মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে সরকার গঠনের আহ্বানের পর নতুন চাল এনসিপির, কী করবে শিবসেনা?
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। আস্থা ভোটে আস্থা ভোটে যদি শিবসেনা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তবে সেনাকে সমর্থন জানাবে এনসিপি।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। কিন্তু সেই সরকার ক্ষণস্থায়ী হবে, না কি দীর্ঘস্থায়ী তা জানা যাবে বিধানসভার আস্থা ভোটে। আর সেই আস্থা ভোটে যদি শিবসেনা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তবে সেনাকে সমর্থন জানাবে এনসিপি। এমনটাই দাবি করলেন এনসিপির মুম্বই শাখার প্রধান নবাব মালিক। এনসিপির পক্ষ থেকে আসা এই মন্তব্যের পর আরও ঘোলাটে হল মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের ভবিষ্যৎ।
৮ নভেম্বর মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ। তবে সেনা-বিজেপির জোট সরকার গঠনের আবেদন জানায়নি রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির কাছে। তবে অচলাবস্থা কাটাতে নির্বাচনে উঠে আসা একক বৃহত্তম দল হিসাবে বিজেপিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানালেন রাজ্যাপাল। বিজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের দাবি জানালেও মারাঠাভূমে সরকার গঠনের কোনও সুস্পষ্ট দিশা মেলেনি এখনও। বিজেপিকে বিধআনসভায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। এরই মাঝে নতুন চাল এনসিপির।
নবাব মালিক এই বিষয়ে বলেন, "যদি বিজেপি সরকার গঠন হয় তবে এনসিপি বিধানসভায় তাদের বিরুদ্ধে ভওট দেবে। আমরা দেখব, যদি শিবসেনাও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তবে আমরা শিবসেনাকে সমর্থনের কথা ভাবব। শিবসেনার বিকল্প সরকারকে আমরা সমর্থন করতে পারি।"
পাশাপাশি রাজ্যপালের নিন্দা করেন মালিক। তিনি বলেন, "বিজেপিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে রাজ্যপাল যেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা তিনি আরও আগে করতে পারতেন। কিনিতু তিনি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত যে সরকার গঠনের জন্য বিজেপির কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। তবে এখন রাজ্যপালকে এই দিকে নজর দিতে হবে যাতে বিজেপি বিধআয়ক কেনা বেচা না করে।" পাশাপাশি তিনি জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ১২ নভেম্বর এনসিপির সকল ৫৪ জন বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে।
তবে এর আগে শরদ পাওয়ার শিব সেনার সঙ্গে সরকার গঠনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "আমি এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে শিব সেনার মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানানো নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মহারাষ্ট্রে আমাদের নিজেদের শরিক আছে। আমরা তাদেরকেই সমর্থন করব। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। মহারাষ্ট্রে আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোব।"
অবশ্য মালিকের এই বক্তব্যের বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রি দেওয়া হয়নি সেনর তরফে। তবে সেনা-বিজেপি সম্পর্ক যে তলানিতে তা এখন সবাই জানে। মহারাষ্ট্রের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস ইতিমধ্যেই একটি সাংবাদিক সম্মেলনে করে সেনা প্রধান উদ্ধভ ঠাকরেকে 'মিথ্যেবাদী' বলে কটাক্ষ করেন। অবশ্য গতকাল রামমন্দির নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায় ঘোষণার পর এই মুহূর্তে সরকার গঠন থেকে রামমন্দির নির্মাণের বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছে সেনা। শনিবার এই বিষয়ে উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন, "আগে অযোধ্যায় রাম মন্দির হবে, তারপর মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের বিষয়ে ভাবা যাবে।"
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন ২১ শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২৪ অক্টোবর ফলাফল ঘোষণা হয়েছিল। তবে, ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনও দল বা জোটই সরকার গঠন করতে এগিয়ে আসেনি। ২৮৮ সদস্যের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ১০৫ টি আসন নিয়ে বিজেপি এবং ৫৬ টি আসনে সেনা সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তবে দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে দায়িত্বে রেখে দ্বিতীয়বারের মেয়াদে নির্বিঘ্নে সরকার গড়তে বেগ পাচ্ছে বিজেপি। কারণ, তাঁদেরই জোটসঙ্গী শিবসেনা। এই বছরের শুরুর দিকে, মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনায় ফিফটি-ফিফটি সমীকরণের দাবি জানিয়েছিল শিবসেনা। সমান ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার দাবিতে এখনও অনড় রয়েছে তাঁরা। সেনার মতে, জোটের পরিকল্পনা ছিল প্রতিটি দলই মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য পাঁচ বছরের মেয়াদকে নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেবে।