নাগাল্যান্ডের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দেয়, এবার আফস্পা প্রত্যাহার করা উচিত বললেন ইরম চানু শর্মিলা
মানবাধিকার কর্মী ইরম শর্মিলা, যিনি উত্তর-পূর্বে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা এর বিরুদ্ধে ১৬ বছরের অনশনে ছিলেন, মনে করেন নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বেসামরিক লোকদের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড পর এবার অন্তত সবার চোখ খোলা উচিৎ৷ বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিৎ সবার সম্মতিতে।
আফস্পা মানবাধিকারের লঙ্ঘনের সমতুল্য!
তিনি আরও বলেন উত্তর-পূর্বে আফস্পা শুধুমাত্র একটি নিপীড়নমূলক প্রবিধানই নয় সঙ্গে এটি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘনের সমতুল্য৷ আফস্পা নিরাপত্তা বাহিনীকে যে কোনো জায়গায় অভিযান পরিচালনা করতে এবং পূর্বের পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়। উত্তর-পূর্বে, এটি আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর (ইম্ফল মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল এলাকা বাদে) এবং আসামের সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশের কিছু জেলায় বলবৎ রয়েছে। চানু বলেন, নাগাল্যান্ডের ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে কেন উত্তর-পূর্ব থেকে ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী আফস্পা প্রত্যাহার করা উচিত!
১৬ বছর অনশনে ছিলেন চানু!
ইরম শর্মিলা চানু, যিনি তার একটানা অনশন শেষ করেছিলেন ২০১৬ সালে। সে সময় পিটিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চানু বলেছিলেন, মানুষের জীবন এত সস্তা নয়। উত্তর-পূর্বের জনগণ আর কতকাল এর জন্য ভুগবে? বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে, আপনি জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারবেন না। বিদ্রোহ মোকাবিলার অন্যান্য উপায় রয়েছে।
নাগাল্যান্ডে কী হয়েছিল?
প্রসঙ্গত চলতি বছর, ৪ ডিসেম্বর এবং পরের দিন নাগাল্যান্ডের মোন জেলায় বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সৈন্য নিহত হয়। আফস্পা বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী চানু আরও বলেন, ১৯৫৮ এ আফস্পা আইনটি পাশ হওয়ার পরে এবং উত্তর-পূর্বে এর প্রয়োগের পরে, এটি কি বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জন করেছে? যদি তা না হয়, তাহলে এটিকে জনসাধারণের উপর চাপিয়ে কি লাভ?
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাও এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন!
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শর্মিলা আবারও বলেন, এবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি একসঙ্গে বসে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় হয়েছে। আফস্পা এর দিকে তাকান। সমালোচকরা মনে করেন যে আফস্পা সশস্ত্র বাহিনীকে দায়মুক্ত হয়ে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া সত্ত্বেও বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে উল্টে কখনও কখনও তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে পরিচালিত করেছে। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাও এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
উত্তর-পূর্বের লোকদের বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হতে হয়!
উত্তর-পূর্ব থেকে প্রত্যাহার করা হলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা জানতে চশর্মিলা নেতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন বিদ্রোহ মোকাবেলা করার অন্যান্য উপায় রয়েছে। ছত্তিশগড়ে, বেশ কয়েকটি মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাহলে কি সরকার সেখানেও আফস্পা জারি করেছে? উত্তর হল না। নিরাপত্তা বাহিনী সেই রাজ্যে এটি মোকাবিলা করছে, এবং তারা সফলও হয়েছে। একই নীতি উত্তর-পূর্বেও নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের লোকেদের দেশের অন্যান্য অংশে বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হতে হয় বলেও দাবি করেন শর্মিলা৷
আমি গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করি বললেন চানু!
প্রসঙ্গত
২০১৭
সালের
মণিপুর
বিধানসভা
নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করে
সফল
হননি
চানু৷
সংবাদমাধ্যমকে
তিনি
আরও
বলেন
আফস্পার
নামে
মানবাধিকারের
ব্যাপক
লঙ্ঘন
হয়।
আমরা
হয়রানি
এবং
অপমানিত
হই।
আপনাদের
মানসিকতা
পরিবর্তন
করতে
হবে
এবং
ভারতের
এই
অংশের
জনগণকে
আপনার
নিজের
মতো
আচরণ
করতে
দিতে
হবে।
মণিপুরের
আয়রন
লেডি
বুঝতে
পেরেছেন
যে
তার
দীর্ঘ
অনশন
তার
উদ্দেশ্য
অর্জন
করতে
পারেনি।
তিনি
বলেন,
আমার
সমস্ত
জীবন,
আমি
গান্ধীর
অহিংসা
নীতিতে
বিশ্বাস
করেছি।
আমার
অনশন
ছিল
আমার
প্রতিবাদ
নথিভুক্ত
করার
এবং
জনগণের
দাবিতে
তুলে
ধরার
একটি
অহিংস
উপায়।
কিন্তু
১৬
বছর
পর,
যখন
আমি
আমার
অনশন
শেষ
করি,
তখন
অনেক
লোক
আমাকে
ভুল
বুঝেছিল।
শর্মিলা
জানান
যে,
সশস্ত্র
বাহিনীর
বিরুদ্ধে
তাঁর
কিছুই
বলার
নেই,
তবে
রাজনীতি
এবং
রাজনৈতিক
দলগুলি
উত্তর-পূর্বের
জনগণকে
বঞ্চিত
করেই
চলেছে৷
তিনি
চিফ
অফ
ডিফেন্স
স্টাফ
বিপিন
রাওয়াতের
মৃত্যুতে
শোক
প্রকাশ
করে
বলেছেন,
তাঁর
মৃত্যু
সমগ্র
জাতির
জন্য
ক্ষতি।
রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস চান না চানু!
৪৯ বছর বয়সী মানবাধিকার কর্মী চানু, যিনি ২০১৭ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং এখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ অংশে স্থায়ী হয়েছেন তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তিনি রাজনীতিতে আরও একবার চেষ্টা করতে আগ্রহী নন।