সালের বিএসপি-র সপার জোট ও ১৯৯৫ সালে এক কলঙ্কময় ঘটনার সঙ্গে তার অবসান, এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সে সব প্রসঙ্গ টেনে আনেন মায়াবতী। বিজেপি-কে হারাতে তিনি ও অখিলেশ এই সব ঘটনার ঊর্ধ্বে যেতে চাইছেন তা জানাতেও ভোলেননি বিএসপি নেত্রী।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি-র সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস-কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি মায়াবতী। তিনি বলেন, বিজেপি ও কংগ্রেস দু'দলই সমান। দুই দলই প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি করেছে। কংগ্রেস দেশের উপরে এমারজেন্সি চাপিয়েছিল। আর এখন তো অঘোষিত এমারজেন্সি চলছে বলেও মন্তব্য করেন মায়াবতী। রাজনৈতিক মহলের মতে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধী জোটে যেভাবে কৌশলে কংগ্রেস-কে আলাদা করে দিয়েছেন মায়াবতী তাতে অনেকেই ভবিষ্যৎ-এর এক ইঙ্গিত পাচ্ছেন। কারণ, উত্তরপ্রদেশে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কোনও জমি সেভাবে নেই। সুতরাং, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে কংগ্রেসকে নতুন করে জমি পাইয়ে দিতে নারাজ মায়াবতী। এতে আগামীদিনে তাঁর বিরুদ্ধবাদী করার মতো প্রতিপক্ষের সংখ্যা কমবে। বিজেপি মায়াবতী-র এই সুক্ষ্ম রণকৌশলকেই এখন হাতিয়ার করতে চাইছে। আর সেই কারণে মায়াবতী ও অখিলেশের জোটকে সুযোগসন্ধানী বলে যোগী আদিত্যনাথকে দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের ছুরিতেই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-রা শান দিয়ে রাখলেন বলে মনে করা হচ্ছে।