হেরে গেলে চা বিক্রি করব, তবুও চুরি নয়, আমেঠিতে কংগ্রেসকে তোপ নরেন্দ্র মোদীর
সত্যিই এদিন আমেঠিতে যা দেখা গেল, তাতে কংগ্রেসের কপালে ভাঁজ পড়ারই কথা! বরাবর কংগ্রেসের দুর্গ। শুধু রাহুল গান্ধীই জিতেছেন পরপর দু'বার। এবারও তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী। এতদিন কংগ্রেস ছাড়া অন্য কেউ জনসভা করার ডাক দিলে মাছি তাড়ানো ছাড়া আর কাজ থাকত না! কিন্তু এদিন পিলপিলিয়ে লোক এসেছে। মাঠ ভর্তি হয়ে যাওয়ার আশপাশে গাছের ডালে উঠে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। এখানে রাহুল গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানি তাই প্রথম থেকেই ছিলেন সহাস্য মুখে। নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে উঠতে জনতার গুঞ্জন পরিণত হল গর্জনে। শুধু মোদী-মোদী আওয়াজ। বিজেপি নেতাদের শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল, এবার আমেঠিতে চুটকিতে জিতবেন না রাহুল গান্ধী!
নরেন্দ্র মোদী যখন 'মেরে ভাইয়োঁ অউর বেহনোঁ' বলে ভাষণ শুরু করলেন, তখন জনতার হর্ষোল্লাসে কান পাতা দায়। উল্লসিত নরেন্দ্র মোদী তাই বলতে শুরু করেন, "ঠান্ডা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পণ্ডিতরা দেখে যাক আজকের ছবি। রাহুল গান্ধীর জনসভা থাকলে মিডিয়া শুধু ওঁর দিকেই ক্যামেরা তাক করে রাখে। সভাস্থল দেখাবে কী, ২৫-৩০ জনের বেশি তো লোকই হয় না! আর আজকে আমাদের সভায় কত লোক, সেটা ভালো করে দেখাক মিডিয়া। সারা দেশ দেখুক, সারা দুনিয়া দেখুক, আমার নামে কংগ্রেস রোজ গালাগালি করলেও জনতা জনার্দন কতটা ভালোবাসে!"
তিনি বলেন, "আমি বদলার নয়, বদলের রাজনীতি করতে এসেছি। রাহুল গান্ধীর কষ্ট বাড়াতে স্মৃতি ইরানিকে এখানে প্রার্থী করা হয়নি। বরং আমেঠির কষ্ট কমাতে তাঁকে আনা হয়েছে। ৪০ বছর ধরে গান্ধী পরিবারের কাউকে না কাউকে আমেঠি জিতিয়ে এসেছে। তবুও জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই। এবার হিসাব নেওয়ার সময় এসেছে। মা-ব্যাটার সরকারকে তাড়াতেই হবে।"
কংগ্রেস গত ৬০ বছরে শুধু চুরি আর লুঠপাট করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, "দেশকে বাঁচাতে লুঠপাট বন্ধ করতে হবে। ৬০ বছরে শাসক বেছেছেন, এবার সেবক বাছুন। কংগ্রেস অবশ্য বলছে, হেরে গেলে কী হবে নরেন্দ্র মোদীর? জেনে রাখুন, যদি হেরেও যাই, আপনাদের মতো চুরি করে পেট ভরাব না। আমি আগে চা বিক্রি করতাম। এখন কেটলি, কাপ, উনুন সব রেডি করে রেখেছি। ভোটে হেরে গেলে আবার চা বিক্রি করব। কারণ আপনাদের মতো চোর নই। শুনে নিন, আমি এখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। তবুও আমার বৃদ্ধা মা, যাঁর ৯৬ বছর বয়স, তিনি অটো ভাড়া করে ভোট দিয়ে এসেছেন। এ সব রাজার পরিবারের লোকেরা ভাবতেও পারবেন না।"
"আমার মা অটো ভাড়া করে ভোট দিয়ে এসেছেন, রাজার পরিবার ভাবতেও পারবে না"
