চিরাগ তোপে উল্টে যেতে পারে অনেক পুরনো হিসেব! একাই লড়ছে এলজেপি, আদৌও কী শক্ত হল নীতীশের মাটি?
বিহার ভোটের প্রাক্কালের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগে যাচ্ছেন লোক জনশক্তি পার্টি তথা এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসওয়ান। ইতিমধ্যেই তাঁর বাবা তথা সদ্য প্রয়াত রামবিলাস পাসওয়ানকে অপমানের অভিযোগে নীতীশকে কাঠগড়ায় তুলেছেন চিরাগ। পাশাপাশি নীতীশের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসন্ন নির্বাচনে এককী লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিরাগ। এমতাবস্থায় নীতীশ-চিরাগ দ্বন্দ্ব নিয়ে ক্রমেই জল্পনা বাড়ছে বিহারের রাজনৈতিক ময়দানে। এরফলে গত ৪০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে লালু-নীতীশ ও রামবিলাসের সমীকরণেও যে নতুন রঙ লাগতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
লালু-নীতীশ-রামবিলাসের বন্ধুত্ব ও শত্রুতার হাত ধরেই নির্ধারিত হয়েছে বিহারের ভবিষ্যত
আসন্ন বিহার নির্বাচনের প্রাক্কালে আরজেডি-জেডিইউ-এলজেপি-র রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় ঠিক কীভাবে বিহারবাসীর ভাগ্য নির্ধারণে প্রায় চার দশক ধরে বড় ভূমিকা রেখেছে এই তিন দল। কখনও জোট তো কখনও আবার বিরোধ। রাজনীতির পথে একসাথে হাঁটা শুরু হলেও লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমার ও রামবিলাসের বন্ধুত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও ঈর্ষাই ঠিক করছে বিহারের রাজনৈতিক গতিপথ। রাজনীতির ময়দানে জাতপাতের খেলাও কোথা যেন ক্রমেই প্রকট হয়েছে এই তিন বর্ষীয়ান রাজনীতিবদের হাত ধরে।
একনজরে আরজেডি-জেডিইউ-এলজেপি-র রাজনৈতিক ইতিহাস
এদিকে ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে লালুর মুখ্যমন্ত্রীত্বের পিছনেও বড় হাত ছিল সেই নীতীশ-রামবিলাস যুগলবন্দির। সেই সময়ের বিহারের রাজনৈতিক মঞ্চে ‘কিংমেকার' হিসাবেও সুখ্যাতি পেতে দেখা যায় নীতীশ-রামবিলাস জুটিকে। যদিও সেই ‘সুদিনও' বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুরোপুরি করায়াত্ব না করতে পারায় ক্রমেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে নীতীশ কুমার ও রামবিলাস পাসওয়ানের। যার ফলে আরও চওড়া হয় ‘বন্ধুত্বের' ফাটল। লালু মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে একযোগে প্রশ্ন তোলেন নীতীশ-রামবিলাস।যদিও রাম-নীতীশের সখ্যতাও বছর পাঁচেকের বেশি টেকেনি। ফলস্বরূপ নীতীশের হাত ধরে ১৯৯৪ সালে তৈরি হয় সমতা পার্টি যা পরবর্তীকালে জনতা দল ইউনাইটেড হিসাবে পরিচিত হয়। ১৯৯৭ সালে লালু নেতৃত্বে তৈরি হয় রাষ্ট্রীয় জনতা দল। ২০০০ সালে রামবিলাস পাসওয়ানের হাতে তৈরি হয় লোক জনশক্তি পার্টি।
রামবিলাসকে অপমান করেছেন নীতীশ, নাড্ডাকে চিঠি চিরাগের
এদিকে বর্তমানে রামবিলাস পুত্র তথা এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসওয়ানের অভিযোগ গত লোকসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহের সামনেই রাজ্যসভায় আসন বণ্টনের বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেও এই বিষয়ে রামবিলাসকে অপমান করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।এছড়াও একাধিক ক্ষেত্রে নীতীশের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগেও সরব হন তিনি। পাশাপাশি বিহারের রাজনৈতিক ময়দানের অন্যতম প্রধান মুখ রামবিলাস অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে প্রধানমন্ত্রী-সহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা একাধিকবার তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেও নীতীশ কুমার একবার কোনও খোঁজ নেননি বলে জানান চিরাগ। গত সেপ্টেম্বর এই সমস্ত বিষয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করে বিপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি লেখেন চিরাগ।
চিরাগ কাঁটায় ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে বিজেপি-জেডিইউ জোটের অনেক পুরনো হিসেবই
এদিকে ইতকিমধ্যে এনডিএ জোটে না গিয়ে বিহার ভোটে একাকী লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিরাগ। প্রথণ দফার প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেছে এলজেপি। এমনকী এই ক্ষেত্রে বিপির কোনও আশ্বাসেও আপত ভাবে কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি চিরাগকে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা বিহার নির্বাচনের প্রক্কালে এনডিএ শিবিরের চাপ তৈরি করতেই ৮ই অক্টোবর ওই চিঠি প্রকাশ্যে আনা হয় এলজেপি-র তরফে। এদিকে চিরাগ-নীতীশ দ্বন্দ্বে ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে একাধিক নতুন বিতর্ক। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এর ফলে ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে বিজেপি-জেডিইউ জোটের অনেক পুরনো হিসেবই।
ব্রাহ্মণ ভোটে নজর মায়াবতীর, বিজেপি-কংগ্রেসের ব্যাঙ্কে থাবা বসানোর ফর্মুলা তৈরি করছে বিএসপি