মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর উঠে এল কোন চারটি বিষয়
মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে উঠে এলো কোন চারটি বিষয়
মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, লোকসভা পরবর্তী সময়ে খানিক হলেও বিজেপি সামান্য ধাক্কা খেয়েছে। পুনরুজ্জীবিত হয়েছে আঞ্চলিক দলগুলি। তার কারণ একাধিক হতে পারে। তবে প্রধান চারটি কারণ বেশি প্রকট হয়েছে।
বিজেপি প্রথমে থাকলেও প্রশ্নের মুখে নেতৃত্ব
মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা দুই রাজ্যেই বিজেপি জয় বজায় রেখেছে। তবে মহারাষ্ট্রে অপ্রত্যাশিত ভাবেই কমেছে আসন সংখ্যা। যেটা রীতিমতো নজরে পড়ার মতো। অন্যদিকে হরিয়ানায় ত্রিশঙ্কুর পথে এগিয়েছে। এক্ষেত্রেও বিজেপির জনপ্রিয়তা প্রশ্নের মুখে। দুক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে নেতৃত্ব নিয়ে। ফড়নবীশের মতো জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ বছরে দলকে এই জায়গায় পৌঁছে িনয়ে গিয়েছে, তা ভাবতে একটু অসুবিধাই হবে বিজেপি শিবিরের। তার থেকেও বেশি প্রশ্ন উঠছে নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ জুটির নেতৃত্ব নিয়ে। বর্তমান রাজনীতিতে বিজেপি শিবিরে যাঁদের চাণক্য আর চন্দ্রগুপ্তের জুটি বলা হয়ে সেই জুটির জনপ্রিয়তা যে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে এই দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল।
মাটির কাছের নেতাদের বেছে নিয়েছে মানুষ
হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মাটির কাছের নেতারাই আসল। যাঁরা দিল্লির রাজনীতিতে বেশি স্বচ্ছন্দ থাকেন এবং সেখানেই মগ্ন থাকেন তাঁদের দূরে ছুঁড়ে ফেলেছে হরিয়ানার মানুষ। আর এই রােয়র অধিকাংশটাই এসেছে হরিয়ানার জাঠদের ঘর থেকে। সেকারণেই বিজেপির অধিকাংশ আসন হাতছাড়া হয়েছে। হরিয়ানার জাঠদের এই মানসিকতার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে প্রায় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাওয়া কংগ্রেস সমীকরণ বুঝতে দেরী করেনি। কুমারী শৈলজার বুদ্ধিমত্তা কাজ করেছে এখানে। সেই একই কারণে হার হয়েছে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার।
মেরুকরণ বা জাতীয়তাবাদ নয় স্থানীয় ইস্যুই প্রাধান্য পেয়েছে
মেরুকরণ বা জাতীয়তাহাদের রাজনীতিতে লোকভা ভোট জয় করা গেলে বিধানসভা ভোট যে অন্য ইস্যুতে চলে সেটা বুঝতে ভুল করেছে বিজেপি। সেকারণেই ঠিক ভোটের আগের দিন পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁিট গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে বড় করে দেখিয়েও ভোট বাক্সে তেমন লাভ জোটাতে পারেননি মোদী অমিত শাহরা। কারণ মহারাষ্ট্র থেকে হরিয়ানা ভারতের যে প্রান্তেই বিধানসভা ভোট হোক না কেন সেখানে প্রাধান্য পায় সাধারণের স্বার্থ। স্থানীয় ইস্যু। সেকারণেই এই দুই রাজ্যে অনেক ভোটারই মোদীর প্রশংসা করলেও ভোট বিজেপিকে দিতে চাননি। কারণ তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল স্থানীয় ইস্যু। সেখানে জাতীয়তাবাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফসলের ঋণ মকুব, অটো কেনার ঋণ মকুব, বাড়ির ছেলের কর্মসংস্থান।
জাত-পাতের রাজনীতি প্রকট হয়েছে
বিধানসভা ভোটে যে জাত পাতের রাজনীতি একটা বড় বিষয় সেটা মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিজেপি শিবির তেমন আঁচ করতে পারেননি। এবারও তাঁরা মোদীর জোয়ারে জিতে যাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তা কোনওভাবেই হয়নি। সেকারণেই মহারাষ্ট্রে বিজেপির আসন কমেছে আর শিবসেনার আসন বেড়েছে। শিবসেনা কিন্তু মারাঠা জাত্যাভিমানের লড়াইটা ভালই ব্যবহার করতে পেরেছে। যেটা বিজেপি তেমন প্রকাশ করতে পারেনি।
অন্যদিকে হরিয়ানায় কংগ্রেসের ভোট বাড়িয়েছে জাঠেরা। লোকসভা ভোটে এই হরিয়ানার জাঠরাই মোদীকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে আর তাঁদের কোনও খোঁজ নেয়নি বিজেপি। জাঠরাও বুঝেছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে সেটা পূর্ণ হবে না। নিজেদের অধিকার রক্ষায় ফের কংগ্রেসেই আস্থা রেখেছেন তাঁরা।