দেশে বন্যার বলি ৫০০-র বেশি, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি রাজ্য
গোটা দেশে বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি। এখনও নিখোঁজ ১০০ জন। তাঁদের জীবিত অবস্থায পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
গোটা দেশে বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি। এখনও নিখোঁজ ১০০ জন। তাঁদের জীবিত অবস্থায পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আগামী পাঁচ দিন একাধিক রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য কেরল, বিহার, গুজরাত এবং অসম।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য বিহার। মৃতের সংখ্যা ১২৩ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১২টি জেলার প্রায় ৮১.৫৭ লাখ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত বিহারে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সীতামারি জেলার। এখানে মোট ৩৭ জন মারা গিয়েছেন বৃষ্টিতে। তারপরেই মধুবনী। এই জেলায় ৩০ জন মারা গিয়েছেন। আরারিয়া জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
ডুবেছে একের পর এক জেলা
এছাড়াও শেহর এবং দারভাঙা জেলায় ১০ করে মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। পুর্নিয়ায ৯ জন,কৃষ্ণগঞ্জে ৫ জন, মুজফফরপুর ৪ জন, সুপৌলের ৩ জন, পূর্ব চম্পারণে ২ জন, সহর্ষে ১ জন মারা গিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে সমস্যায় পড়ছে সরকার।
কেরলে ফের ভয়াবহ বন্যা
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের বিধ্বংসী বন্যার মুখোমুখি হয়েছে কেরল। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের। ৫৯ জনের খোঁজ নেই। কেরলের প্রায় ১৪টি জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলাপ্পুজা, এর্নাকুলাম, ইড্ডুকি এই তিন জেলার ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়ে লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বাকি ৯ জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ত্রাণ বিলি করছে সরকার
বন্যা দুর্গত স্থানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেরল সরকার। এখনও পর্যন্ত ২২,৪৫০৬ জনকে উদ্ধার করে ১,২৪৩টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাধিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন পিনারাই বিজয়ন। ১৪ টি বন্যা বিধ্বস্ত জেলার মধ্যে মালাপ্পুরমের অবস্থা সবচেয়ে সংকটজনক। এখানেই শুধুমাত্র ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরেই কোঝিকোড়ে এবং ওয়ানাড়। কোঝিকোড়েতে ১৭ জন আর ওয়ানাড়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেরলেই পরেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য কর্নাটক। ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যে। প্রায় ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
ভাসছে কর্ণাটকও
১,২২৪টি ত্রাণ শিবিরে ৩,৯৩,৯৫৬ জন ক্ষতিগ্রস্তকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কর্নাটকের উপকূলবর্তী জেলা চিকমাগালুর, হাসান, কোডাগু, সিমোগ্গা সহ দক্ষিণ কর্ণাটকের প্রত্যন্ত এলাকায় অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজ শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ৩৫৬ জনকে এয়ারলিফট করে সরিয়ে এনেছে বায়ুসেনা। কর্নাটকে বেড়াতে আসা ১৮ জন বিদেশি পর্যটককে উদ্ধার করেছে বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টার।
পিছিয়ে নেই অসমও
কর্নাটকের পরেই ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য অসম। সেখানে মৃত্যের সংখ্যা ৭১। রাজ্যের প্রায় ১৯টি জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ২৪ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসমে। তবে গত কয়েকদিনে বৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে কোনও এলাকা প্লাবিত হয়নি।
মহারাষ্ট্রেও বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি
মহারাষ্ট্রে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৪৮-এ পৌঁছে গিয়েছে। তিনজন এখনও নিখোঁজ। মহারাষ্ট্রের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। পুণে, কোলাপুর, সাতারা, সোলাপুর জেলার ৫৯৬টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ৪.৭৪ লাখ বাসিন্দাকে। সমুদ্র উপকূলবর্তী ৫৮৪টি গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ কেন্দ্রের কাছে ৬৮০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
গুজরাতেও মৃত একশো ছুঁইছুঁই
এদিকে গুজরাতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৯৮-এ পৌঁছে গিয়েছে। আগামী দুদিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উত্তরেও ভারী বৃষ্টিপাত
ওড়িশাতে বন্যায় মারা গিয়েছেন ৮জন। উত্তরাখণ্ডে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হিমাচল প্রেদেশে ভারী বৃষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।