মান্দসৌরের কৃষক সমাবেশ থেকেই মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনী প্রচার শুরু রাহুলের, দিলেন গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি
মান্দসৌরে রাহুল গান্ধী বলেছেন, মধ্য প্রদেশে ক্ষমতায় আসালে কংগ্রেস ১০ দিনে কৃষকদের ঋণ মকুব করবে।
মান্দসৌরে কৃষি-শহিদদের স্মরণের মঞ্চ থেকেই মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার প্রচার শুরু করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কৃষকদের সমাবেশে তিনি বলেন. এবার যদি মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, তাহলে ১০ দিনের মধ্যে কৃষকদের ঋণ মকুব করা হবে। এছাড়াও আরও একগুচ্ছ কৃষি-বান্ধব প্রতিশ্রুতি মিলেছে তাঁর মুখ থেকে।
এক বছর আগে এই ৬ জুন তারিখেই মধ্যপ্রদেশের মান্দসৌরে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর পুলিশ গুলি চালানোয় মৃত্যু হয়েছিল ৬ জনের। সেই মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণ করতে এদিন মান্দসৌরে আসেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। পিপলিয়া মাণ্ডিতে এক কৃষক সমাবেশে যোগ দেন তিনি। নিহত ছয় কৃষক শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সভায় শহিদ ৬ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিবার উপস্থিত ছিল। তাঁদের মঞ্চে ডেকে নেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতিকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। রাহুল তাঁদের স্বান্তনা দেন।
Congress President @RahulGandhi meets the families of the farmers martyred in the police firing in #Mandsaur last year. #JusticeForFarmers pic.twitter.com/EqLhRimbQr
— Congress (@INCIndia) June 6, 2018
এরপর বলতে উঠে কৃষকদের জন্য একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, 'এক বছর পরেও, মান্দসৌরে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনার কোনও তদন্ত হয়নি। নিহত কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা এখনও সুবিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন'।
কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়েই মরতে হয়েছিল ওই কৃষকদের। ওই ঘটনার পরও কৃষি ঋণ মকুবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। রাহুল দাবি করেন, 'মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ১০ দিনের মধ্যে ঋণ মকুব করা হবে। আমাদের প্রধান কাজ ভারতের কৃষকদের রক্ষা করা। গত এক বছরে ১২০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।' রাহুলের অভিযোগ নরেন্দ্র মোদী তাঁর 'মেহুল ভাই'দের (মেহুল চৌকসি ও নীরব মোদী) ৩০ কোটি টাকা করে দিয়েছিলেন। এই টাকা যদি মধ্যপ্রদেশে দিতেন তাহলে আর কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হত না।
এরপরই কংগ্রেস সভাপতি আসেন কর্মসংস্থানের প্রশ্নে। তিনি বলেন নরেন্দ্র মোদী দেশের সবাইককে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তা পূরণ করেননি। রাহুলের দাবি কংগ্রেস মোদীর মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুকতিতে লোক ভোলাতে চায় না। তিনি বলেন, 'আমরা যা বলি তা করে দেখাই। ঋণ মকুব করবো বলেছি। তা করবই। তবে আপনাদের সাহায্য লাগবে।'
ঋণ মকুব ছাড়াও এদিন রাহুল কৃষকদের জন্য প্রতি জেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প গড়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি জানান, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে, প্রতিটি জেলা একটি করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়া হবে। প্রত্যেক কৃষক সরাসরি তাঁর উৎপাদন কারখানায় বিক্রি করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মান্দসৌরের রসুন চিনেও রপ্তানী করা হবে। মধ্য প্রদেশের কারোর জীবিকার অভাব থাকবে না। তিনি বলেন, 'আমার স্বপ্ন হল আজ থেকে ৫-৭ বছর পর 'মেড ইন মান্দসৌর' লেখা ফোনও বাজারে বিক্রি হবে। একাজ নরেন্দ্র মোদী ও শিবরাজ সিং-এর পক্ষে সম্ভব নয়। কমল নাথ ও সিন্ধিয়াই (জ্যোতিরিদিত্য সিন্ধিয়া) এটা করে দেখাতে পারেন।'
বিজেপি তথা মোদী সরকার কৃষকদের কথা ভাবেনই না বলেও অভিযোগ করেন রাহুল। তিনি বলেন, পুলিশ গুলিতে কৃষকদের মৃত্যুর পর মোদী বলেছিলেন, 'আমরা প্রতি পরিবারে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।' 'এভাবে কী দেশের কৃষকদের সাহায্য করা যায়?' - প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ মোদী সরকার আসলে তাদের কিছু বন্ধু বড়লোক ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে। তিনি বলেন, 'মনে রাখতে হবে, আমাদের মুখে খাওয়া তুলে দেয় কৃষক ও তাদের পরিবারেরা। ধনী ব্যবসায়ীরা নয়।'
এরপর শিবরাজ সিং-এর সরকারের সমালোচনা করে রাহুল দাবি করেন, মধ্যপ্রদেশের জনগণের জন্য সরকার কিছুই করেনি। তিনি সভা থেকে মধ্যপ্রদেশের সরকারর উদ্দেশ্য প্রশ্ন করেন, কৃষকদের জন্য কি করেছেন? জনস্বাস্থ্য ও জনকল্যাণের জন্য কি কিছু করেছেন? কেন এরাজ্যে শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে হল?
রাহুল গান্ধীর এই সমাবেশ 'মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিল বলাই বাহুল্য গত ১৫ বছর ধরে এরাজ্যে ক্ষমতা পায়নি কংগ্রেস। কৃষক ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে এবার সাফল্য আসে কিনা সেটাই দেখার। তবে সমাবেশে এদিন কৃষকদের ভিড় কংগ্রেসকে অবশ্যই অক্সিজেন দেবে। এরমধ্যে আবার কংগ্রেসে সভায় যোগ না দেওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন কৃষকদের একাংশ।