
মমতা থেকে সিন্ধিয়া, বিদ্রোহ করে কংগ্রেস ছেড়েছেন যেই হেভিওয়েটরা! 'হাত' ছাড়ার পথে পাইলটও
স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নতুন দল গড়েছে দেশের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। স্বাধীনতার আগেও কংগ্রেস ছেড়ে ফরোয়ার্ড ব্লক তৈরির নজির রয়েছে দুই বারের সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন। দলছুটদের মধ্যে একসময় নাম নেওয়া হত দেশে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখওপাধ্যায়েরও। আর সম্প্রতি দল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সচিন পাইলট। কয়েক মাস আগেই কংগ্রেস ছেড়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পথ চলা শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। বেশ কয়েকটি কারণকে সামনে রেখে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নতুন দল করেন মমতা। ১৯৯৭ সালে যখন কংগ্রেসের অন্দরে ক্ষমতা দখলের লড়াই তুঙ্গে তখন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ট অনেক নেতারাই দলে সনিয়া গান্ধীকে সামনের সারিতে তুলে আনেন। সেই সময় কেন্দ্রের নরসিমহা রাও সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে সিপিএম বিরোধিতার নয়া জোয়ার আনতে শুরু করেন মমতা। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। মমতার পাশাপাশি সেই প্রায় একই সময় কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপি গড়েছিলেন মারাঠা স্ট্রং ম্যান শরদ পাওয়ার। কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল গড়ে আপাতত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন জগন মোহন রেড্ডিও।

ইন্দিরার সময়কালে পরপর বিদ্রোহ
ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে জয়প্রকাশ নারায়ণও কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে জনসংঘের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। জরুরি অবস্থার সেই সময়ে বহু কংগ্রেস নেতা ইন্দিরার একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জেলে গিয়েছিলেন। এর আগে অবশ্য কংগ্রেসে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন মোরারজি দেশাই। জগজীবন রাম এককালে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন নেহরুর বিরুদ্ধে। কংগ্রেস থেকে নিজে বেরিয়ে এসে একসময় কংগ্রেস (ই) গঠন করেছিলেন ইন্দিরা।

কংগ্রেস ছেড়ে আলাদা দল গড়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ও
কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল গড়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। পরে অবশ্য ফের কংগ্রেসেই যোগ দেন প্রণববাবু। এছাড়া ভিপি সিং রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘষণা করে বোফোর্স কেলেঙ্কারির সময় মন্ত্রীত্ব ছেড়ে জনতা দল গড়েন। সেই দলে ছিলেন আরও এক কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ চন্দ্রশেখর।

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
এদিকে কয়েকদিন আগেই মধ্যপ্রদেশ রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ তোলপাড় করে দেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ২২ জন বিধায়ক নিয়ে দল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। রাজ্যসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কংগ্রেস-সিন্ধিয়া মনোমালিন্যের সূত্রপাত। আসন সংখ্যার নিরিখে মধ্যপ্রদেশের তিন আসনের ২টিতে এর আগে কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিশ্চিত ছিল। এই আসনের একটিতে নিজে ও অপরটিতে তাঁর অনুগামীকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য।

কেন কংগ্রেস ছাড়েন সিন্ধিয়া
২০১৮-র বিধানসভা ভোটে সিন্ধিয়ার খাস তালুক গোয়ালিয়র-চম্বল-সম্ভাগ অঞ্চলের মোট ৩৪টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে জেতে কংগ্রেস। অর্থাৎ, ৭৬ শতাংশ আসনে জয়। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রিত্ব দূরের কথা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হয়নি জ্যোতিরাদিত্যকে। দু'টি পদেই একরকম নজিরবিহীন ভাবে রাখা হয় সত্তরোর্ধ্ব কমল নাথকে। এমনকী, ক্ষমতায় ফেরার পর সিন্ধিয়া-ক্যাম্পের এক ডজন বিধায়ককে মন্ত্রী করা হবে বলে হাইকম্যান্ডের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তাঁদের মধ্যে জনা ছয়েকের বেশি মন্ত্রিত্ব পাননি।

তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে কংগ্রেস ছাড়ার লাইনে?
কংগ্রেসের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সিন্ধিয়াকে দিয়েই কি শেষ, নাকি তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে কংগ্রেস ছাড়ার লাইনে? দলের মধ্যের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, গত ৬ বছর ধরে বার বার পরাজয় সত্ত্বেও চলছে-চলুক মেজাজ দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে, এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে অধীরতাও বাড়ছে। আর সেই লাইনে প্রথম সারিতে সচিন পাইলট।

গত কয়েক দশকে তাবড় নেতারা কংগ্রেস ছেড়েছেন
গত কয়েক দশকের রাজনীতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে কংগ্রেস এককালে ছেড়েছিলেন, বিজয় বহুগুণা (উত্তরাখণ্ড), অজিত যোগী (ছত্তিসগড়) এবং গিরিধর গামাং (ওড়িশা)। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন, জিকে ভাসান (তামিল নাড়ু), কিশোর চন্দ্র দেও (অন্ধ্র প্রদেশ), জয়ন্তী নটরাজন (তামিল নাড়ু), এস এম কৃষ্ণা (কর্নাটক), বেণী প্রসাদ ভার্মা (উত্তর প্রদেশ), শ্রীকান্ত জেনা (ওড়িশা) এবং শঙ্করসিং বাগেলা (গুজরাট)।

কংগ্রেস ছেড়েছেন এঁরাও
প্রাক্তন ও দায়িত্বে থাকা রাজ্য সভাপতিদের মধ্যে কংগ্রেস ছাড়েন অশোক তানওয়ার (হরিয়ানা), রীতা বহুগুণা জোশী (উত্তর প্রদেশ), বোচা সত্যনারায়ণ (অন্ধ্র প্রদেশ), ভুবনেশ্বর কলিতা (আসাম), যশপাল আরিয়া (উত্তরাখণ্ড) এবং অশোক চৌধরি (বিহার)। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা দল ছেড়েছেন তাঁরা হলেন আসামে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অরুণাচল প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খাণ্ডু, ত্রিপুরায় সুদীপ রায় বর্মণ, এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।

কংগ্রেস ছাড়বেন সচিন পাইলট!
এদিকে কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল গড়তে পারেন সচিন পাইলট। কয়েকদিন আগেই দলবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বরিষ্ঠ নেতা তথা দলের প্রাক্তন মুখপাত্র সঞ্জয় ঝাকে কংগ্রেস পার্টি থেকে বরখাস্ত করা হয়। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণে রাজস্থানের ডেপুটি সিএম পদে থেকে সরানো হয় সচিন পাইলটকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সঞ্জয় ঝা-কে।

নয়া দল গড়তে পারেন সচিন পাইলট
আর এত কিছুর মধ্যেই এবার জানা গেল যে সচিন পাইলটের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সঞ্জয় ঝা ও মুম্বইয়ের নেতা সঞ্জয় নিরুপম। আর এতেই ফের জল্পনা তৈরি হয়েছে, তবে কি কংগ্রেসের হাত ছেড়ে এবার আলাদা দল খুলতে চলেছেন সচিন পাইলট। আর তাঁর নেতৃত্বে সেই দলে যোগ দেবেন, কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারতন্ত্রে বিতশ্রদ্ধ রাজনৈতিকরা। এই দলে আরও থাকতে পারেন প্রিয়া দত্ত, জিতিন প্রসাদ, কুলদীপ বিষ্ণোই, অশোক তানওয়ার।