কাগজ বিক্রেতা থেকে মিসাইল ম্যান, আব্দুল কালামের জন্মদিনে কতটা প্রাসঙ্গিক ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্টস' ডে?
কাগজ বিক্রেতা থেকে মিসাইল ম্যান, আব্দুল কালামের জন্মদিনে কতটা প্রাসঙ্গিক ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্টস' ডে?
রামেশ্বরমের দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর থেকেই লড়াই করতে করতে বড় হয়েছিলেন যিনি, তিনিই আজ বিশ্বের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছে অন্যতম বড় অনুপ্রেরণা। ভারতের 'মিসাইল ম্যান' তথা আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালামের আজ ৯০তম জন্মদিন। এদিকে নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় নিজেকে বিজ্ঞানী বলার আগে শিক্ষক বলতে বেশি পছন্দ করতেন এই মহামানব। এদিকে তাঁর পড়ুয়াপ্রীতির কারণেই প্রতি বছর তার জন্মদিনেই অর্থাৎ ১৫ই অক্টোবরকে পালন করা হয় 'বিশ্ব পড়ুয়া দিবস'।
দারিদ্র্যের চোখে চোখ রেখে ওঠেন এই প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী
রামেশ্বরমের এক দরিদ্র্য মৎস্যজীবীর সন্তানই আজ বিশ্বের বৈজ্ঞানিক মহলের অন্যতম সফলতম কান্ডারী। ভারতের একমাত্র বৈজ্ঞানিক হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার আগে খবরের কাগজ বিলি করার মত কাজও করেছেন তিনি। ফাইটার পাইলট পদে একচুলের জন্য নির্বাচিত না হলেও পোখরানে পরমাণু পরীক্ষা করে বিশ্ববাসীর কাছে 'মিসাইল ম্যান' হিসাবেই পরিচিত হন। প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট হওয়ার পরেও জ্ঞানের খিদে থামেনি কালামের। আর তাঁর এই অনুসন্ধিৎসু মনোবৃত্তিই তাঁকে ছাত্রসমাজের এত কাছের করে তোলে। ফলে তাঁর জন্মদিনই প্রতিবছর সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে 'ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্টস' ডে'।
বৈজ্ঞানিক চর্চার পাশাপাশি কালামের লেখা বই আজও গভীর ছাপ ফেলে মানজীবনেও
২০১৫ সালে আইআইএম শিলংয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের। যদিও তার আগেই তাঁর আবিষ্কার ও লিখিত বইগুলি ভারতের মানবজীবন তথা বৈজ্ঞানিক মহলের আনাচে-কানাচে গভীর ছাপ ফেলেছে। এসএলভি-৩ রকেট, ডিআরডিও মিসাইল, প্রোজেক্ট ভ্যালিয়ান্ট ও প্রোজেক্ট ডেভিল কালামের জীবনের অন্যতম মাইলস্টোন। এছাড়াও কলেজ জীবনে দু'আসনের একটি 'হোভারক্রাফট' তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম।
ছাত্রছাত্রীজের কাছে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ এই ‘বিশ্ব পড়ুয়া দিবস’?
নিজের আহোরিত জ্ঞান সারাজীবনই তিনি উৎসর্গ করে গেছেন ছাত্রছাত্রীদের হিতকার্যে। কালামের আত্মজীবনী 'উইংস অফ ফায়ার'-এ তাঁর লড়াই এবং সফলতার কথা পড়ে আজও অনুপ্রেরণা পায় সমগ্র ভারতবাসী তথা দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা অগনিত ছাত্রছাত্রীরা। এছাড়াও কালামের 'ইগনিটেড মাইন্ডস : আনলিডিং দ্য পাওয়ার উইদিন ইন্ডিয়া', 'ইন্ডিয়া ২০২০: আ ভিশন ফর দ্য নিউ মিলেনিয়াম' বইগুলি জনমনে যথেষ্টই দাগ কাটে। ভারতের 'মিসাইল ম্যান'-কে সম্মান জানাতে ভারত সরকার পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, ভারতরত্ন, রামানুজন পুরস্কারের মত একাধিক পদকে পুরস্কৃত করলেও সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন, তিনি ছিলেন এ সবকিছুরই উর্দ্ধে। কোনও পদ বা পুরষ্কারেই তার এই বিশ্বজনীন জ্ঞানের পরিমাপ সম্ভব নয়। তাঁর প্রতিটি বই এবং আবিষ্কার আজও সমানভাবে অনুপ্রাণিত করে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে। তার বাণীতে ভর করেই আজও আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন হাজার হাজর নতুন প্রাণ।
কালামের উদ্ধৃতিতে আজও অনুপ্রাণিত হয় হাজার হাজার তরুণ-তুর্কি
জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের হিতসাধনের সাথে যুক্ত ছিলেন ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম। ফলে তাঁর জন্মদিনকে 'ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্টস' ডে' হিসেবে পালন করা যে যুক্তিযুক্ত, সে বিষয়ে তর্কের অবকাশ থাকে না। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং একইসাথে অপরিসীম ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠত তাঁর লেখায় এবং ভাষণে। মারা যাওয়ার প্রায় ৫ বছর পরেও কালামের উদ্ধৃতিগুলি ছাত্রসমাজের কাছে একইরকম গ্রহণযোগ্য।
কালামের ভাবাদর্শে জীবনযুদ্ধে হার না মানার স্বপ্ন কোটি কোটি পড়ুয়ার
"শুধু সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু সাফল্যের গল্পটাই পাবে। যদি ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায়ও জানতে পারবে" বা "স্বপ্ন পূরণ যতক্ষণ না হচ্ছে স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতেই দেয় না" এর মতো কলামের অসংখ্যা বাণী আজও আমাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। একই সাথে কালামের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই জীবনযুদ্ধে নতুন লড়াইয়ের, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে দেশের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে কোটি কোটি পড়ুয়ারাও।
মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে তরজা জারি! কেন্দ্রের পাল্টা জবাব রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে