স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলি, হত ৫, তুতিকোরিনে দাঙ্গা
তুতিকোরিনে স্ট্রারলাইট-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালানোয় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনে মঙ্গলবার সকাল থেকে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন। পুলিশ স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনে গুলি চালালে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এরমধ্যে এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। এর জেরে তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী শহর থুদুকুড়ি (আগের নাম তুতিকোরিন)-তে উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে থাকে। কালেক্টরেট ঘেরাও থেকে পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। মুহূর্তের মধ্যে গোটা শহরে দাঙ্গা লেগে যায়।
স্টারলাইট কপার-এর কারখানার জেরে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আশপাশের গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন দুরারোগ্য ক্যানসারে। তাই স্টারলাইট কপারের ওই কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অংশ নিয়েছিলেন আশপাশের প্রায় ১৮টি গ্রামের মানুষ। এদিনই ছিল সেই আন্দোলনের শততম দিন। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে শহরের মধ্য দিয়ে মিছিল করে এসে কালেক্টরেটের সামনে অবস্থান করার কর্মসূচি নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
প্রথম থেকেই তাদের কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা মিছিল করে কালেক্টরেটের অফিস ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু ব্যর্থ হয়। কিন্তু সমস্ত প্রতিরোধ উড়িয়ে বন্যার জলের মতো প্রচুর মানুষ ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ প্রথমে বেদম লাঠিচার্জ করে। তাতেও কাজ না হওয়ায় আন্দোলনকারীদের উপর এলোপাথারি গুলি চালায় পুলিশ। গুলির আঘাতে অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কালেক্টরেট চত্ত্বরেই একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অনেকেই গুরুতর জখম হন। এদের মধ্যে ৪ জন পরে হাসপাতালে মারা যান।
এরপরই অবস্থা হাতের বাইরে চলে যায়। শহর জুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন কালেক্টরেটের সামনে। একাধিক পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন লাগানো হয় কালেক্টরের অফিস ভবনটিতেও। বাদ যায়নি স্টারলাইট কারখানার কর্মীদের আবাসগুলিও। স্টাফ কোয়ার্টার্সের আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়।
জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন প্রতিবাদীরা। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে স্ট্রাইকিং ফোর্স পাঠানো হয়েছিল পুলিশের তরফে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষিপ্ত আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় পুলিশও চরম মনোভাব নেয়। এমনকী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও পুলিশের হাত থেকে ছাড় পাননি। কালেক্টরেট চত্ত্বরের ভেতরেই সংবাদকর্মীদের ওপর লাঠি হাতে চড়াও হতে দেখা যায় পুলিশকে। জায়গায় জায়গায় হাঙ্গামা চালাতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে, এদিনের বিক্ষোভ প্রদর্শন নিয়ে সোমবার মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে। গত রবিবার কালেক্টরেট ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে এক বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের একাংশের নেতা জানিয়েছিলেন কালেক্টরেটের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নেওয়া হবে। এবার থেকে তারা একটি স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। কিন্তু আরেক অংশের আন্দোলনকারীরা এরপরই জানায় যাঁরা ওই বৈঠকে গিয়েছিলেন, তাঁদেরকে এই গণআন্দোলন থেকে বের করে দেওয়া হল।
১৯৯৭ সালে স্টারলাইট কপারের এই কারখানাটি স্থাপিত হয়েছিল। তার আগে থেকেই অবশ্য এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। কপার উৎপাদনের সময় সিসা, আর্সেনিক এবং সালফার অক্সাইডের মতো বিষাক্ত উপজাত উৎপন্ন হয়। এলাকার জল, মাটি এবং বায়ু দুষিত হয়। কারখানা স্থাপনের পর থেকেই আশপাশের গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যহানিও হতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ কারখানাটির এলাকা বাড়ানোর কথা ঘোষিত হতেই নতুন করে মাথা চাড়া দেয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। গত এপ্রিলে কমল হাসান থেকে শুরু করে তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
তবে অনেকেরই অভিযোগ, আন্দোলনটি একটি সঠিক কারণে শুরু হলেও এখন তা ছিনিয়ে নিয়েছে কিছু স্বার্থান্বেষী বহিরাগত। তাদের দাবি এখন আন্দোলননকারীদের উস্কানি দিচ্ছে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিদেশী শক্তি। তারা বলছেন জাল্লিকাট্টু বন্ধের প্রতিবাদের সময়ের আন্দোলনের কথা। তখনও একই ভাবে একটা সময়ের পর হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল আন্দোলন। যার পিছনে ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।