কেন কেন্দ্রের সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাবনা পাশ করছে বিভিন্ন রাজ্যগুলি?
কেন কেন্দ্রের সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাবনা পাশ করছে রাজ্যগুলি?
ইতিমধ্যেই সংসদে পাশ হওয়া সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়ে এটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্র বিরোধী দলগুলি। এই আইনের বিরুদ্ধে কেরল ও পাঞ্জাব বিধানসভায় প্রস্তাবনাও পাশ হয়ে গিয়েছে। তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এহেন সম্মুখ সমরে কেন নেমেছে অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্যগুলি?
সিএএ বিরোধী রেজোলইউশন পাশ করে থামছে না রাজ্যগুলি
সিএএ বিরোধী রেজোলইউশন পাশ করেই রাজ্যগুলি থেমে থাকছে না। সিএএকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আইন আখ্যা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেরল ও ছত্তিসগড় সরকার। কেরলের পিনরাই বিজয়ন ও পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দাবি করেছেন যে তারা তাদের রাজ্যে সিএএ লাগু হতে দেবে না।
ভবিষ্যতে কোন্দল আরও তীব্র হবে
এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক কোন্দল ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে চলেছে। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আহমদ প্যাটেল। রবিবার তিনি এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে পাঞ্জাবের পথ অনুসরণ করে এবার কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে নতুন এই আইনটির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আনা হতে পারে। কেরল, পাঞ্জাব ইতিমধ্যেই তাদের বিধানসভায় পাশ করিয়েছে সিএএ বিরোধী রেজোলিউশন। এবার সেই পথেই হাঁটতে পারে মহারাষ্ট্রও।
সংবিধানের ২৫৬ নম্বর ধারা
১২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি। আর এর সাথেই আইনে পরিণত হয় সেটি। তবে এরই মাঝে এই সিএএ তাঁরা মানবেন না বলে জানিয়েছিলেন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সংবিধানের ২৫৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী যদি কেন্দ্র এই বিলটি লাগু করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাহলে রাজ্যগুলির কাছে কোনও উপায় থাকবে না। তাঁদের এই আইন বলবৎ করতেই হবে। এটা সংবিধানের পরিকাঠামোগত পরিবর্তন। আর কোনও রাজ্য সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। তাঁদের সংবিধানের ভিতরে থেকেই কাজ করতে হবে। নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন করতে সব রাজ্য সরকারই বাধ্য।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যেতে পারে রাজ্য
তবে ২৫৬ নম্বর ধারা রাজ্যগুলির উপর চাপানো অত সহজ নয়। সেই ক্ষেত্রে রাজ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যেতে পারে। আর তাই নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে মামলা দায়ের করে কেরল সরকার। কেরল প্রথম রাজ্য যারা এই পদক্ষেপ নেয়। সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরেই এই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে জমা পড়েছিল ৬০টি পৃথক আবেদন। সেই আবেদনগুলির ভিত্তিতেই আজ এক যৌথ শুনানি হয় সুপ্রিমকোর্টে। তবে ১৮ ডিসেম্বরের সেই শুনানিতে এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে শীর্ষ আদালত।
কেরলে পাশ হয় রেজোলিউশন
আগের বছরের শেষ দিকে কেরল বিধানসভায় পাশ করা হয় সংশোধন আইন বিরোধী রেজলিউশন। সেখানে সিএএ বাতিলের দাবি করা হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ভুলে প্রস্তাব পাশ করিয়েছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। বিধানসভায় একমাত্র বিজেপি সদস্য প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিএএ নিয়ে প্রতিবাদী রাজ্যগুলিকে বাদ দিয়েই পদ্ধতিতে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ হলেও আইন নিয়ে বিরোধিতা
নতুন এই আইনের শর্ত, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়। বুধবার রাজ্যসভায় এটি পাশ হয় ১২৫-৮২ ব্যবধানে। তবে আইনটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করলেও এটিকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আখ্যা দিয়ে পথে নেমেছে বিরোধীরা।
বিজেপির পাশ থেকে সরে দাঁড়াল জেজেপি, হরিয়ানায় বিপাকে পড়বে না তো জোট সরকার