ক্ষয়ে যাচ্ছে সাদা পাথর, রং বদলে তাজ মহল কালো হচ্ছে ক্রমশ
হেঁয়ালি থাক। বায়ুদূষণের জেরে ক্রমশ কালো রং ধারণ করছে তাজ মহল। কোথাও আবার সাদা মার্বেল পাথরের ওপর পড়েছে গাঢ় বাদামি ছোপ। আমেরিকার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা টানা আট মাস গবেষণা চালানোর পর জানিয়ে দিয়েছেন, বায়ুদূষণই শেষ করে দিচ্ছে তাজ মহলকে। ক্রমশ এর শ্বেতশুভ্র রং বদলে যাবে কালোতে।
দেশের এই ভুবনমোহিনী সৌধকে বরাবর অবহেলাই করে এসেছে ভারত সরকার কিংবা দেশের মানুষ। শুধু লক্ষ্য ছিল কী করে বিদেশি পর্যটকদের থেকে শুধু কাঁড়িকাঁড়ি ডলার কামানো যায়! ঔদাসীন্যের জেরেই তাজ মহলের পাশে স্বাধীনতার পর থেকে গজিয়ে উঠতে শুরু করেছিল একের পর এক কারখানা। সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকেই সেই কারখানার ধোঁয়ায় তাজ মহলের সাদা পাথরে ছোপ পড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে তা ঘষা-মাজা করলে উঠে যেত। ক্রমশ হলুদ ছোপ কামড়ে বসে যেতে থাকে পাথরের ওপর। তাজ মহলের চূড়া, গম্বুজগুলির ওপর হলদে ছাপ দগদগে হয়ে ওঠে।
প্রশাসনের গড়িমসির জেরে ১৯৮৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এম সি মেহতা ওই মামলাটি রুজু করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, তাজ মহলের আশপাশে অন্তত ৫১২টি কারখানা রয়েছে। এদের ধোঁয়া শেষ করে দিচ্ছে মর্মর সৌধটিকে। তাই আদালত হস্তক্ষেপ করুক। ১৯৯৩ সালে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ২১২টি কারখানা ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়। আরও ৩০০টি কারখানা দূষণ-নিরোধক যন্ত্র বসাতে বাধ্য হয়। এমনকী, আগ্রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দূষণ-নিরোধক যন্ত্র না বসানোয় তাদের কাজও বন্ধ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তাতে তাজ মহলের ক্ষতি পুরোপুরি রোধ করা যায়নি, বিলম্বিত করা গিয়েছে মাত্র।
১৯৯৩ সালে তাজ মহলের আশপাশে ২১২টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট
মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় বছর দশেক আগে তাজ মহলের একদম পিছনে যমুনার ওপর একটি শপিং মল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পর্যটনের 'বিকাশ' ঘটাতে তাঁর এই উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সুপ্রিম কোর্টই। বেঁচে গিয়েছিল তাজ মহলের মূল কাঠামো।
এদিকে, জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন। সম্প্রতি তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, বায়ুদূষণই তাজ মহলের সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। আগ্রা শহরে এত গাড়ি চলে যে, তার ধোঁয়া ক্ষতি করছে এই মর্মর সৌধের। পাশাপাশি, আগ্রা থেকে অনেকটা দূরে যে কারখানাগুলি রয়েছে, তাদের বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে যাচ্ছে। সেই ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ক্ষয় ধরাচ্ছে তাজ মহলের পাথরে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ক্ষয় ধরা পাথর সরিয়ে সস্তার মার্বেল পাথর লাগাচ্ছে। তা কিছুদিন পরই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, আগ্রা শহরে রাস্তার ধারে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ বর্জ্য থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে, তাও তাজ মহলের ক্ষতি করছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই গবেষণায়।
জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দাবিকে সমর্থন করেছে কানপুর আইআইটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও উক্ত রিপোর্টকে সমর্থন করেছেন।
পঞ্চম মুঘল বাদশাহ শাহজাহাঁ তাঁর বেগম মমতাজ মহলের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে তাজ মহল তৈরি করান। ১৬৩২ সালে কাজ শুরু হয় আর শেষ হয় ১৬৫৪ সালে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজ মহলকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' মর্যাদা দেয়। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বিদেশি পর্যটকদের থেকে সারা বছর যে পরিমাণ অর্থ আয় হয় তাজ মহল দেখিয়ে, তার তুলনায় খুব কমই খরচ করা হয় এর রক্ষণাবেক্ষণে।