সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে কড়া নির্দেশিকা, বিধি লঙ্ঘনে সরকার ভারতে নিষিদ্ধ করতে পারে হোয়াটসঅ্যাপকে
বৃহস্পতিবার ভারত সরকার সমস্ত নতুন তথ্য প্রযুক্তি বিধি ২০২১ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নির্দেশিকা এবং একটি ডিজিটাল মিডিয়া নীতির কোড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও এই নতুন নিয়মগুলি বাস্তবায়িত হতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে সরকার এইসব মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে। এর অর্থ হল হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য যে প্ল্যাটফর্মগুলি মেসেজর জন্য এন্ড–টু–এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে তাদের সরকারের নতুন নিয়ম মেনে চলতে হতে পারে।

সরকারের নতুন বিধিকে স্বাগত ফেসবুকের
নতুন তথ্য প্রযুক্তি বিধি ২০২১ ঘোষণা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এবং রবি শঙ্কর প্রসাদ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন যে যদি কোনও টুইট বা মেসেজ ভারতে উৎপত্তি না হয়, তবে ওই অ্যাপকে অবশ্যই সরকারকে জানাতে হবে ভারতে কে প্রথম তা পেয়েছে। ফেসবুকের এক মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজকের দিনে ইন্টারনেটের কঠিনতম চ্যালেঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সবসময়ই নতুন নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে পরিস্কার থাকতে চাই। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে মানুষ যাতে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরাপদে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারে তার জন্য ফেসবুক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রসঙ্গে নতুন নিয়ম, যা পঞরকাশিত হয়েছে এবং আমরা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আমরা দেশে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমের ইতিবাচক অবদানের জন্য মন্ত্রীর কাছ থেকে স্বীকৃতি স্বীকার করি এবং তাঁদের প্রশংসা করি। ফেসবুক ভারতের মিত্র এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার এজেন্ডা আমাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ভারতে ডিজিটাল পরিবর্তনের কাছে ফেসবুক আরও ভালো ভালো কাজ করে চলবে বলে নিশ্চিত করছে।'

কি কি আছে নতুন নির্দেশিকায়
বৃহস্পতিবার ঘোষিত হওয়া নতুন নির্দেশিকা ও নতুন বিধির আওতায় হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলি যুক্ত হবে। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ফেসবুক বা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিতর্কিত পোস্ট যত শীঘ্র সম্ভব তা মুছে ফেলতে হবে। এরও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আইনি বা সরকারি নির্দেশ আসার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই সেই পোস্ট ডিলিট করতে হবে। এমনকি বিতর্কিত পোস্ট নিয়ে তদন্ত হলে ফেসবুক বা টুইটারের মতো সংস্থাগুলিকে সেই তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। সরকার পক্ষ থেকে তদন্তে সহায়তা করার অনুরোধ আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই সংস্থাগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিতর্কিত বা ক্ষতিকর বিষয় পোস্ট হলে, সেই পোস্টের মূল উৎস কী তা খুঁজে বের করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মকেই। সেই পোস্ট মুছে ফেলতে হবে। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা শিশুদের যৌন হেনস্থার মতো বিষয় পোস্ট করা হলে তার শাস্তি পাঁচ বছরের কম নয়। ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কখনই কোনও আপোস করবে না সরকার তা স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দরকার পড়লে নিষিদ্ধ হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদকে প্রশ্ন করা হয় যে সরকারের তথ্যগুলির জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনগুলির এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ভাঙার প্রয়োজন হবে কি? মন্ত্রী উত্তরে জানান যে সরকার কেবল সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইছে যিনি মেসেজটি উৎপন্ন করেছেন, মেসেজটিকে নয়। তবে এটি প্রথমবার নয় যেখানে কোনও পরিস্থিতি দেখা দিলে মেসেজটির উৎস সনাক্ত করতে না পারায় তাদের অবস্থানের জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপগুলিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এবার দেখার বিষয় এটি সরকারের নতুন নিয়মের সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে চলতে পারে কিনা হোয়াটসঅ্যাপ। যদি কোনও কিছু ভুলদিকে চালিত হয়, তবে হয়ত সরকার ভারতে হোয়াটসঅ্যাপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিতেও পিছুপা হবে না।

কেন্দ্রের এই উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে কারণ
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি টুইটারে কৃষক আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন পোস্টের পরেই আরও নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। এছাড়া ওয়েব সিরিজ তাণ্ডব ও মির্জাপুরের বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ ওঠে। তার পর থেকেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উপরেও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ আনার কথা শোনা যাচ্ছিল।
লাদাখের প্যানগংয়ে চিনকে জবাবি স্ট্র্যাটেজির নেপথ্যে কি অজিত ডোভাল! চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে