দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে পা কমল হাসানের, আত্মপ্রকাশ করল তাঁর রাজনৈতিক দল
কমল হাসান জানিয়েই রেখেছিলেন তিনি তাঁর নতুন রাজনৈতিক পার্টি তৈরি করতে চলেছেন।
শুরু হল তামিল রাজনীতিতে এক নয়া যুগ। যার সূচনা মাস খানেক আগেই করে দিয়েছিলেন রজনীকান্ত। পাকাপাকিভাবে তামিল রাজনীতির কমল হাসান কবে ময়দানে নামেন- তার অপেক্ষায় ছিলেন সকলে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসেই সন্ধ্যায় নিজের রাজনৈতিক দলের জন্ম দিলেন দক্ষিণী সিনেমা ও জনমানসের আরও এক মেগাস্টার কমল হাসান। তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম রেখেছেন 'মাক্কাল নিদি মাইয়াম'। বাংলায় যার তর্জমা করে দাঁড়ায় 'মানুষের ন্যায় মঞ্চ'। বরাবরই দেশপ্রেম ও জনদরদী ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন কমল। এমনকী, গত দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সিনেমার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। এবার সিনেমাটিক সেই পটভূমিকে বাস্তবায়িত করার পথে এগিয়ে এলেন কমল হাসান।
দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে বরাবরই দেখা গিয়েছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির রমরমা। বিশেষ করে অন্ধ্র ও তামিল- দুই প্রদেশের রাজনীতিতেই চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জডিয়ে থাকারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তামিলনাড়ুতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এমজে আর, করুণানিধি, জয়ললিতারা সকলেই সিনেমা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু, তামিল রাজনীতি আজ এক শূন্যস্থানের মধ্যে পড়ে আছে। জয়ললিতা প্রয়াত। আর করুণানিধি বয়সের ভারে ন্যূজ্য। জয়ললিতার দলের উত্তরসূরিরা এখন তখতের লোভে মত্ত। তামিল ভাবাবেগকে তাঁরা কায়ারাত্ত করতে চাইলেও জয়ললিতার মতো জনপ্রিয়তা তাঁদের কারোরই নেই। অন্যদিকে করুণানিধি-র ছেলে-মেয়েরাও সেভাবে তামিল রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেননি।
কমল হাসানের রাজনৈতিক দল 'মাক্কাল নিদি মাইয়াম'-এর সিম্বল
তামিল রাজনীতি বরাবরই লার্জার দ্যান লাইফ ক্যারেক্টার-কেই তাঁদের নায়ক বলে মেনে এসেছে। তাই তামিল রাজনীতির এই ডামাডোল পরিস্থিতিতে রজনিকান্ত, কমল হাসানদের প্রবেশটা ছিল নিশ্চিত। কারণ, এই মুহূর্তে তামিল ভাবাবেগে এই দুই জনের থেকে আর কাদের বেশি গ্রহণযোগ্যতা আছে। রজনি তাই নেমে পড়েছিলেন ময়দানে। এবার নেমে পড়লেন কমল হাসান। আগামী দিনে রজনি ও কমল এক হবেন কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এই মুহুর্তে তামিল রাজনীতির মরা গাঙে যে রজনি ও কমল জোয়ার এনে দিয়েছেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
কমল হাসানের রাজনৈতিক দলের ফ্ল্যাগ
মাদুরাইয়ের ওথাকাডাইয়ের আন্নামালাইয়ে রাজনৈতিক দলের জন্ম লগ্নে শ'খানেক সদস্যকে স্বাগত জানালেন কমল হাসান। এঁরা কে কোন পদে থাকছেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আরও আরও হাজারে হাজারে মানুষ কমলের দলে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও সভায় ঘোষণা করা হয়। প্রিয় নায়কের রাজনৈতিক দলের জন্ম অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করেছিলেন হাজারে হাজারে মানুষ। কমলকে শুভেচ্ছা জানাতে দিল্লি থেকে উড়ে আসেন আপ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি কমলের সঙ্গে মঞ্চেও ওঠেন। কমল হাসানকে শুভেচ্ছা জানান কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও। সেই শুভেচ্ছা বার্তা মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা জায়ান্ট স্ক্রিনেও দেখানো হয়।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে কমল পরিস্কার জানিয়ে দেন, মানুষের সেবা করাই তাঁর লক্ষ্য। এই দল শুধু তাঁর নয় এটা তামিল জনমানসের প্রতিনিধি। মানুষের সেবা করার নামে রাজনৈতিক দলগুলি যে জনতাকে লুঠছে তাতে তিনি হতাশ। উন্নয়নের নাম আছে। কিন্তু, সেই উন্নয়ন কোথাও চোখে পড়ে না বলেও অভিযোগ করেন কমল হাসান। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার শেষে নেই। কিন্তু, সেই দুর্দশা মেটানোর জন্য কেউ নেই। সকলেই প্রতিশ্রুতি দেয়, আর সেই সুযোগ নিয়ে দুর্নীতির পর দুর্নীতি করে চলে বলেও তাঁর অভিযোগ।
এদিন দলের ওয়েবসাইট থেকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও টুইটার হ্যান্ডেলেরও প্রকাশ করেন কমল হাসান। টুইটারে কয়েক মিনিটের মধ্যে ফলোয়ারের সংখ্যা ৬০০০ ছাড়িয়ে যায়।