বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে কতটা মিলল নির্বাচনের আসল ফল, রাজ্য ধরে বিশ্লেষণ দেখুন
১১ ডিসেম্বর ঘোষিত হয়েছে ৫ রাজ্যের নির্বাচনী ফল। জনতা জনার্দনের রায়ে দেখা গিয়েছে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের জয় হয়েছে। বাকি দুই রাজ্যেও যে বিজেপি-র ফল যে খুব ভাল এমনটা বলা যাচ্ছে না।
১১ ডিসেম্বর ঘোষিত হয়েছে ৫ রাজ্যের নির্বাচনী ফল। জনতা জনার্দনের রায়ে দেখা গিয়েছে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের জয় হয়েছে। বাকি দুই রাজ্যেও যে বিজেপি-র ফল যে খুব ভাল এমনটা বলা যাচ্ছে না। বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি-র বিপর্যয়ের অঙ্কটা দেখানোও হয়েছিল। কিন্তু, মোদী ম্যাজিক শেষমেশ হিন্দি বলয়ে বিজেপি-কে তিন রাজ্যে জয় এনে দেবে বলেই বহু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ-র মত ছিল।
গণনার ফল সামনে আসতেই সকলেই অবাক। কারণ, বুথ ফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেসের দিকে পাল্লা ভারি বলে ছবিটা তুলে ধরা হয়েছিল তা ফলে গিয়েছে। মিজোরমে যে কংগ্রেস ক্ষমতা হারাচ্ছে সেটাও দেখানো হয়েছিল। তবে, বুথ ফেরত সমীক্ষায় মিজোরমে কংগ্রেসের ঝুলিতে যত সংখ্যক আসন দেখানো হয়েছিল ততটা ফলেনি। একনজরে রাজ্য ধরে দেখে নেওয়া যাক বুথ ফেরত সমীক্ষা এবং গণনার প্রকৃত ফলের তারতম্যটা।
মধ্যপ্রদেশ
এই রাজ্যে মোট ২৩০ টি বিধানসভা। এই আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১১৪টি আসন। বিজেপি-র ঝুলিতে গিয়েছে ১০৯টি আসন। অন্যান্যদের ঝুলিতে রয়েছে ৭টি আসন। বুথ ফেরত সমীক্ষায় এই রাজ্যের ফল ঘোষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে টাইমস নাও -সিএনএক্স। তারা বলেছিল মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ৮৯টি আসন পেতে পারে। আর বিজেপি-র ঝুলিতে যেতে পারে ১২৬টি আসন। অন্য়ান্যরাও ১৫টা আসন পেতে পারে। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তবে, বাকি যারা বুথ ফেরত সমীক্ষা করেছিলেন তাদের ফল একদম নির্ভুল না হলেও প্রকৃত ফলের আশপাশএই ঘোরাফেরা করেছে।
ছত্তিশগড়
এই রাজ্যে ৯০ টি বিধানসভা আসন। ১৫ বছর ধরে এইখানে বিজেপি-র সরকার। ডক্টর রমন সিং মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু, কোথাও যেন একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া জারি ছিল। বিজেপি অবশ্য এসব ধর্তব্যের মধ্যেই অনেনি। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল পচা শামুকে পা-কাটার মতোই ক্ষমতাচূত্য হতে হল বিজেপি-কে। ছত্তিশগড়ে ভোটে জয় পাওয়াটা কংগ্রেসের কাছে দীপাবলির উপহার বলেই অনেকে মনে করছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মতে, ছত্তিশগড়-এ সরকার যথেষ্টই ভালো কাজ করেছে। সাধারণ মানুষের সমর্থন না পাওয়ার জন্য একই সরকারকে বারবার দেখার একটা একঘেয়েমিকতা কাজ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন। জেটলির মতো এমনই মনোভাব দেখা গিয়েছিল বেশকিছু বুথ ফেরত সমীক্ষায়। শুধুমাত্র ইন্ডিয়া টুডে-অ্য়াক্সিস, নিউজ নেশন এবং টুডে'স চাণক্য ছত্তিশগঢ়ে কংগ্রেসের প্রথম দল হিসাবে উঠে আসার বিষয়ের ভবিষ্যৎবাণী করেছিল। বাকি বুথ ফেরত সমীক্ষায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরা হলেও যে এখানে বিজেপি ধরাশায়ী হচ্ছে তা দেখানো হয়নি।
রাজস্থান
২০০টি বিধানসভা আসন থাকলেও এখানে এবার ভোট হয়েছে ১৯৯টি আসনে। টুডে'স চাণক্য ছাড়া সব বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই রাজস্থানে কংগ্রেসের জয়ের কথা বলা হয়েছিল। বুথ ফেরত সমীক্ষার সম্ভাবনা -কে বাস্তবায়িত করেছে এই রাজ্যের নির্বাচনী ফল। গণনার শেষে দেখা গিয়েছএ বিজেপি-র ঝুলিতে রয়েছে ৯৯টি আসন। অন্যদিকে বিজেপি-র দখলে রয়েছে ৭৩টি আসন। অন্যান্য দলের ঝুলিতে গিয়েছে ২৭টি আসন।
তেলেঙ্গানা
বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখানো হয়েছিল কীভাবে এই রাজ্যে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি-র রাজত্ব-ই কায়েম থাকছে। অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই টিআরএস-কে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। কংগ্রেস তেলেগু দেশন পার্টির মহাজোটকে দ্বিতীয় স্থানে ভালো সংখ্যক আসন নিয়ে থাকার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। প্রকৃত ফলে দেখা গিয়েছে ১১৯ আসনের বিধানসভায় টিআরএস একাই ৮৮টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস ও টিডিপি-র মহাজোট পেয়েছে মাত্র ২১টি আসন।
মিজোরম
এই রাজ্যটি কংগ্রেসের পুরনো ঘাঁটি। এখানে কংগ্রেস-ই সরকার তৈরি করে এসেছে। কিন্তু, এবার কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও স্থানীয় দলের জোট হয়নি। ফলে এমএনএফ আলাদাভাবেই লড়াই করে। বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও স্পষ্ট ছিল যে মিজোরম এবার কংগ্রেসের হাতছাড়া হচ্ছে। ভোট গণনার প্রকৃত ফল সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে মিজোরম কংগ্রেসের শুধু হাতছাড়া হয়নি, সেইসঙ্গে আসনের সংখ্যা ১০-এর নিচে নেমে গিয়েছে।