ঝুপড়ি ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে! আবাস যোজনার বিজ্ঞাপনে মোদীর সঙ্গে ছবি দেখে হতবাক বস্তির মহিলা
বহুকাল আগেই কবি শঙ্ক ঘোষ ঘোষ লিখেছিলেন 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ কবিতাটি। আজও তার রেশ দেখা বাঙালী জীবনের অলিতে গলিতে। এবার যেন আবাস যোজনার বিজ্ঞাপনেই ঢাকা পড়ল কলকাতার এক ঝুপড়িবাসী দিনদরিদ্র মহিলার অভাব অনটনের কথা। শুনতে খানিক অবাক লাগলেও ১৪ই ফেব্রুয়ারি ও ২৫শে ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রথমসারির বিভিন্ন সংবাদপত্রে একটি সরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। যা নিয়েই মাথাচাড়া দিয়েছে এই বিতর্ক।
সূত্রের খবর, ওই বিজ্ঞাপনটি ছিল আদপে কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার। যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৪৮ বছর বয়সী লক্ষ্মী নামে এক মহিলার ছবি প্রকাশিত হয়। এমনকী তাতে মহিলার একটি উক্তিও তুলে দেওয়া হয়। যাতে লেখা হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে নিজের ঘর পেয়েছেন তিনি। মাথার উপর ছাদ পেয়ে তিনি আজ আত্মনির্ভর। হিন্দি ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই প্রকাশিত হয় এই বিজ্ঞাপনটি।
শুধু তাই নয়, ওই বিজ্ঞাপনের কাট আউটে লেখা রয়েছে ওই মহিলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছেন আরও প্রায় ২৪ লক্ষ পরিবার। কেন্দ্রের উদ্যেগে তারা বর্তমানে প্রত্যেকেই প্রায় আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়েছেন। এদিকে সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের অন্তর্তদন্তে দেখা যাচ্ছে আদপে এই যোজনায় কোনও ঘরই পাননি ওই মহিলা। থাকেন ঝুপড়ির মধ্যে ৭০-৮০ বর্গফুটের একচিলতে ভাড়ার ঘর।
এমনকী এই প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে ওই মহিলা এও জানান তাদের আদি বাড়ি বিহারের ছাপরাতে। তাঁর স্বামী ২০০৯ সালে মারা যান। তারপর থেকেই একহাতে টানছেন সংসার। তখন থেকেই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আত্মনির্ভর তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর ঠিকে শ্রমিকের কাজ করে তিন ছেলেকে একা হাতে মানুষ করেছেন। ছোটবেলাতেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন তিনি। ৫০ বছর ধরে এখানেই রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ৫০০ টাকার ওই ভাড়ার ঘরে রাতে কেবল মেয়েরা থাকেন বলেও জানান লক্ষ্মী দেবী। ছেলেরা খোলা আকাশের নীচে কেউ ফুটপাথে, কেউ ভ্যানের উপর মশারি টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এমনকী অতীতে তো দূর, বর্তমানেও কোনও সরকারি প্রকল্পের আওয়াত কোনও ঘর পাননি তারা। কেনই বা তার ছবি ব্যবহার করে কেন্দ্রের তরফে এই প্রচার চালানো হল সেই উত্তর নেই তাদের কাছে। তবে লক্ষ্মী দেবীর সাফ বক্তব্য, মিথ্যাচার বন্ধ করুক সরকার। এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।