দিনমজুরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, উদ্বেগজনক রিপোর্ট NCRB-র
দৈনিক মজুরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, উদ্বেগজনক রিপোর্ট NCRB-র
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) সর্বশেষ রিপোর্ট ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টের বেশ কিছু অংশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একদিকে যেখানে সেই রিপোর্টে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, ঠিক সেখানেই বলা হয়েছে, এই আত্মহত্যার শিকারদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হল দৈনিক মজুর (Daily Wagers)।
বেড়েছে আত্মহত্যার হার
২০২১-এ প্রতি একলক্ষ জনসংখ্যায় ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এই রেকর্ড এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই রিপোর্ট থেকে অনুমান, গতবছর কোভিড মহামারী দেশে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। কোভিড পরিস্থিতিতে সব থেকে খারাপ সময় গিয়েছে গরিবদের। দৈনিক মজুররা আর্থিকভাবে সমাজের সর্বশেষস্তরে রয়েছে।
আত্মহত্যার শিকারদের ৪ জনের ১ জন দৈনিক মজুর
২০২১-এ আত্মহত্যার শিকার হয়েছিলেন ১.৬৪ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে প্রতি চারজনের একজন হল দৈনিক মজুর। তাঁদের আত্মহত্যার দড় জাতীয় গড়ের থেকে দ্রুত বেড়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে দৈনিক মজুরদের মধ্যে আত্মহত্যার শিকার হয়েছিলেন ১৫,৭৩৫ জন, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৭,৬৬৬ এবং ২০২১ সালে ৪২,০০৪ জন। আর্থিক বঞ্চনা, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা এবং হতাশা বোধের কারণে এই আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি বলেই মনে করেছেন বিশ্লেষকরা।
শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশই দৈনিক মজুর
দেশে বেশিরভাগ দৈনিক মজুররাই অংসগঠিত ক্ষেত্রের। আর শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশই দৈনিক মজুর। তাদের সুরক্ষার জন্য যে আইন কিংবা সরকারি নীতি রয়েছে, তা বেশিরভাগ সময়ে কার্যকরী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনেকেই কাজ খুঁজে পান না। আর কাজ খুঁজে পেলেও তাঁরা ন্যূনতম মজুরি পান না। কোভিড লকডাউনের সময় দৈনিক মজুরদের দুর্বলতাগুলির আর প্রকট হয়ে পড়ে। সবার সামনে আসে। সেই কারণে ২০২১-এ আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বৃদ্ধিকে মহামারীর সঙ্গে যুক্ত আর্থিক ও সামাডিক প্রভাবের ফল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাননি বহু পরিবার
দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট রাজ্যগুলিতে দৈনিক মজুরদের জন্য সহায়তা ও কল্যাণ প্কল্প চালু করেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা এইসব মানুষ কিংবা তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে শুধু করোনা মহামারীকেই দায়ী করলে হবে না, মহামারীর আগে থেকেই দৈনিক মজুরির সংকট আরও খারাপ হতে শুরু করেছিল। কেননা এনসিআরবির ২০১৪ সালের রিপোর্ট থেকে দেখা গিয়েছে আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা। এখানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তটি ব্যক্তিগত হলেও, সেখানে আর্থিক বঞ্চনা, পারিবারিক কিংবা সামাজিক ব্যবস্থার কথাও বারে বারে উঠে এসেছে। এই রিপোর্টের ওপরে ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি বিষয়টির ওপরে কতটা নজর দেয়, এখন সেটাই দেখার।