দলিত ভোটব্যাঙ্কের লড়াইয়ে যুযুধান দুই শরিক, বিহারে পাসওয়ান বনাম নীতীশ
দলিত ভোটব্যাঙ্কের লড়াইয়ে যুযুধান দুই শরিক, বিহারে পাসওয়ান বনাম নীতীশ
বিহারে বিধানসভা নির্বাচন কমিশনের দামামা বেজে গিয়েছে। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল প্রচার। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিহার নির্বাচনের আগে চর্চায় চলে এসেছেন বিজেপির জোট-দ্বন্দ্ব। রাজ্যের ক্ষমতাসীন এনডিএর মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে বিহার নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ বাড়ছে। বিজেপির বন্ধু পাসওয়ান অ্যান্ড সন বনাম জেডিইউ-মিত্র জিতেনরাম মাঝি তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত।
বিহারে দলিত রাজনীতি
বিহারে মোট ভোটের প্রায় ১৭ শতাংশ দলিত ভোটার রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, আরজেডি সভাপতি লালুপ্রসাদ সমস্ত নিপীড়িত মানুষের মুখ হিসেবে বিহার রাজনীতিতে নিজেকে কুলে ধরেছিলেন। কিন্তু লালুপ্রসাদ-রাবড়ি দেবী শাসনামলে বিহারে যাদবদের আধিপত্য বিহারের একটি দলিত রাজনৈতিক মানচিত্রকে সামনে তুলে করেছিল।
দলিত কার্ড নিয়ে লড়াই
সেই দলিতদের ধরেই উঠে এসেছিলেন রামবিলাস পাসওয়ান। দলিত কার্ড ব্যবহার করে রামবিলাস পাসওয়ান লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন রেকর্ড ব্যবধানে। লালুপ্রসাদ দলিত ভোটের ন্যায্য অংশ হারাতেই নীতীশ কুমার এবং রামবিলাস পাসওয়ান একই ভোট ব্যাংকের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেছিলেন।
নীতীশের মহাদলিত ভোটব্যাঙ্ক
২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পরে নীতীশ কুমার মহাদলিতদের নিয়ে 'নীচ' ভোট ব্যাংক তৈরি করেছিলেন। ২০১৮ সালে নীতীশ কুমারের সঙ্গে লালুপ্রসাদের বিচ্ছেদ এবং বিজেপির সাথে পুনর্মিলনের আগে পর্যন্ত তিনি পাসওয়ানদের মহাদলিতদের প্রায় ২০টি উপ-বর্ণের গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেননি।
নীতীশের প্রভাবে গুরুত্ব হ্রাস
দলিত ভোট ব্যাংকের উপরে নীতীশ কুমারের প্রভাব পাসওয়ানের নিজস্ব নির্বাচনী প্রভাব ক্ষয় হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল। তিনি এরপর বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন এবং ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে লাভ কুড়িয়েছিলেন। তবে ২০১৫ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে রামবিলাস পাসওয়ান খারাপ ফল করেছিল।
চালকের আসনে চিরাগ পাসওয়ান
রাজনৈতিক পরিস্থিতির তাপে এলজেপির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। গত বছরের নভেম্বর মাসে বিজেপির সাথে দলের জোট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে রামবিলাস-পুত্র চিরাগ পাসওয়ান এলজেপির সভাপতি পদে বসেন। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য চিরাগ পাসওয়ানকে সময় দেওয়ার জন্য এটি করেছিলেন এলজেপি সুপ্রিমো রামবিলাস।
‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ স্লোগান
বছরের শুরু থেকেই চিরাগ পাসওয়ান বিহার জুড়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। শাসনব্যবস্থা, দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন নিয়ে তিনি সমালোচনা করেছেন নিজেদের জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। করোনা মহামারীর মধ্যে তাঁর প্রচার কার্যক্রম হ্রাস হলেও, তিনি নিজেকে ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট' স্লোগান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে প্রজেক্টও করেন। অনেক সময় চিরাগ পাসওয়ান নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।
বাস্তব জটে নীতীশ বনাম চিরাগ
বিহারে নীতীশ কুমার বিগত ১৫ বছর রাজত্ব করছেন। বিহারকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। বিহারে এই মুহূর্তে তাঁর বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে চিরাগ পাসওয়ান যুবকদের কাছে পৌঁছেছেন, যাদের মধ্যে একটি বিশাল সংখ্যক প্রতি বছর কাজের জন্য ভিনরাজ্যে চলে যান এবং করোনা চলাকালীন তাঁরা ফিরে আসতে বাধ্য হন।
দলিত-মুসলিমের সংমিশ্রণ
এখন পাসওয়ান এবং নীতীশ কুমারের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছেন। এবং তা বিজেপির মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। এলজিপিতে দলিত-মুসলিমের সংমিশ্রণ নিয়ে এসেছেন চিরাগ। বাবা রামবিলাস পাসওয়ানের পরামর্শে ২০২০-এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন চিরাগ।
নীতিশ কুমারের কামব্যাক
বিজেপির সঙ্গে্ চিরাগ পাসওয়ানের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বন্টনে নীতীশ কুমারের কাছে বেশি আসনে লড়াইয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। জেডিউ বিজেপির সঙ্গে সম আসন ভাগাভাগির সূত্র রাখতে চায়। যেমনটি ২০১০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সময় হয়েছিল, তারা যখন একসাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
নীতীশের মোক্ষম চাল
বিজেপি যখন দাবি করছে, তাদের এলজেপিকে আসন ছাড়তে হবে। তখন সমতা ফেরাতে নীতীশ কুমার মোক্ষম চাল দিয়েছেন। তিনি বিজেপির সঙ্গে অবস্থান গত ভারসাম্য রক্ষার জন্য জিতেনরাম মাঝিকে নিয়ে এসেছেন সামনে। এখন বিজেপি এবং নীতীশ কুমারের দু'জনেরই নিজস্ব মিত্র শক্তি রয়েছে। ফলে সমবণ্টনে আসা আবশ্যক হয়ে গিয়েছে।
মমতার বাংলা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিল, মাথায় বিশ্বসেরার মুকুট রাষ্ট্রসংঘে
{quiz_339}