সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বেশি ‘ঘুষখোর’ ভারতীয়রাই, বলছে নয়া সমীক্ষা
সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বেশি ‘ঘুষখোর’ ভারতীয়রাই, বলছে নয়া সমীক্ষা
বর্তমানে করোনা থেকে সেরে ওঠার হার ভারতে বৃদ্ধি পেলেও ক্রমশ অন্য একটি সামাজিক ব্যাধির জালে জড়িয়ে পড়ছে ভারতীয় সমাজ। গ্লোবাল কোরাপশন ব্যারোমিটার (জিসিবি) সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার মধ্যে ভারতেই ঘুষের হার সর্বোচ্চ, প্রায় ৩৯%। অন্যদিকে ভারতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ মারফত জনহিতকর প্রকল্পের লাভ পাওয়ার হারও প্রায় ৪৬%। এদিকে এই তথ্য সামনে আসার পরেই স্বভাবতই তীব্র চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে।
আগে থেকে ঘুষ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ৩২ শতাংশ মানুষ
জিসিবির তরফে জানান হয়েছে, এ বছরের জুন-জুলাইয়ে প্রায় ২০০০ জনের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় জানা গেছে, যাঁরা ঘুষ দেন তাঁদের ৫০%-এর কাছ থেকে ঘুষ চাওয়া হয় এবং ৩২% আগে থেকেই ঘুষ দিয়ে দেন এটা ভেবে যে ঘুষ না দিলে কাজ হবে না! আগামীতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ ও ঘুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা যে আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে জনসেবামূলক সাধারণ কাজগুলোর জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের নিদান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে ভয় সাধারণ মানুষের
ভারতবর্ষের মত দেশে ঘুষ একটি অতি আদিম প্রথা। সরকারি কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই গুপ্ত লেনদেনের বিষয়টি। রিপোর্ট বলছে, ভারতীয়দের ৬৩% ভাবেন ঘুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে তার ফল ভুগতে হবে জনসাধারণকেই। অন্যদিকে জিসিবির রিপোর্ট উঠে এসেছে, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় যৌন হেনস্থার মত ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে। সরকারি কাজের বদলে যৌনসুখ বা আপত্তিজনক প্রমাণের বিনিময়ে ব্ল্যাকমেলের মত ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক। আর তাই শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপে যে এই ঘৃণ্য অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন সমাজবিদরা।
প্রায় ১৭টি দেশে জিসিবির সমীক্ষা
জিসিবির সমীক্ষানুযায়ী, ৮৯% মানুষ ভাবেন যে সরকারি ক্ষেত্রে ঘুষ একটি বড় সমস্যা। ১৮% মানুষকে ভোটের বিনিময়ে ঘুষ দেওয়া হয়েছে, ১১% মানুষ যৌন হেনস্থার শিকার। জিসিবি ১৭টি দেশের প্রায় ২০,০০০ নাগরিকের উপর সমীক্ষা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। রিপোর্ট বলছে, প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জন ভাবেন ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। অন্যদিকে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন, স্বাস্থ্য শিক্ষার মত ক্ষেত্রে সুবিধাভোগের জন্য ঘুষ দিয়েছেন! ঘুষের তালিকায় ভারতের পরেই রয়েছে কাম্বোডিয়া। তালিকায় সবচেয়ে নীচে রয়েছে জাপান। রিপোর্ট বলছে, এই সকল দেশে ঘুষ বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপে খামতি রয়েছে। যদিও এরপরেও সরকারের টনক কতটা নড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সর্বাধিক ঘুষ
জিসিবির রিপোর্ট বলছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মত জনহিতকর ক্ষেত্রে প্রাথমিক সুবিধাটুকু পাওয়ার জন্যেও ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন জনসাধারণ। প্রতি সাতজনের মধ্যে একজনকে ঘুষ অফার করা হচ্ছে যাতে তিনি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে ভোট দেন। জিসিবির এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, "দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলিতে যেভাবে যৌনহেনস্থা ও ঘুষ প্রক্রিয়া একইসাথে চলছে, তাতে আমরা শিহরিত। সরকারের উচিত কড়া আইনের প্রয়োগে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।" যদিও সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা, ভারতীয়দের মননে যেভাবে ঘুষপ্রথা গেঁথে গেছে, তাতে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কাজ হবে না।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে বড় ঘোষণা মমতার, ভোটের আগে বড় চমক রাজ্য সরকারের