হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারত, হাজার হাতের কালী খুশি হন ধোসা, ইডলি , সম্বরে
২০১৭ সালের দূর্গাপুজোয় দেশপ্রিয় পার্কের থিম ছিল হাজার হাতের দূর্গা। এ কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। বড় দূর্গার পর হাজার হাতের দূর্গা দেখতে ভিড় কম হয়নি। হাজার হাতের দূর্গা নিয়ে মাতামাতি হলেও অনেকেই জানেন না হাজার হাতের কালীর কথা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হাওড়া জেলায় কিন্তু বিখ্যাত হাজার হাতের কালীর কথা। কোনও ক্লাব নয়, হাওড়ার শিবপুরের ওলাবিবিতলায় হাজার হাতের কালীর মন্দির শতবর্ষ প্রাচীন। দক্ষিণ ভারতেও এই কালীমূর্তির মহিমা কম বিখ্যাত নয়।
মন্দিরের ইতিহাসের সূত্রপাত ১৮৮০ সালে। কথিত আছে, শিবপুরের ওলাবিবিতলায় মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির ছেলে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে কালীর ওই রূপ দেখতে পান তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময়ে দেবী দূর্গা অনেকগুলি রূপ ধারণ করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল তাঁর হাজার হাতের অবতার।
আশুতোষ
মুখোপাধ্যায়
স্বপ্নাদেশ
তো
পেলেন,
কিন্তু
সেই
সময়
তাঁর
মন্দির
নির্মাণ
করে
হাজার
হাত
কালী
রূপে
মা
চণ্ডীকে
প্রতিষ্ঠা
করার
মত
সামর্থ্য
ছিল
না।
কিন্তু
কোনও
এক
অজানা
কারণেই
সেসময়ে
মন্দির
নির্মাণে
এগিয়ে
আসে
স্থানীয়
একটি
পরিবার।
স্থানীয়
বাসিন্দারাও
মন্দির
নির্মাণে
উঠে
পড়ে
লাগেন।
এভাবেই
বুদ্ধ
পূর্ণিমার
দিন
প্রতিষ্ঠিত
হয়
হাজার
হাত
কালী
মন্দির।
এই
কালী
মন্দির
হলেও
এখানে
বলির
প্রথা
কোনও
দিনই
ছিল
না।
বছরে
দুদিন,
অর্থাৎ
বুদ্ধ
পূর্ণিমায়
প্রতিষ্ঠা
দিবস
ও
কালীপুজোর
দিন
এই
মন্দিরের
জাঁকজমক
থাকে
সেই
আগের
মতই।
আশুতোষ
মুখোপাধ্যায়ের
পরিবারই
বংশানুক্রমে
এই
মন্দিরের
সেবায়েতের
কাজ
করে।
প্রবেশদ্বারে বাংলা, হিন্দি ছাড়াও যে তামিল ভাষায় লেখা মন্দিরের নাম।দক্ষিন ভারতেও এই কালীমূর্তির মহিমা অপার। কুমারটুলির প্রিয়নাথ পাল বিগ্রহের রূপদান করেন।দেবী নীলবর্ণা,তাঁর জিভ বাইরে বের করা নয়,তাঁর বাহন সিংহ। বিশালাকার দেবী বিগ্রহটির এক হাজার হাত বর্তমান দেবীর বাম পা অবস্থান করছে সিংহের ওপর। ডান পা রয়েছে পদ্ম। পদ্ম বিশ্বচরাচরের প্রতীক। পদ্ম জন্ম নেয় জলাশয় এর মাটিতে। জলের মধ্যে থাকে তার বৃন্তের অংশ। ফুল বিকশিত হয় জলের ওপরে, অর্থাৎ বাতাসে। অর্থাৎ জল,স্থল ও শূন্যে এই তিনটি স্থানের মধ্যেই পদ্ম ফুটে ওঠে, দেবীও একইভাবে জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে বিরাজমান। সেজন্য তাঁর মূর্তির ডান পা পদ্মের ওপরে বাম পা সিংহের ওপরে। সিংহ হলো শিবের প্রতীক।
এখানে দেবী মূর্তিটি তৈরি হয়েছে চুন-সুরকি দিয়ে।প্রথমে ৯৯৮টি হাত দেওয়ালে আঁকা ছিল,পরে সেগুলি মাটি দিয়ে তৈরি করেন প্রিয়নাথ পাল । কিন্তু সেগুলিও পরে ফেটে ভেঙে যাওয়ায় একইভাবে সেগুলিকেও চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে,নিয়ম রক্ষায় মেশানো হয়েছে মাটি-খড় ও তুষ। কথিত আছে, মায়ের হাজার হাত গোনা যায় না। মায়ের অস্ত্র ও মুকুট তৈরি হয়েছে ১১-১২ কেজি রুপোয়।দেবীর মাথায় যে ছাতাটি রয়েছে সেটিও রুপোর।শ্রাবণমাসের শুক্লপক্ষের শেষ শুক্রবারে এই দেবীর পুজো করেন কলকাতার দক্ষিণ ভারতীয়রা।
খেলার ছলে এই গ্রামে শুরু হয়েছিল কালীপুজো, তাতেই এখন অভিনব ভাবনার ছোঁয়া