(ছবি) উচ্চ শিক্ষিত ইয়াকুব মেমনের অপরাধী হয়ে ওঠার কাহিনি
মুম্বই, ৩০ জুলাই : স্বভাবে শান্ত, উচ্চ-শিক্ষিত, ইংরেজি বলিয়ে-কইয়ে ইয়াকুব মেমন কীভাবে জড়িয়ে পড়ল জঙ্গি কার্যকলাপে। কীভাবে সে হয়ে উঠল ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ মুম্বই বিস্ফোরণের মূলচক্রী।
আরও পড়ুন : নাগপুর জেলে ফাঁসি হল ইয়াকুব মেমনের , জেনে নিন ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির টাইমলাইন , ইয়াকুবের মৃত্যুদণ্ড : 'ফাঁসির দড়ি' নিয়ে নানা তথ্য
দাউদ ইব্রাহিমের পাশাপাশি টাইগার মেমন যে এই চক্রের অন্যতম মূল পা্ণ্ডা সে ছিল ইয়াকুবের দাদা। ভাইয়ের সঙ্গে একেবারেই বিবা ছিল না টাইগারের। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টট্যান্ট ইয়াকুব তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখতও না। তবু ও কীভাবে সে জড়াল এমন ঘটনায়। ইয়াকুবের জীবনের নানা ঘটনা বিস্তারিত জানুন নিচের স্লাইডে।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
মেমন ভাইদের মধ্যে তৃতীয় ছিল ইয়াকুব। স্বভাবে আপাত শান্ত ইয়াকুব মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই হয়ে উঠেছিল মুম্বই পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ। মুম্বইয়ের সবচেয়ে স্মার্ট এবং শিক্ষিত ক্রিমিনাল হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছিল সে।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
তবুও ইয়াকুবের কাহিনি আর পাঁচটা অপরাধীর চেয়ে থানিক আলাদা। ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ও তারপরে কলেজে পড়েছিল সে। ফলে ইংরেজি বলিয়ে-কইয়ে এমন অপরাধী সেসময়ে ছিল না বললেই চলে। কমার্সে স্নাতক ইয়াকুব ১৯৯০ সালে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টট্যান্ট হয়।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
১৯৯১ সালে বাল্যবন্ধু চেতন মেহতাকে নিয়ে অ্যাকাউন্টিং ফার্ম খুলে ফেলেন ইয়াকুব। নাম দেন 'মেহতা অ্যান্ড মেমন অ্যাসোসিয়েটস'। পরে আরও গুলাম ভৈরা নামে আরও একজন পার্টনার যুক্ত হয় তাদের সঙ্গে।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
খুব রমরমিয়েই চলছিল ইয়াকুবের ফার্ম। তবে হঠাৎ ১৯৯২ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে ইয়াকুব 'এআর অ্যান্ড সন্স' নামে আরও একটি কোম্পানি খোলে। একইসঙ্গে সে একটি রপ্তানি কোম্পানিও খোলে যার নাম ছিল 'তেজারেথ ইন্টারন্যাশনাল'। এই কোম্পানি অফিস ছিল মাহিম এলাকায়। এবং মধ্যপ্রাচ্যে এই কোম্পানি মাংস রপ্তানি করত।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
কিছুদিনের মধ্যে ইয়াকুবের পসার এমন জমে উঠল যে ইয়াকুব মাহিমের একটি আবাসনে একসঙ্গে ৬টি ফ্ল্য়াট কিনে ফেলল (সেখানে তার দাদা টাইগার মেমনেরও দুটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ছিল)।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
ওই বছরই রাজকীয়ভাবে মুম্বইয়ের ইসলাম জিমখানায় অনুষ্ঠান করে রাহিনকে নিকাহ করে ইয়াকুব। এবং সেই নিকাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু খ্যাতনামা বলিউড সেলেবস।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
দাদা টাইগারের ও ইয়াকুবের স্বভাব একেবারে দুই মেরুর ছিল। টাইগার যেকোনও উপায়ে, অবৈধভাবে হলেও কোটিপতি হতে চেয়েছিল। শিক্ষারও তেমন ছাপ ছিল না। আর অন্যদিকে ইয়াকুব ছিল স্বভাবে শান্ত, শিক্ষিত, মার্জিত ও উচ্চ ভাবনার।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
ফলে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ অবশ্যম্ভাবী ছিল। এছাড়াও টাইগার তার স্ত্রী শাবানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত। এবং বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে লিপ্ত ছিল সে। ইয়াকুবের সঙ্গে বিবাদের আর একটি কারণ ছিল এটাও।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
কিন্তু এসব সত্ত্বেও মুম্বইয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর ঘটনায় দাউদ ইব্রাহিম, আনিস ইব্রাহিম, টাইগার মেমনের মতোই জড়িয়ে পড়েছিল ইয়াকুব। গোটা বিস্ফোরণের ঘটনায় টাকা দিয়ে সেই সাহায্য করেছিল। বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট ছিল মেমন পরিবারের কয়েকজনের। সেখানেই বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক ঘুরে টাকা ঢুকেছিল অ্যাকাউন্টে। গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, সম্ভবত বাইরে থেকে কেউ সেই টাকা পাঠিয়েছিল।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
গোটা ঘটনার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ও সাজিয়ে রেখে ১৯৯৩ সালের ১০ মার্চ ভারত ছাড়ে ইয়াকুব। ১২ মার্চ মুম্বইয়ের ১৩ জায়গায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয় যাতে মোট ২৫৭ জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন প্রায় হাজার জন মানুষ।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
এরপর ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করেন ইয়াকুব মেমন। আত্মসমর্পণ করলে সে কোনওভাবেই ছাড় পাবে না জানতে পেরে ফের করাচিতে পালাতে উদ্যত হয় সে। তবে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে ধরা পড়ে ইয়াকুব।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
ধরা পড়ার পর ইয়াকুব জানায়, পাকিস্তানে পৌঁছে সে বিস্ফোরণের খবর জানতে পেরেছিল। ২০০৭ সালে, ঘটনার ১৪ বছর পর টাডা আদালতের বিচারপতি পিডি কোড়ে ইয়াকুবকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, জঙ্গি কার্যকলাপে মদত ও অর্থসাহায্য, বেআইনি অস্ত্র রাখা ও সরবরাহ করা এবং বিস্ফোরণের দায়ে ইয়াকুবের সর্বোচ্চ সাজা নির্ধারিত হয়।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
ফের একবার প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় ইয়াকুব। তবে ২০১৩ সালের ২১ মার্চ, সুপ্রিম কোর্ট তা নাকচ করে। মুম্বই বিস্ফোরণের মূলচক্রীদের একজন ইয়াকুব, এমনটাই জানায় শীর্ষ আদালত।

যে পথে ফাঁসিকাঠে ঝুলল ইয়াকুব
এরপর বেশ কয়েকবার মৃত্যুদণ্ড রদের আর্জি জানালেও সুপ্রিম কোর্ট তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শেষপর্যন্ত বুধবার সারাদিন দীর্ঘ জল্পনার পর এদিন ভোরের আগে ইয়াকুবের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এবং নাগপুরের সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি কার্যকর হয় ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম মূলচক্রী ইয়াকুব মেমনের।