দেওয়ালে সাজানো বিপুল অর্থ, মাটির নীচে কোটি টাকার তেল! কীভাবে গ্রেফতার কুখ্যাত ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন?
কীভাবে গ্রেফতার কুখ্যাত ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন?
ভারতের আয়কর বিভাগ এবং ডিজিজিআই দ্বারা পরিচালিত অভিযানে ৯৪.৪৫ কোটির টাকার বেশি নগদ, ২৩ কেজি সোনা এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে রাখা ৬০০ কেজি চন্দন তেল উদ্ধারের পর ইতিমধ্যেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন কানপুরের ব্যবসায়ী পীযূষ জৈন। অখিলেশ ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীর অফিস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই বিপুল পরিমানের সম্পত্তি।
টাকা গুনতে আনতে হল মেশিন!
পীযূষ জৈনের উত্তরপ্রদেশের কনৌজের বাড়ি এবং ওডকেম ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় হানা দেন আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা ৷ সেখানে পৌঁছে তল্লাসি চালানর পর রীতিমত চক্ষু চড়কগাছ আধিকারিকদের। দেওয়ায়লে স্তরে স্তরে সাজানো বিপুল পরিমান নগদ টাকা, আন্ডারগ্রাউন্ড রুম থেকে উদ্ধার করা হয় চন্দন কাঠ ও চন্দনের তেল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন আয়কর অফিসাররা। এত বিপুল পরিমান উদ্ধার করা টাকা গুনতে শেষ পর্যন্ত আধিকারিকদের প্রায় ২০টি নগদ-গণনার মেশিন এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকদের একটি সম্পূর্ণ দলকে নিয়োগ করতে হয়েছে!
সাধারণ জীবনের পিছনে রহস্য
আপাত দৃষ্টিতে খুবই সাদারন জীবন যাপন করতেন পীযূষ জৈন, চালাতেন একটি স্কুটি। এবং একটি হ্যাচব্যাক গাড়ি ছিল তাঁর বাড়িতে। কিন্তু মুখোশের আড়ালে সম্পূর্ণ অন্য একজন ব্যক্তি ছিলেন পীযূষ যিনি অবাধে চালাতেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা। আর এই রহস্য আবিষ্কার করতে গিয়ে হকচকিয়ে গিয়েছেন আয়কর ও জি এস টি বিভাগের গোয়েন্দারা
কীভাবে সামনে এল সত্য?
এই ঘটনার শুরু হয় তখন, যখন ডিজিজিআই চারটি ট্রাক ভর্তি তামাক ও পান মশলার জিএসটি ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ট্রাকগুলি ছিল 'গণপতি রোড ক্যারিয়ার' সংস্থার। এবং এই বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েই একটি বাজার চলতি পান মশলার কারখানায় হাজির হন আধিকারিকরা। আর সেখানেই গণপতি রোড ক্যারিয়ারের নামে ২০০ টিরও বেশি জাল 'চালান' উদ্ধার করেন। অবশ্য তখন ওই পান মশলা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান তাঁরা ট্যাক্স বাবদ ৩.০৯ কোটি টাকা জমা করেছে। কিন্তু এবিষয়ে আধিকারিকদের ছানবিনের মাধ্যমেই প্রথম সামনে আসে পীযূষ জৈনের নাম।
ওডকেম ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় হানা
এরপরেই সত্য উদ্ঘাটনের জন্য পীযূষ জৈনের উত্তরপ্রদেশের কনৌজের বাড়ি এবং ওডকেম ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় হানা দেন আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা ৷ জানা গিয়েছে কনৌজে জৈনের কারখানায় ডিজিজিআই এবং স্থানীয় কেন্দ্রীয় জিএসটি বিভাগের আধিকারিকরা অভিযান চালিয়ে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বাজেয়াপ্ত করে। নথিভুক্ত না হওয়া চন্দন কাঠ থেকে তৈরি তেল এবং কোটি কোটি টাকার সুগন্ধি জৈনের কারখানা থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে ডিজিজিআই ৷ অভিযোগ এই সব দ্রব্যের কোনও বৈধ নথি ছিল না ব্যবসায়ীর কাছে।
গ্রেফতার পীযূষ জৈন
সিজিএসটি'র ধারা ৬৭-তে কর ফাঁকি ও বেহিসেবি সম্পত্তি রাখার অপরাধে পারফিউম ব্যবসায়ী পীযূষ জৈনকে গ্রেফতার করল আমেদাবাদের ডিরেক্টর জেনারেল অফ জিএসটি ইন্টেলিজেন্স। কনৌজে তল্লাশির সময়, আধিকারিকরা প্রায় ১৭ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও, মাটির তলায় স্টোরে লুকিয়ে রাখা ৬০০ কেজিরও বেশি চন্দন তেল সহ সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত দ্রব্য এবং প্রায় ২৩ কেজি সোনা এবং বিপুল পরিমাণ বেহিসাবহীন কাঁচামাল উদ্ধার করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা।