তৃণমূলের গোয়া-যাত্রায় বিজেপির জয় সহজ হয়েছে, কংগ্রেসকে হারিয়ে ‘বিকল্প’ হওয়ার ভাবনা
তৃণমূলের গোয়া-যাত্রায় বিজেপির জয় সহজ হয়েছে, কংগ্রেসকে হারিয়ে ‘বিকল্প’ হওয়ার ভাবনা
ত্রিপুরার পর গোয়াতেও তৃণমূল ব্যর্থ। ত্রিপুরাতেও তারা খাতা খুলতে পারেনি, গোয়াতেও পারল না। শুধু বিরোধী ভোট কেটে বিজেপির জয়ের পথ মসৃণ করে দিল। এখন তৃণমূল ফলাও করে প্রচার করছে, কংগ্রেস আবার ব্যর্থ। ফলে বিজেপিকে রুখতে বিকল্প এখন তারাই। তৃণমূলই পারে বিজেপিকে হারাতে, যা তারা করে দেখিয়েছে বাংলাতে।
তৃণমলের গোয়া ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলের গোয়া অভিযানও কি তাহলে ব্যর্থ হল? নাকি গোয়াতে তাদের কংগ্রেসের হারানোর অভিষন্ধি পূর্ণ হল? গোয়ায় ভোটে তৃণমূল যাদের সঙ্গে জোট করল, তারা আবার বিজেপির সঙ্গে জোট করে সরকার গড়তে চলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। গোয়ায় তৃণমূল ফউল ফোটাতে পারেনি। কোনও আসনই তারা দখল করতে পারেনি, তাই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
কংগ্রেসকে ভেঙে গোয়ায় পথ চলা শুরু
মাত্র তিন মাস আগে গোয়ায় পা দিয়েছিল তৃণমূল। হঠাৎ করে ভিনরাজ্যে বিস্তারের নেশায় ত্রিপুরার পর গোয়াকে পাখির চোখ করেছিল তৃণমূল। কংগ্রেসকে ভেঙে গোয়ায় পথ চলা শুরু হয়েছিল তাদের। গোয়ার দুবারের মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো-সহ একাধিক নেতা-নেত্রীকে ভাঙিয়ে এনে তৃণমূলের কলেবর বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তা ক্লিক করেনি।
জোটসঙ্গী চয়নে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তৃণমূলের এই অভিযান এক কথায়, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার শামিল। তৃণমূল গোয়ায় গিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপির। তারপর জোটসঙ্গী চয়নেও তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ মনে করছেন, পরিকল্পনা করেই এমজেপির সঙ্গে জোট করা হয়েছে। যাঁরা আসন জিতলেই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে তৃণমূলকে ছেড়ে। কেননা তৃণমূল সরাসরি বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারবে না।
তৃণমূলই বিজেপির বিকল্প, কংগ্রেস নয়
তৃণমূল গোয়ায় অভিযানে নেমে ফলাও করে বলেছিল, হয় তারা গোয়ার মাটিতে সরকার গড়বে। নতুবা তারা প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠবে। অর্থাৎ এই কথায় স্পষ্ট, তারা কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে ওঠার জন্যই অভিযান শুরু করেছিল। গোয়ায় মিশন শেষ করে এখন তৃণমূল প্রচার চালাচ্ছে, তারাই বিজেপির বিকল্প, কংগ্রেস নয়। কংগ্রেসের আর ক্ষমতা নেই বিজেপিকে হারানোর মতো।
কংগ্রেসের ব্যর্থতাকে পাথেয় করে বিকল্প হওয়ার উদ্যোগ
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বলার মতো কিছুই করতে পারেনি। পাঁচ রাজ্যেই তারা গোহারা হয়েছে। হাতছাড়া হয়ছে পাঞ্জাব। বাকি চার রাজ্যের একটিতেও বিজেপিকে হারাতে পারেনি। তৃণমূল তাই কংগ্রেসের ব্যর্থতাকে পাথেয় করে এবার জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্রে ফলাও করে লেখা হয়েছে সে কথা। লেখা হয়েছে, কংগ্রেস নয়, তারাই বিজেপির বিকল্প।
কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়ে বিজেপিকে সাহায্য
বৃহস্পতিবারের ভোটের ফল প্রকাশের পর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শুধু কংগ্রেস নয়, তৃণমূলও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে গোয়ায়। কংগ্রেস তবু শেয়ানে শেয়ানে লড়াই দিয়েছিল গোয়ায়। তৃণমূল খাতা খুলতে ব্যর্থ। অঙ্ক বলছে, কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে খানিকটা হলেও থাবা বসিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে তৃণমূল। এখন আবার তাদের জোটসঙ্গী বিজেপি সরকারকে সমর্থন করবে।
গোয়া নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের উপরও ক্ষোভ প্রকাশ
তৃণমূলে যেভাবে গোয়ায় ঝাঁপিয়েছিল, তা নিয়ে শুধু কংগ্রেস বা অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী দল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তা নয়, দলের অন্দরেও ক্ষোভ ছিল। অনেক ঘরোয়া নেতা এ কথা জানিয়েছেন ঘরোয়া আলোচনায়। গোয়ার প্রচারে অর্থ ঢালাকে অপচয় হিসেবেও বর্ণনা করেছিল অনেকে। এ ব্যাপারে অনেকে প্রশান্ত কিশোরের উপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল অনেকে।
গোয়ায় তৃণমূলের পদার্পণে বিজেপির যোগসাজোশ
গোয়ার প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছিলেন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গিয়েছিলেন। তাঁরা সরব হয়ছিলেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এমনকী এনসিপিকেও ভাঙিয়েছিলেন। তবে ভোট প্রচারে সেভাবে গুরুত্ব দেননি মুখ্যমন্ত্রী। ফলস্বরূপ গোয়ায় তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। শুধু এবারই নয়, ২০১২ সালেও গোয়ায় ব্যর্থ হয়েছিল তৃণমূল। এবার তাঁদের গোয়ায় পদার্পণের সঙ্গে বিজেপির যোগসাজোশ রয়েছে বলে মনে করেছে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ।
তৃণমূলের ভোট কাটুয়া রাজনীতিতে কংগ্রেসের হার
তৃণমূলের গোয়া-যাত্রা দিদি-মোদী বোঝাপড়ার অংশ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা। এখানে কংগ্রেসের ভোট কেটে আদতে বিজেপিরই সুবিধা করে দিয়েছে তৃণমূল। সাত-আটটি আসনে কংগ্রেস হেরেছে ৫০০-৬০০ ভোটের ব্যবধানে। তার ফলে বিজেপির জয় সহজ হয়ে গিয়েছে ওই রাজ্যে। কংগ্রেসের হারের জন্য তৃণমূলের এই ভোট কাটুয়া রাজনীতি বিশেষভাবে দায়ী।
কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না, দুয়ারে সরকার-পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের বিপুল সাফল্যের খতিয়ান দিলেন চন্দ্রিমা