২০১৯-এর বার্তাবাহী ৯ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, একনজরে ফিরে দেখা ২০১৮
বছর শেষে একবার ফিরে দেখা। নয় নয় করে এবার ন’টি রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে অনেক রাজ্যে পালাবদল হয়েছে, অনেক রাজ্য রয়ে গিয়েছে একই সরকার।
দেখতে দেখতে আরও একটা বছর পার। সামনেই পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য তৈরি দেশ। তার আগে একবার ফিরে দেখা, দেশের রাজনৈতিক দিকে। নয় নয় করে এবার ন'টি রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে অনেক রাজ্যে পালাবদল হয়েছে, অনেক রাজ্য রয়ে গিয়েছে একই সরকার। নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে একবার দেখে নেওয়া কোন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ফল কেমন হয়েছে। সেই নিরিখে কোন রাজনৈতিক দিক ইঙ্গিত করছে ওই নির্বাচনী ফল।
ত্রিপুরা
বছরের শুরু হয়েছিল উক্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের নির্বাচন দিয়ে। তিন রাজ্যেই পালাবদল ঘটেছিল। তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল ত্রিপুরার পরিবর্তনষ ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই রাজ্যে শুরু হয়েছিল গেরুয়া শাসন। বিজেপি পেয়েছিল ৩৬টি আসন। আর বামেরা দখল করেছিল ১৬টি আসন। আইপিএফটি পেয়েছিল বাকি ৮টি আসন। ৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরার ক্ষমতা বদল হয়। মানিক সরকারকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব।
মেঘালয়
মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনেও এবার পালাবদল হয়েছে। কংগ্রেসের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে এনপিপি ও ইউডিপি জোটের হাতে। এই রাজ্যের নির্বাচনে কোনও দলই সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়। দুই ও তিন নম্বর দল জোট বেঁধে মেঘালয়ে সরকার গড়ে। বিজেপি পিছন থেকে মদত দেয় কংগ্রেসকে আটকাতে। ৬০ আসনের মেঘালয়ে কংগ্রেস পায় ২১টি, এনপিপি ১৯, ইউডিপি ৬ ও বিজেপি একটি আসন পায়।
নাগাল্যান্ড
নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনও এবার ত্রিশঙ্কু হয়। বৃহত্তম দল হলেও এনপিএফ ব্যর্থ হয় ক্ষমতা ধরে রাখতে। এনপিএফ ২৬টি আসনে জয়ী হয়। আর এনডিপিপি ১৮টি ও বিজেপি ১২টি আসন দখল করে। এনডিপিপির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ফলে এই রাজ্যেও পালাবদল ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী হন নেইফিউ রিও। কংগ্রেসে নাগাল্যান্ডে একটি আসনও জিততে পারেনি। এই রাজ্যে এনপিপি দুটি, জনতা দল ইউনাইডেট ও নির্দল একটি করে আসনে জয়ী হয়।
কর্ণাটক
কর্ণাটকের নির্বাচন ২০১৯-এর নিরিখে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাক ভোটে কোনও জোট না হলেও, ভোট পরবর্তী জোট গড়ে কংগ্রেস বিজেপিকে মোক্ষম আঘাত দেয়। এই রাজ্যে সরকার ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি কংগ্রেস। কংগ্রেস দখল করে ৮০টি আসন। বিজেপি ১০৪টি আসনে জিতে বৃহত্তম দল হয়। আর জেডিএস পায় ৩৭টি আসন। ২২৪টি আসনবিশিষ্ট কর্ণাটকে ১১৩ ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি কেউই। একপ্রস্থ নাটকের পর কংগ্রেস ও জেডিএস জোট সরকার গড়ে। মুখ্যমন্ত্রী হন জেডিএসের কুমারস্বামী।
মধ্যপ্রদেশ
বছরের একেবারে শেষে পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনের দিকে চোখ ছিল রাজনৈতিক মহলের। মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছর বিজেপি সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এল কংগ্রেস। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র দুটি আসন দূরে থেমে গেলেও শেষপর্যন্ত সপা-বসপার সমর্থনে সরকার গড়ে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন কমলনাথ। এই রাজ্যে মোট আসন ২৩০। কংগ্রেস পায় ১১৪টি, বিজেপি ১০৯টি। বসপা ২টি, সপা ১টি ও নির্দল ৪টি আসনে জয়ী হয়।
রাজস্থান
রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এল কংগ্রেস। এ রাজ্যে মোট আসন ২০০টি। নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯টি। তার মধ্যে কংগ্রেস পায় ৯৯টি আসন। এখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে একটি আসন কম ছিল কংগ্রেসে। মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি এ রাজ্যেও কংগ্রেসকে সমর্থনের বার্তা দেয়। বিজেপি আটকে যায় ৭৪টিতেই। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন অসোক গেহলট।
ছত্তিশগড়
ছত্তিশগড়েও এবার পালাবদল ঘটে। বিজেপিকে হারিয়ে ১৫ বছর পর সরকার গঠন করে কংগ্রেস। এই রাজ্যে ফের ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল বিজেপি। কিন্তু এই রাজ্যে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতে ক্ষমতায় ফেরে। পৃথক রাজ্য গঠন হওয়ার পর প্রথমবার নির্বাচন জিতল কংগ্রেস। ৯০ আসনের ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস পায় ৬৮টি আসন। বিজেপি থমকে যায় ১৬টিতেই। বিজেপিকে হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন ভূপেশ বাঘেল।
তেলেঙ্গানা
তেলেঙ্গানায় এবার আগাম নির্বাচন হল। আগেই বিধানসভা ভেঙে দিয়ে জুয়া খেলেছিলেনে মুখ্যমন্ত্রী কেসি রাও। সেই জুয়ায় জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় ক্ষমতা দখল করলেন তিনি। এই রাজ্যে ব্যর্থ কংগ্রেস ও টিডিপি জোট। টিআরএস এ রাজ্যে ৮৭টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ধরে রাখে। কংগ্রেস ও টিডিপি জোট থেমে য়ায় ১৯টিতেই। বিজেপি পায় মাত্র একটি আসন। ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন কে চন্দ্রশেখর রাও।
মিজোরাম
উত্তর-পূর্বের এই একমতা্র রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। এবারের নির্বাচনে সেই রাজ্যেও ক্ষমতা হারায়। কংগ্রেসকে হারিয়ে এ রাজ্যে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ৪০ আসনের এই রাজ্যে তারা ২৬টিতে জয়ী হয়। কংগ্রেস পায় ৫টি আসন। বিজেপি জেতে একটিতে, আটটি আসনে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। উল্লেখ্য কংগ্রেস গত নির্বাচনে একাই ৩৪টি আসন পেয়েছিল। এমএনএফ পেয়েছিল পাঁচটি। এবার উল্টে গেল ফল। মুখ্যমন্ত্রী হলেন জোরামথাঙ্গা।
ন-রাজ্যের নিরিখে
এবার নটি রাজের মধ্যে বিজেপির বড় সাফল্যে উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরায় বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল। আর কংগ্রেসের বড় সাফল্য বছরের শেষে এসে বিজেপির হাত থেকে বড় তিন রাজ্য কেড়ে নেওয়া। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের ক্ষমতা বদল ২০১৯-এর আগে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেইসঙ্গে কর্ণাটকে জোট সরকারও বিজেপিকে আটকানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সাফল্যই বলতে হবে। একইসঙ্গে বিজেপি উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তেলেঙ্গানা ও উত্তরপূর্বের কিছু ছোট রাজ্যে আঞ্চলিক দল দাপট দেখিয়েছে।