কিছুদিন আগে একটি জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, "নরেন্দ্র মোদী ক্রোধের রাজনীতি করেন। এটা ভুল কথা। আপনার বাবা রাজীব গান্ধী যখন কংগ্রেসের মহাসচিব ছিলেন, তখন একবার অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়েছিলেন। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আঞ্জাইয়া। উনি হয়তো কোনও একটা ছোট্ট ভুল করে ফেলেছিলেন। সেই কারণে রাজীব গান্ধী এয়ারপোর্টে সবার সামনে এত অপমান করেন যে, উনি কেঁদে ফেলেন। এতো গেল আপনার বাবার ক্রোধের রাজনীতি। এবার শুনুন আপনার মায়ের কিসসা। সীতারাম কেশরী তখন কংগ্রেসের সভাপতি। আমার মতো উনিও ছিলেন দলিত। তাই আপনার মায়ের ঘোর আপত্তি ছিল। উনি যখন দলের সভাপতি, তখন একদিন সন্ধেবেলা একদল লোক গিয়ে সীতারাম কেশরীকে চেয়ার থেকে জোর করে তুলে দিয়ে ধাক্কা মারতে মারতে কংগ্রেস অফিসের বাইরে বের করে দিয়েছিল। পি ভি নরসিমা রাও পর্যন্ত প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। সোনিয়া গান্ধী তাঁকে পেতে দেননি। এবার আপনার কথা বলি, শাহজাদা। দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীদের বাঁচাতে ইউপিএ ক্যাবিনেট একটা অর্ডিন্যান্স এনেছিল। যখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমেরিকায়, তখন আপনি একদিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাকে 'ননসেন্স' বলে ছিঁড়ে ফেললেন। এর পদ্ধতিগত দিক নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আপনার ন্যূনতম সম্মানটুকু দেখানো উচিত ছিল। আপনি রেগে গিয়ে সেটাও দেখাননি। তা হলে ক্রোধের রাজনীতি কে করে? কে ঘৃণাকে প্রশ্রয় দেয়? উত্তর হল, গান্ধী পরিবার।"
গান্ধী পরিবারের দুর্গ আমেঠিতে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর তোপ, "দশ বছর ধরে সোনিয়া গান্ধী ওঁর ছেলেকে তৈরি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য। এখন কোথা থেকে একজন চাওয়ালা এসে জুটল, সেটা ভেবেই ম্যাডামজি অস্থির। মায়ের মন বলে কথা! চোখের সামনে স্বপ্ন খানখান হচ্ছে। রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই আমাকে উনি গালাগালি দিচ্ছেন। দিন। অভিধানে যত গালাগালি আছে, দিয়ে দিন। আপনারা রাজার পরিবার। কিন্তু গণতন্ত্রে রাজকীয় ব্যাপারস্যাপার চলে না, এটা ভুলে গিয়েছেন বোধ হয়।"
আমেঠির সাধারণ মানুষের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, "স্মৃতি ইরানিকে জেতান। গান্ধী পরিবার এতদিন আপনাদের সঙ্গে যে অন্যায় করেছে, তার হিসাব বুঝে নিন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে আমি আবার আসব আমেঠিতে। আপনাদের জন্য কী কী করলাম, তার হিসাব বুঝিয়ে দিতে। গত দু'বার যাকে সাংসদ করে পাঠিয়েছিলেন, তিনি তো দশ বছরে লোকসভায় আমেঠির 'আ' পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি।"
এদিন জনসভা শেষে যখন হেলিকপ্টারে উঠছেন নরেন্দ্র মোদী, তখন তাঁকে দেখতে হুড়োহুড়ি চরমে। ৭ মে এখানে ভোট। তার আগে নিশ্চিতভাবেই রাহুল গান্ধী এবং আম আদমি পার্টির কুমার বিশ্বাসের কপালে ভাঁজ চওড়া হবে!