ভারত এবার পাড়ি দেবে যমজ গ্রহ শুক্রে! মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা সারা ইসরোর
চন্দ্র ও মঙ্গলের মিশন সফলভাবে পালন করেছে ইসরো। ইসরোর এই সাফল্য ভারতকে একটি 'মহাকাশ মেলার দেশ' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতীয় মহাকাশ ও গবেষণা সংস্থা ইসরো এবার শুক্র গ্রহের কক্ষপথ মহাকাশ যান পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ মহাকাশ গবেষণা নিয়ে নতুন মিশন তৈরি করত চলেছেন।

ভেনুসিয়ান বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা
ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, এই মিশনের লক্ষ্য হবে ভেনুসিয়ান বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করা। যা বিষাক্ত এবং ক্ষয়কারী প্রকৃতিতে সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘ গ্রহকে আবৃত করে। ইসরো চেয়ারম্যান বলেন, এই মিশনের উপর কাজ বছরের পর বছর ধরে চলছে। মহাকাশ সংস্থা একটি মিশন পরিকল্পনা এবং অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল গঠন করে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।

স্বল্প সময়ের সংস্থানে মিশন শুক্র
এস সোমনাথ আরও বলেন, "মিশনের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে মিশন শুক্রের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, সামগ্রিক পরিকল্পনাও প্রস্তুত। অর্থ তহবিল গঠন করা হয়েছে। শুক্রে একটি মিশন তৈরি করা এবং স্থাপন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়েছে এতদিনে। স্বল্প সময়ের সংস্থান এবং সামর্থ্য মতো ভারত মিশনে নেমে পড়েছে।

কেন মিশন শুক্র গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি দেশ শুক্র গ্রহে মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। কারণ তারা কীভাবে এটি চালাবে তা বোঝার চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিয়েছেন যে, শুক্র একসময় পৃথিবীর মতো ছিল এবং তাই এটি পৃথিবীর যমজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুক্রের রূপান্তর ঘটে যায়।

শুক্র হল ইসরোর পরবর্তী গন্তব্য
কম খরচে আন্তঃগ্রহের মিশনের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে ভারত বৈশ্বিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রহাণু অন্বেষণ করার পরিকল্পনার সঙ্গে শুক্র হল পরবর্তী গন্তব্য। অরবিটারের বিভিন্ন মিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করার জন্য এবং অতীতে করা হয়নি এমন কোনও অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ করাও যেতে পারে। এই বিশয়ে পরিকল্পনা করতেই একদিনের সম্মেলন করেছে ইসরো।

শুক্র মিশন অনন্য হবে ইসরোর
ইসরো চেয়ারম্যান বলেন, একটি দলটি মিশনের স্বতন্ত্রতা শনাক্ত করার কাজ করবে, যা আমরা চন্দ্রযান এবং মঙ্গলযান মিশনের সময়ও করেছি। আর এই মিশনের লক্ষ্য হল এখান থেকে কী অনন্য এবং অতিরিক্ত জ্ঞান পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে তা পর্যালোচনা করা। আমরা ইতিমধ্যে এই মিশনে স্বতন্ত্রতা আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এটি বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে। চন্দ্রযান এবং মঙ্গল মিশনের মতোই শুক্র মিশন অনন্য হবে।

মিশন শুক্র গ্রহে চলে গেছে
ইসরোর অরবিটার মিশন ছাড়াও নাসা শুক্র গ্রহ অধ্যয়নের জন্য দুটি মহাকাশযান পাঠাচ্ছে। আমেরিকান স্পেস এজেন্সি শুক্রের নরক জগত অন্বেষণের জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। দুটি মিশনের মধ্যে তহবিল সমানভাবে ভাগ করা হবে। ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সন্ধ্যাতারার কক্ষপথে পাড়ি দেবে ইসরো।

কীভাবে শুক্র নরক হয়ে উঠল
মিশনের লক্ষ্য হল কীভাবে শুক্র নরক হয়ে উঠল, তা দেখা। শুক্রের জগতে পৃথিবীর মতো আরও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নাসা ছাড়াও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সিও প্রতিবেশী গ্রহে মহাকাশ যান পাঠানোর ঘোষণা করেছে। ইউরোপের এনভিশন হবে শুক্রের উপর বৃত্তাকার পরবর্তী কক্ষপথ, যা গ্রহটির অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র থেকে উপরের বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত একটি সামগ্রিক দৃশ্য প্রদান করবে। মহাকাশযান তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় ইসরো এখনও এই মিশনের জন্য টাইমলাইন প্রকাশ করেনি।

মহাকাশ যান পাঠিয়ে পৃথিবীর যমজ গ্রহের তথ্য-তালাশ
শুক্রের পৃষ্ঠভাগের তলদেশে কী সঞ্চিত রয়েছে, তা জানতে চাইছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সে জন্যই শুক্র গ্রহে মহাকাশ যান পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্র গ্রহে সালফিউরিক অ্যাসিডযুক্ত মেঘ দেখা যায়। তার মধ্যে কী লুকিয়ে রয়েছে, তাও জানতে চান পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ যান পাঠিয়ে পৃথিবীর যমজ গ্রহ নিয়ে তথ্য তালাশ করাই আসল লক্ষ্য তাঁদের।

২০২৪-এর ডিসেম্বরের মধ্যে মহাকাশ যান পাঠানোর সিদ্ধান্ত
ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ সম্প্রতি শুক্র গ্রহের অভিযান নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি ইতিমধ্যেই প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই অভিযানের জন্য কত অর্থের প্রয়োজন, সেই বাজেট করে এগোতে চাইছেন ইসরো চেয়ারম্যান। ইসরো চেয়ারম্যান ২০২৪-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এই মহাকাশ যান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুক্র অভিযান, ২০২৪-এর পরবর্তী টার্গেট ২০৩১ সাল
তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে ভারতের যে ক্ষমতা রয়েছে, তার মাধ্যমে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শুক্র গ্রহে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে পারবেন তাঁরা। পৃথিবী ও শুক্র গ্রহের এক সরলরেখায় এনে প্রতিবেশী গ্রহের কক্ষপথে পাঠানো হবে মহাকাশযান। ২০২৪-এর পরবর্তী টার্গেট হবে ২০৩১ সাল। শুক্রের অভিযান নিয়ে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট আশাবাদী।

চন্দ্রযান ১ ও মার্স অরবিটারি মিশনের সাফল্যের পর
চন্দ্রযান ১ ও মার্স অরবিটারি মিশনের সাফল্য অর্জনের পর শুক্রকে পাখির চোখ করেছে ইসরো। শুক্রের পৃষ্ঠের অ্যাক্টিভ ভলক্যানিক হটস্পট, লাভা ফ্লো, ও গ্রহের গঠনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে চাইছে ইসরো। আমেরিকা ও ইফরোপের অনেক দেশ এখন শুক্র গ্রহকে টার্গেট করেছে। তাই এবরা ইসরোও নেমে পড়ল অভিযানে।

মহাকাশ থেকে পড়ে যাওয়া একটি রকেটকে ধরে ফেলল হেলিকপ্টার, ভাইরাল সেই মুহূর্ত